বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় বাংলাদেশ সফল: অনিন্দ্য ব্যানার্জী
‘উন্নয়নের প্রধান পূর্বশর্ত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা নিশ্চিত করেছেন বলেই বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।’
গতকাল বুধবার সকালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের টাইগারপাসস্থ অস্থায়ী নগর ভবনে চসিক মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরীর সাথে তার অফিস কক্ষে সৌজন্য সাক্ষাতকালে বাংলাদেশস্থ ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জী একথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, ১৯৭১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরাগান্ধী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রত্যক্ষ সমর্থন ও সবধরনের সহযোগিতা করায় ভারতের অনেকেই এবং বিদেশি কোন কোন রাষ্ট্র সমালোচনা করেছিল।
তিনি ওষুধ শিল্প, তৈরি পোশাক রপ্তানি শিল্প ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প খাতে বাংলাদেশ বেশ ভাল অবস্থানে আছে বলে মন্তব্য করে বলেন, ক্রম বিকাশমান এই খাতগুলো বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধিতে গতিশীল এনেছে। পর্যটন শিল্প বিকাশে বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটন শিল্প দৃশ্যমান। এই খাতে ধারাবাহিক উন্নয়ন দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে মজবুত ও সমৃদ্ধ করবে।
তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের বহুমুখী ব্যবহারের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে রিজিওনাল কোনেক্টিভিটি সংযুক্ত হলে বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ই উপকৃত হবে। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ, পতেঙ্গায় উপকূলবর্তী বে-টার্মিনাল এবং মহেশখালীতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক কানেক্টিভিটির সাথে সংযুক্ত হবে এবং বৈশ্বিক আর্থিক সমৃদ্ধির অংশীদার হবে। তিনি মেয়রকে অবহিত করেন যে, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে মার্চের শেষের দিকে ভারতের একটি চৌকষ সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দল আসবে। এই দলটির সাংস্কৃতিক পরিবেশনা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পরিচালিত থিয়েটার ইনস্টিটিউট হল চট্টগ্রামে করার পরিকল্পনা আছে।
তিনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পরিচালিত টিআইসি স্থাপনার প্রশংসা করে বলেন, ছোট্ট পরিসরের হলেও এই নাট্যভূমি ও সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রটি অত্যাধুনিক ও নান্দনিক স্থাপনা। আমি সেখানে গিয়ে মুগ্ধ হয়েছি। এর আধুনিকায়ন ও সরঞ্জাম সংযোজনে ভারত দু’কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে। পর্যাপ্ত জায়গা ও পরিসর থাকলে আরো বড় অংকের অনুদান দেয়ার আগ্রহ ছিলো।
তিনি কোভিড-১৯ মোকাবেলায় বাংলাদেশের সাফল্যের প্রশংসা করে বলেন, অনেকেই আশংকা করেছিলেন কোভিড-১৯ সংক্রমণের ছোবলে বাংলাদেশের অবস্থা ভয়াবহ হবে। বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। বিশ্বের অনেক উন্নত ও ক্ষমতাধর দেশের চেয়ে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বাংলাদেশে তুলনামূলকভাবে অনেক কম। বাংলদেশ দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে এবং এটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে।
মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা ও অবদানের জন্য সে দেশের সরকার ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই এবং অশেষ ঋণ স্বীকার করি। একাত্তরে ভারত আমাদের দেশের এক কোটি মানুষকে আশ্রয় দিয়েছিলে। তাদের সেনাবাহিনীর অনেক কর্মকর্তা ও জওয়ান প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে। এই ঋণ কোন দিন শোধ হবে না।
তিনি আরো বলেন, যারা একসময় বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুঁড়ি বলে মন্দবাক্য উচ্চারণ করেছিল তারা এখন বাংলাদেশের নজিরবিহীন উন্নতি দেখে লজ্জা পায় এবং তারা স্বীকার করে যে, বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল।
তিনি ভারতীয় সহকারী হাই-কমিশনারের চট্টগ্রাম বন্দরের বহমুখী ব্যবহারের মতামতের সাথে সহমত প্রকাশ করে বলেন, দৃঢ়ভাবে মনে করি চট্টগ্রাম বন্দরের বহুমুখী ব্যবহারে রিজিওনাল ও ইন্টারন্যাশনাল কানেক্িটভিটির সংযুক্তিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক, ভারপ্রাপ্ত সচিব ও প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি