ভবিষ্যতের বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিতে তরুণদের আহ্বান

সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার নিন্দা জানালেন প্রধান উপদেষ্টা

সুপ্রভাত ডেস্ক »

বাংলাদেশের তরুণদের ভবিষ্যতের দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তাদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে এবং দেশের অগ্রগতি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

শনিবার বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এক সেশনে এ আহ্বান জানান অধ্যাপক ইউনূস। এ সময় জাতি গঠনে তরুণদের ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বের গুরুত্বের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘এই রংপুর, এই বাংলাদেশ এখন আপনাদের হাতে। আপনি যেখানে নিয়ে যেতে চান, সেখানে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখেন। এই শক্তি আপনাদের ভেতরে রয়েছে- তা আর গবেষণার বিষয় নয়।’

ইউনূস দেশের জন্য জীবন উৎসর্গকারী আবু সাঈদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় তাকে ‘মহাকাব্যিক চরিত্র’ হিসেবেও বর্ণনা করেন।

তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেন, ভবিষ্যতে, ‘তাকে নিয়ে অনেক কবিতা, সাহিত্য লেখা হবে।’

বাংলাদেশের ছাত্র ও তরুণরা সারা বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক ইউনূস। তিনি তাদের সাম্প্রতিক অর্জনকে দেশের ‘দ্বিতীয় বিজয়’ হিসেবে উল্লেখ করেন। এই বিজয় যাতে হাতছাড়া না হয় তা নিশ্চিত করার আহ্বানও জানান।

তিনি বলেন, ‘একমাত্র আপনারাই এটা করতে পারেন। আমরা প্রবীণ প্রজন্ম এটা পারব না।’

তিনি প্রবীণ প্রজন্মকে সরে এসে যুবকদের জন্য পথ তৈরি করে দেওয়ার আহ্বান জানান।

যেকোনো কাজ সম্পাদনের জন্য দূরদর্শিতার প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, ‘স্বপ্ন না থাকলে বিশৃঙ্খলা হবেই। কিন্তু আপনি যদি স্বপ্ন দেখেন এবং এর পেছনে ছুটেন, তাহলে একসময় যা অসম্ভব বলে মনে হতো তা সম্ভব হয়ে যাবে। অসম্ভবকে সম্ভব করার ক্ষমতা আপনাদের মধ্যেই রয়েছে।’

তরুণদের কখনও পিছপা না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জাতিকে যেখানে নিয়ে যাওয়া দরকার সেই পথ দেখাতে প্রবীণ প্রজন্ম ব্যর্থ হয়েছে।

প্রবীণদের ব্যর্থতা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমরা ব্যর্থ হয়েছি। যেখানে আপনাদের নিয়ে যাওয়ার কথা, আমরা আপনাদের সেখানে নিয়ে যেতে পারিনি।’

ইউনূস শিক্ষার্থীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, যারা তাদের অগ্রগতি ব্যাহত করতে চায়, তাদের প্রচেষ্টা যেন সফল হতে না দেন শিক্ষার্থীরা। ‘আপনাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করার জন্য অনেকে দাঁড়িয়ে আছেন। এবার আর ব্যর্থ হতে দেবেন না।’

জাতীয় সংস্কারের প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন প্রধান উপদেষ্টা। দেশকে দুর্দশা থেকে মুক্ত করার জন্য যা কিছু করা দরকার তা করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা সব পরিষ্কার করে দেব। সবকিছু পরিষ্কার না করা পর্যন্ত আমাদের কোনো স্বস্তি নেই।’

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রতিক হামলার বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এসব কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে একে ‘জঘন্য’ বলে অভিহিত করেন। তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তারা কি এ দেশের মানুষ নয়? আপনারা দেশকে বাঁচাতে পেরেছেন; কিছু পরিবারকে বাঁচাতে পারছেন না?’

তিনি হিন্দু, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ পরিবারকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান।

জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের বলতে হবে- কেউ তাদের ক্ষতি করতে পারবে না। তারা আমার ভাই; আমরা একসঙ্গে লড়াই করেছি এবং আমরা একসঙ্গেই থাকব।’

অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশকে একটি সুন্দর পরিবারের সঙ্গে তুলনা করেন। এর চেয়ে সুন্দর পরিবার আর হয় না।

এই ঐক্য রক্ষায় তরুণদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে অনেক দেশ আছে, কিন্তু এত সুন্দর পরিবার আর নেই।’