নিজস্ব প্রতিবেদক »
ভরা মৌসুমে গত দেড় মাস ধরে চড়া দামের মধ্যে স্থিতিতে থাকা সবজির দাম আরও বাড়লো। নির্বাচনের পর আরেক দফা বাড়লো সবজির দাম। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মাছ, মাংস ও আদা-রসুনের দাম।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর আগ্রাবাদ কর্ণফুলী মার্কেট ও চকবাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা। শীতকালীন সবজিতে বাজারে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে শিম, শিমবীজ ও আলু। আর ৫০ থেকে ৬০ টাকা নিচে কোন সবজি বাজারে মিলছে না। ভরা মৌসুমে চট্টগ্রামের চাষের শিম বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৬০ থেকে ৯০ টাকা, আর শিম বীজ কেজিতে মানভেদে ২৩০ থেকে ২৮০ টাকা । বাঁধাকপি ও ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। লাউ প্রতি কেজি ৫০ টাকা।
খুচরা সবজি ব্যবসায়ীদের দাবি, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর সবজির উৎপাদন কম হয়েছে। বর্ষার পানির কারণে দুবার ফলন নষ্ট হয়েছে। ফলে চাহিদা অনুযায়ী সবজির যোগান অনেকটা কম। এ কারণে আড়তে সবজির দাম বেড়েছে। এদিকে আড়তদারদের দাবি, খুচরা ব্যবসায়ীদের কারসাজি।
আগ্রাবাদ কর্ণফুলী বাজারের সবজি বিক্রেতা নুরুল ইসলাম বলেন, যদি বিভিন্ন পণ্যের সবকিছুর দামই বেড়ে যায়, কৃষকদেরও চাষের উপকরণগুলো ওই বাড়তি দামে কিনতে হয়। তাহলে কৃষকরা কেন তাদের সবজি কম দামে বিক্রি করবে? এদিকে কৃষকদের থেকে আড়তদারদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে, সেজন্য মোকামে সবজির দাম বেড়েছে।
প্রকৃতপক্ষে বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কয়েকগুণ বেড়েছে। সরবরাহ ও যোগান অনুযায়ী এখন সবজির দাম এসময় কমার কথা। কিন্তু বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। এ অবস্থায় সবজির দামে অস্বস্তি বিরাজ করছে ক্রেতাদের মাঝে।
আগ্রাবাদের কর্ণফুলী বাজারে আসা ক্রেতা মনিরুল ইসলাম বলেন, একটি ব্যাংকের এটিএম বুথে গার্ড হিসেবে চাকরি করি। বেতন খুবই অল্প। মাছ, মাংস কেনার মতো পরিস্থিতি এখন নেই। সবজি কিনতে এসেই বাজারের টাকা শেষ। সব পণ্যের দাম বাড়তি। ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি প্রশাসন। ব্যবসায়ীরা এখন তাদের কথা মানে না। পূর্র্বে চড়া আলুর দাম নির্বাচনের আগে কিছুটা কমে ৬০ টাকায়ও পাওয়া যেত। কিন্তু এখন ৭০ টাকার নিচে আলু নেই। আর লাল (পাকরি) আলু বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা।
জানতে চাইলে রেয়াজউদ্দিন বাজার কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শিবলী ফারুক বলেন, সবজির বাজার দিন দিন কমছে কিন্তু খুচরা বাজারে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে। কিন্তু খুচরা বাজারে ব্যবসায়ীরা নানা ইস্যু দেখিয়ে দ্বিগুণ দামে ক্রেতা পকেট কাটছে। অথচ পাইকারি বাজারে এখন আলু ৪৫ টাকা, শিম ৩৫ টাকা, ফুলকপি ৪০ টাকা ও বাঁধাকপি ১২ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বলা যায় খুচরা ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের হয়রানি করছে। এসব বিষয়ে প্রশাসনের তদারকি বাড়াতে হবে।
অন্যদিকে, মাংসের বাজার ঘুরে দেখা যায়, সবজির মতো চড়া দরে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগি। সপ্তাহের মাঝামাঝি কয়েকদিন কমলেও আবারো ডাবল সেঞ্চুরির পথে এ মাংসের বাজার। বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা। আর সোনালি মুরগি ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজিতে। আর খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা।
মুরগি বিক্রেতা কালাম সওদাগর বলেন, নির্বাচনের কারণে কয়েকদিন পাইকাররা মুরগি সরবরাহ করেনি। ফলে মধ্যস্বত্ব কারবারিরা দাম বাড়িয়েছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে আরো বেড়েছে রসুন ও আদার দাম। রসুন বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা এবং আদা ২২০ থেকে ২৪০ টাকা।