রুশো মাহমুদ <<<
সুপ্রভাতের প্রথম সম্পাদক, আমারও প্রথম। সৈয়দ আবুল মকসুদ। সাদা বেশভূষার এক অসাধারণ মানুষ। কত শত স্মৃতি এই মানুষটির সাথে। সম্পাদক হিসেবে পেয়েছি ২০০৪ সালের আগস্ট থেকে সম্ভবত ২০০৬ সালের জুলাই পর্যন্ত। পুরো দু’বছর। সময়ের বিবেচনায় খুব একটা বেশি দীর্ঘ না। কোন এক মধুর রসায়নে সম্পর্কের ভিতটা বেশ মজবুত করে গিয়েছিলেন। তিনি ঢাকা চলে গেলেন, ফিরে গেলেন পরিবার-পরিজনের কাছে, নিজের চেনা ভুবনে। কিন্তু যোগাযোগটা কখনো বিচ্ছিন্ন হয়নি। মাঝে মাঝেই ফোন করে খবর নিতেন পত্রিকার। উপদেশ দিতেন। ঢাকায় গেলে বাসায় যেতে বলতেন। ঢাকায় আমার যাওয়া হতো কম। গেলেও সকালে যেয়ে বিকেলে চলে আসার তাড়া থাকতো। তারপরও গেছি কয়েকবার। ৩২ নম্বরের কাছে, সুফিয়া কামালের বাড়ি সাঁঝের মায়ার পাশেই তাঁর ফ্ল্যাট।
বিনয়ী মানুষটি সচারচর কম কথা বললেও পছন্দের মানুষ পেলে স্মৃতির ঢালি খুলে বসতেন। কত না খ্যাতিমান মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছেন। ভাসানী, মুজিব, তাজউদ্দিন কত কত নাম! মজলুম জননেতা ভাসানীর ভাবাদর্শের মানুষ ছিলেন তিনি। জীবনের বড় একটা সময় মহাত্মা গান্ধীকে নিয়ে গবেষণাধর্মী কাজ করেছেন। লোকে জানতো গান্ধীবাদী হিসেবে। কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছিল বঙ্গবন্ধু মুজিবের সাথে। সম্ভবত বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার সংবাদকর্মী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয়ে সংযুক্ত ছিলেন। অনেক স্মৃতি অনেক গল্প। স্নেহধন্য হয়ে শুনেছি। তাঁর আপত্য স্নেহ থেকে কখনো বঞ্চিত হইনি।
২০১০ সালে তাঁর প্রকাশিত একটি বই, নাম প্রতীচ্য প্রতিভা। তৃতীয় পাতায় ছাপার হরফে লেখা ‘অনুজপ্রতিম রুশো মাহমুদ স্নেহভাজনীয়া হাসিনা আখতার (পারভীন) – কে’। আমরা দুজনেই আবেগে আপ্লুত হয়েছি। তাঁর ভালবাসায় মুগ্ধ হয়েছি। চট্টগ্রামে যখন ছিলেন আমাদের দুজনের ছোট্ট পরিবারে অনেকটা সময় কাটিয়েছেন। নিজের ভাড়া করা বাসায় না থেকে আমাদের সাথে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। বড় ভাইয়ের মায়া পেয়েছি, ছায়া পেয়েছি। মানুষটিকে হারিয়ে শোকে আচ্ছন্ন হয়ে আছি। বড় ভালো লোক ছিলেন। ওপারেও ভালো থাকুন মকসুদ ভাই।
লেখক: সম্পাদক, দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ