রফিক উদ্দিন বাবুল, উখিয়া »
উখিয়া টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে স্বেচ্ছায় যেতে রাজি এমন পরিবারগুলোর নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে স্থানান্তর প্রক্রিয়ার কাজ শুরু হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় উখিয়া টেকনাফ থেকে ৪০ জন রোহিঙ্গার একটি প্রতিনিধি দল শনিবার সকালে কুতুপালং ট্রানজিট পয়েন্ট থেকে ভাসানচর গমন করে। প্রতিনিধি দলটি মঙ্গলবারে ক্যাম্পে ফিরে আসার কথা রয়েছে।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের ধারাবাহিকতায় নির্যাতিত রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয় উখিয়া টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা। তবে এসব রোহিঙ্গার সংখ্যা আরো বেশি- এমন অভিমত স্থানীয় অভিজ্ঞজনদের।
সরকার ও বিভিন্ন দাতার সংস্থা এসব রোহিঙ্গার ত্রাণসামগ্রী, স্যানিটেশন, পয়নিষ্কাশন, ওষুধ সামগ্রীসহ যাবতীয় খাদ্য ও নিত্যপণ্য সরবরাহ করে আসলেও নির্দিষ্ট একটি স্থানে বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দীর্ঘ সময় বসবাস করার কারণে স্থানীয়দের সাথে মতবিরোধ সৃষ্টি হচ্ছে।
ইতিমধ্যেই রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের মধ্যে বিভিন্ন ক্যাম্পে বেশ কয়েকদফা সংঘর্ষ মারামারি ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এতে খোদ প্রশাসন বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে দাবি করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দের অভিমত, এসব রোহিঙ্গা ভাসানচরে না নিয়ে প্রত্যাবাসনের আওতায় আনলে দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গল হতো।
তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়দের জিম্মি অবস্থায় জীবন যাপন করতে হচ্ছে। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে রোহিঙ্গাদের আপাতত ভাসানচরে স্থানান্তর করা সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানানো হয়েছে।
রোহিঙ্গারা ভাসানচরে যেতে সম্মত কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে কুতুপালং ২-ই ব্লকের মাঝি মোহাম্মদ আমিন বলেন, ক্যাম্পের গিজগিজে বিপন্ন জীবন যাপনের চাইতে খোলামেলা বসবাসের জন্য ভাসানচরে যাওয়াটাই অনেক ভাল হবে। তিনি আরো বলেন, এক জায়গায় বেশি দিন থাকার কারণে স্থানীয়দের সাথে তাদের বিরোধ সৃষ্টি হচ্ছে। অযথা অহেতুক ঘটনা করার চেয়ে নিরাপদ বসবাস শ্রেয় বলে দাবি করে ওই রোহিঙ্গা নেতা বলেন, যেসব রোহিঙ্গা ভাসানচর দেখতে গেছেন তাদের পরামর্শের উপর নির্ভর করছে- রোহিঙ্গারা ভাসানচরে যাবে কি না?
এ প্রসঙ্গে কুতুপালং রেজিস্ট্রার্ড ক্যাম্পের চেয়ারম্যান হাফেজ জালাল আহমদ বলেন, উখিয়ার কুতুপালংয়ে বসবাস করছে প্রায় তিন লাখের মতো রোহিঙ্গা। ঠাসাঠাসি করে বসবাস করার কারণে রোহিঙ্গাদের রোগব্যাধি বাড়ছে বৈ কমছে না। শীতকাল যেমন তেমন, গরমকাল আসলে রোহিঙ্গাদের ত্রাহি অবস্থার সৃষ্টি হয়। এমন পরিবেশে থাকার চাইতে ভাসানচরই নিরাপদ আবাসন বলে তিনি দাবি করেন।
কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মাহবুব আলম তালুকদার সাংবাদিকদের জানান, ভাসানচরে যাওয়ার সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে প্রতিনিধি দলের যাত্রা শুরু হয়েছে। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা সরেজমিন ভাসানচর আবাসন প্রকল্প পরিদর্শন করবেন। সেখানকার বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে জানবেন। প্রতিনিধি দলের কাছে ভাসানচরের পরিস্থিতি জেনে রোহিঙ্গারা যেতে আগ্রহী হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, ভাসানচরে কি ধরনের সুযোগ সুবিধা গড়ে তোলা হয়েছে তা নিজেদের চোখে দেখবেন রোহিঙ্গা নেতারা।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানান, ভাসানচর সম্পর্কে রোহিঙ্গাদের মাঝে ধারণা দিতে এ ‘গো অ্যান্ড সী’ ভিজিট। কক্সবাজারের ৩৪টি ক্যাম্পে থাকা ১১ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে প্রায় ১ লাখ রোহিঙ্গাকে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে উঠা ভাসানচর দ্বীপে অস্থায়ীভাবে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়ে সরকার প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে আবাসন প্রকল্প নির্মাণ করেছে। জোয়ার ও জ¦লোচ্ছাস থেকে ৪০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা রক্ষা করতে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এবং ১ লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। নির্মিত হয়েছে সাইক্লোন সেল্টার, শিক্ষা ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা অবকাঠামো। এর আগে মালয়েশিয়া যেতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা ৩ শতাধিক রোহিঙ্গাদের বঙ্গোপসাগর থেকে উদ্ধার করে ভাসানচরে আশ্রয় দিয়েছে সরকার।


















































