গুলজার খালের পাড়ে হেলে পড়া ভবন
নিজস্ব প্রতিবেদক »
খালপাড়ে গড়ে ওঠা ভবন দুটি অবৈধ। ২০১৯ সালে নিজ উদ্যোগে ভেঙে ফেলার জন্য জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের উচ্ছেদ অভিযানের সময় মুচলেকাও দিয়েছিল দুই ভবন মালিক। কিন্তু উচ্ছেদ না করায় খালে স্কেভেটর দিয়ে কাজ করার সময় নিচ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় ভবন দুটি হেলে পড়ে। আর এতে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায় ভবন দু’টি।
নগরের স্ট্র্যান্ড রোডের মাঝিরঘাটে গুলজার খালের পাড়ে সোমবার রাতে দুটি ভবন হেলে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন ভবন দুটি থেকে বসবাসকারীদের সরিয়ে নেয়।
তিন তলা ও দুতলা ভবন দুটি হেলে পড়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ শাহীনুল ইসলাম খান বলেন, ‘বিধি অনুযায়ী খাল থেকে ১৫ ফুট দূরে ভবন নির্মাণ করতে হয়। এই ভবন দু’টির নিচে মূলত কোনো মাটি নেই। পলিথিন ও খালের আবর্জনার উপর ভবন দু’টি গড়ে তোলা হয়েছে এবং সিডিএ’র কোনো অনুমোদনও নেই।’
তিনি আরো বলেন, খালের পাড়ে অবৈধভাবে ভবন গড়ে তোলায় ২০১৯ সালে সিডিএ’র উচ্ছেদ অভিযানের সময় নিজ উদ্যোগে ভেঙে নেওয়া হবে বলে ভবন মালিকদ্বয় মুচলেকাও দিয়েছিলেন। কিন্তু তা না ভাঙায় এখন খালের কাজ করার সময় তা হেলে পড়ে।
এখন এই ভবন দুটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত কি হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবৈধ ভবন ভাঙার জন্য নোটিশ দিবো ভবন মালিককে। একইসাথে তা হেলে যাওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। আর ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙার কাজ সিটি করপোরেশনের। তাই সিটি করপোরেশনকেও চিঠি দিয়ে অবহিত করবো।
ভবনটি খালের জায়গায় গড়ে উঠেছে কিনা জানতে চাইলে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মো. শাহ্ আলী বলেন, ‘ভবন মালিকদের প্রতি মানবিক আচরণ করেছি। ২০১৯ সালে যখন খাল পাড়ে সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু করি তখন তাদের সময় দিয়েছিলাম। আর এই ভবনের নিচে পাঁচ ফুট জায়গা খালের রয়েছে। অর্থাৎ ভবনটি খালের জায়গাও দখল করেছে।’
এদিকে গতকাল দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, গুলজার খাল পাড়ে তিনটি স্থাপনা হেলে পড়েছে। এতে স্থাপনাগুলোর সামনের অংশে মাটি ফেটে গেছে। খাল খনন কাজের কারণে স্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। এতে ভবনগুলোর পেছনের অংশে (খাল পাড়ে) ভবনের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। শুধু তাই নয় স্থাপনাগুলোর ফ্লোরও ফেটে গেছে। খালের সাথে লাগোয়া একটি দুই তলা ভবন যার সামনেই শ্রী শ্রী জগন্নাথ ও বিষ্ণু মন্দির। মূলত মন্দিরের পেছনের অংশের দ্বিতল বিশিষ্ট ভবনটি এবং বা’পাশে লাগোয়া তিন তলা ভবনটি হেলে পড়ার কারণেই মন্দিরটি ঝুঁকিতে পড়েছে। তিন তলা ভবনটির পাশে রয়েছে টিন শেডের তিনটি ঘর। ঘরগুলোর মেঝে ফেটে গেছে। ঝুঁকে পড়েছে খালের দিকে।
সিডিএ’র জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কারণে ভবন হেলে গেছে বলে দাবি তিন তলা ভবনের মালিকদের একজনের স্ত্রী তৃষ্ণা দাশ। খালের সঙ্গে লাগোয়া দু’তলা ভবনে বসবাস করেন মনোরঞ্জন দাশের পরিবার। পাশের টিনশেড ঘরে থাকেন বাবুল কান্তি দাশ ও তার দুই ভাইয়ের পরিবার। মনোরঞ্জন দাশ বলেন, ‘সিডিএ’র জলাবদ্ধতা প্রকল্পের আওতায় গুলজার খাল খননের সময় ভবনের নিচ থেকে মাটি টান দেওয়ার কারণে বিল্ডিং ধসে পড়েছে। এর ক্ষতিপূরণ চাই।’
এদিকে ধসে পড়া ভবন মালিক ও এলাকাবাসী সড়ক অবরোধ করে ক্ষতিপূরণ দাবি করছে। এতে ছোট ছোট শিশুরাও প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়েছে। এসময় দেখা গেছে, দুই সত্তোরোর্ধ্ব নারীর হাতে প্ল্যাকার্ড। লিখা রয়েছে ‘আমার শেষ আশ্রয় কোথায়?’ অন্যটিতে ‘জীবন বাঁচার উপায় চাই’। তারা সড়কে হুইল চেয়ারে বসে জীবন বাঁচানোর উপায় খুঁজছে। এসময় দুই পাশ থেকে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বারিক বিল্ডিং মোড় পর্যন্ত দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
উল্লেখ্য, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্পের আওতায় ৩৬টি খাল খনন ও সম্প্রসারণের কাজ চলছে। গুলজার খালটিও সম্প্রসারণের কাজ চলছে। এই খালের উভয় পাশে চলাচলের রাস্তা হবে। এছাড়া খালের মুখে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পের আওতায় একটি স্লুইস গেটও বসবে।