সুপ্রভাত ডেস্ক :
নেপালের নতুন রাজনৈতিক মানচিত্র এবং নতুন জাতীয় প্রতীক নির্ধারণে দেশের সংবিধান সংশোধনে সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন দিয়েছে নেপালের পার্লামেন্ট।
নতুন এই মানচিত্র ও প্রতীকে এখন আনুষ্ঠানিকভাবে লিপুলেখ, কালাপানি এবং লিম্পিয়াধাউরাকে নেপালের ভূখণ্ড হিসাবে প্রদর্শিত হবে।
১৮১৬ সালের সুগাউলি চুক্তি অনুযায়ী নেপাল এই দাবি করছে, যদিও ভারত সেই দাবি নাকচ করে দিয়ে আসছে।
মে মাসের মাঝামাঝিতে বিতর্কিত ভূখণ্ড কালাপানি আর লিপুলেখকে নিজেদের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে নেপালের সরকার।
তখন নেপালের মন্ত্রিসভার একটি বৈঠকের পর সরকারের মুখপাত্র ও অর্থমন্ত্রী ইউভরাজ খাটিওয়াদা জানিয়েছেন, নতুন এই মানচিত্র স্কুল-কলেজের বইপত্রে, সরকারি প্রতীকে এবং অফিস-আদালতের সব কাগজপত্রে এখন থেকেই ব্যবহার করা হবে।
মঙ্গলবার রাতে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব পাস হওয়ার পর সদস্যরা রীতি অনুযায়ী দীর্ঘক্ষণ ধরে টেবিল চাপড়ে উল্লাস প্রকাশ করেন। এখন প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী বান্দারি অনুমোদন দেয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে সংবিধান সংশোধন কার্যকর হবে।
নেপালের মানচিত্র এবং প্রতীক সংশোধন নিয়ে সংসদে বিতর্ক চলার সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদীপ গাওয়ালি দিল্লির অসহযোগিতা নিয়ে উদ্বেগ এবং হতাশা প্রকাশ করেন যে, নেপাল ওই ভূখণ্ডের দাবি নিয়ে কূটনীতিক আলোচনার প্রস্তাব দিলেও ভারত তাতে সাড়া দেয়নি।
তিনি বলেছেন, ”আমরা খানিকটা আশাহত হয়েছি, কারণ সীমান্ত বিরোধ নিয়ে আলোচনার প্রস্তাবে আমরা কোন সাড়া পাইনি। ভারত ও চীন যদি তাদের বিরোধ মেটাতে পারে, তাহলে নেপাল ও ভারত কেন সেটা করতে পারবে ন। আমি বিশ্বাস করি, কাঙ্ক্ষিত আলোচনাটি খুব তাড়াতাড়ি শুরু করা যাবে।”
করোনাভাইরাস সংকট মেটার পর বিরোধপূর্ণ ভূখণ্ড নিয়ে আলোচনা হবে বলে দিল্লি কাঠমান্ডুকে জানিয়েছে বলে জানা গেছে।
নেপালের স্থানীয় সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, পরস্পরের আস্থা অর্জনের জন্য পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন করার জন্য কাঠমান্ডু দিল্লিকে অনুরোধ করেছে। তবে এই বিষয়ে দিল্লির অবস্থান এখনো পরিষ্কার নয়।
বিবিসি’র নেপালি সার্ভিস জানাচ্ছে, ভারতের দিক থেকে নেয়া সাম্প্রতিক তিনটি পদক্ষেপ নেপাল সরকারের এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের পেছনে ভূমিকা রেখেছে।
গত বছর ভারত নতুন একটি রাজনৈতিক মানচিত্র প্রকাশ করে যেখানে এই বিতর্কিত ভূমি দু’টি তাদের অংশে অন্তর্ভুক্ত হিসেবে দেখানো হয়।
গত ৮ই মার্চ ভারতীয় রাজ্য উত্তরাখণ্ডের পিথাউরাগড়-লিপুলেখের মধ্যে একটি লিংক রোডের উদ্বোধন করেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং।
পরবর্তীতে ভারতের চিফ অব আর্মি স্টাফ মনোজ নারাভানে মন্তব্য করেছিলেন যে, ওই লিংক রোডের ব্যাপারে নেপাল সরকারের আপত্তি এসেছে ‘অন্য কারো নির্দেশে’।
নেপাল ও ভারতের মধ্যে ১৬ হাজার কিলোমিটারের বেশি খোলা সীমান্ত রয়েছে। তার মধ্যে বেশ কয়েকটি জায়গা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিরোধ রয়েছে।
বিরোধের কেন্দ্রে থাকা ভূখণ্ডগুলোর মধ্যে কালাপানি, লিপুলেখ এবং সুস্তা অন্যতম।
বেশ অনেকদিন ধরে এসব ইস্যুতে আলোচনা করে যাচ্ছে নেপাল এবং ভারত। প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে আলোচনায় দেশ দুটো সম্মত হয়েছে যে সীমান্তের এসব সমস্যা সচিবদের বৈঠকে সমাধান করা হবে – যদিও সে রকম কোন বৈঠক এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়নি।
বর্তমান বিতর্ক হচ্ছে কালাপানি, লিপুলেখ এবং লিম্পিয়াধাউরা নিয়ে। নেপালের উত্তর-পশ্চিম অংশে এগুলো অবস্থিত – যার দক্ষিণে ভারতের কুমায়ুন এবং উত্তরে চীনের তিব্বত।
এই ভূখণ্ডটি ভারত, নেপাল ও চীন – তিন দেশের একটি সংযোগস্থল, যাকে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়।