ভাণ্ডালজুড়ি প্রকল্প : ওয়াসা কি সময়ের চেয়ে এগিয়ে?

২০১৯ সালে চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে রাঙ্গুনিয়া ও বোয়ালখালী উপজেলার মধ্যবর্তী জ্যৈষ্ঠপুরা এলাকায় ভাণ্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার প্রকল্পের কাজ শুরু করে। এ বছরের অক্টোবর–নভেম্বর মাসে এই প্রকল্প উৎপাদনে আসার কথা।

এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ে আনোয়ারা ও পশ্চিম পটিয়া এলাকায় গড়ে ওঠা কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইকোনমিক জোন, সিইউএফএল, কাফকো ও পটিয়া ইন্দ্রপুলের লবণ কারখানাসহ অন্যান্য শিল্পাঞ্চলগুলোতে সুপেয় পানি সরবরাহ করা। ভান্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্প থেকে ছোট–বড় মোট ১৩টি বাণিজ্যিক সংযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল চট্টগ্রাম ওয়াসার। এই শিল্পাঞ্চলগুলোতে প্রতিদিন ৪ কোটি লিটার পানি সরবরাহের টার্গেট রয়েছে ওয়াসার। আর ২ কোটি লিটার দেওয়ার কথা বোয়ালখালী–পটিয়ার আবাসিক গ্রাহকদের মাঝে। এখন পর্যন্ত পটিয়ায় ৫ থেকে ৬শ’ এবং বোয়ালখালীতে ৬০ থেকে ৭০টির মত আবাসিক গ্রাহকের সংযোগের কাজ শেষ হয়েছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।

শেষের দিকে এসে এখন ভাণ্ডালজুড়ি প্রকল্পের ৬ কোটি লিটার পানির সরবরাহ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। জানা গেছে, প্রকল্পের শুরুতেই চট্টগ্রাম ওয়াসা দেশি–বিদেশি এসব শিল্পজোন ও কারখানাগুলোকে ভাণ্ডালজুড়ি প্রকল্প থেকে সুপেয় পানি নেয়ার জন্য চিঠি দিলে সবকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখিয়েছিল। কিন্তু এখন প্রকল্পের কাজ শেষে (প্রকল্পের ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ) চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষ এসব শিল্পজোন ও কারখানা কর্তৃপক্ষকে পানির সংযোগ নেওয়ার জন্য চিঠি ইস্যু করলে এখনো পর্যন্ত কাফকো এবং ড্যাপ (ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট কারখানা) ছাড়া আর কোনো শিল্পজোন এবং কারখানা ওয়াসার চিঠির উত্তর দেয়নি বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম ওয়াসার ভান্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, প্রকল্পের কাজ প্রায় ৯৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। আগামী অক্টোবর–নভেম্বর মাসে এই প্রকল্পের পানি উৎপাদনে আসবে। এই প্রকল্প থেকে প্রতিদিন ৬ কোটি লিটার পানি উৎপাদন হবে।
বিষয়টি খুবই কৌতুহলদ্দীপক। দেশের সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো সবসময় জনগণের চাহিদার তুলনায় বরাবরই পিছিয়ে থাকে। ভাণ্ডালজুড়ির ক্ষেত্রেই শুধু ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। চাহিদার আগেই সেবা তৈরি হয়ে আছে। বিষয়টি প্রশংসাযোগ্য। আমাদের দেশে শিল্পকারখানা বলুন আর আবাসিকখাত বলুন সবক্ষেত্রেই সেবা সংস্থার পূর্ণ সহযোগিতা পাওয়া খুব দুষ্কর। সে ক্ষেত্রে ওয়াসাকে ধন্যবাদ দিতে হয়। তবে সে সঙ্গে এই প্রশ্নও রাখা জরুরি যে, ওয়াসা অনেক বড় বড় কথা বললেও এখনো নগরের চাহিদা পূরণ করতে পারেনি। অনেকক্ষেত্রে পানি পর্যাপ্ত থাকলেও সরবরাহ লাইনের দুর্বলতার কারণে অনেক এলাকায় পানি পাওয়া যায় না। এদিকে নজর দিতে হবে ওয়াসাকে। ভাবতে হবে কোন কাজটিকে প্রাধান্য দিতে হবে। প্রকল্পের পর প্রকল্প হাতে নেওয়ার আগে ভাবতে হবে প্রয়োজন কোথায় ও কতটুকু।