সুপ্রভাত ডেস্ক »
‘ব্যাংকে টাকা নেই’ গুজব ছড়ানো হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বর্তমান বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ দিয়ে পাঁচ মাসের পণ্য আমদানি করা যাবে, ভোগ্যপণ্যের অভাব হবে না বলে সবাইকে আবারও আশ্বস্ত করেছেন। শুক্রবার দুপুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের পঞ্চম জাতীয় সম্মেলনে দেশের চলমান অর্থনৈতিক অবস্থার কথা তুলে ধরতে গিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। খবর বিডিনিউজের।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের এখন যে রিজার্ভ তাতে তিন মাস না, আমরা পাঁচ মাসের আমদানি করতে পারি। সেই পরিমাণ অর্থ আমাদের কাছে আছে। তাছাড়া একটা গুজব ছড়াচ্ছে টাকা ব্যাংকে নাই, টাকা পাবে না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবাই টাকা ব্যাংক থেকে তুলে ঘরে রাখে। ঘরে টাকা রেখে তো চোরকে সুযোগ করে দেওয়া, তাই না? চোরের পোয়াবারো। তারা বেশ ভালোভাবে জানবে ওই বাড়িতে টাকা আছে। যাই করি, এখন সে চোরের হাতে তুলে দেবে- না ব্যাংকে টাকা থাকবে, সে টাকার মালিক যারা তাদের উপর নির্ভর করে।’
ভোগ্যপণ্যের কোনো অসুবিধা হবে না বলে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘ইউক্রেন থেকে, রাশিয়া থেকেও আমরা আমদানি শুরু করেছি। যদিও স্যাংশানের কারণে ডলারে পেমেন্টে অসুবিধায় আমরা বিকল্প ব্যবস্থা কীভাবে করা যায় তার জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
রিজার্ভ নিয়ে সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, ‘কিছুদিন থেকে শুনলাম যে আমাদের দেশের সবাই রিজার্ভ সম্পর্কে এবং অর্থনীতি সম্পর্কে ভীষণভাবে পারদর্শী হয়ে গেছেন। গ্রামে গ্রামে চায়ের দোকানেও রিজার্ভ নিয়ে কথা।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শূন্য রিজার্ভ নিয়ে যাত্রা শুরু করে দেশটাকে গড়ে তুলেছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আর আমাদের রিজার্ভ হ্যাঁ, ১৯৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। রিজার্ভ রেখে গিয়েছিল ২.৫৭ বিলিয়ন ডলার। আমরাই উদ্যোগ নিয়ে সেই রিজার্ভ কিছুটা বাড়াই।’
আওয়ামী লীগ দেশে সবসময় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা চায় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজকে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। আমরা এই তৃতীয়বারের মত এখন সরকারে। অন্তত এইটুকু দাবি করতে পারি এই ১৪ বছরে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে, উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে, আমাদের দেশের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে।
‘যে রিজার্ভ খালেদা জিয়া রেখে গিয়েছিল ২০০৮ এর নির্বাচনের পর ২০০৯ এ যখন সরকার গঠন করি তখন দেখি পাঁচ বিলিয়নের কিছু উপরে রিজার্ভ। সেই রিজার্ভ আমরা বৃদ্ধি করি। তবে করোনার সময় যেহেতু মানুষের বিদেশে যাওয়া ছিল না, কোনো হু-ি ব্যবসা হয়নি বা হু-ি ব্যবসা বন্ধ ছিল, রেমিটেন্স সরাসরি সরকারিভাবে এসেছে, বিদেশে যাওয়ার খরচ ছিল না, সম্পূর্ণ আমদানি রপ্তানি বন্ধ, যার ফলে আমাদের রিজার্ভ প্রায় ৪৮ বিলিয়নে উঠে গিয়েছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তবে আমরা যে সমস্ত ঋণ নেই সময়মত সব ঋণ আমরা পরিশোধ করি। একমাত্র বাংলাদেশ কোনদিন ডিফল্টার হয়নি। আমরা যত সমস্যা হোক আমরা ঋণ বিতরণে এবং ঋণ পরিশোধে সবসময় আমরা ধরে রাখি।’
করোনাভাইরাস মহামারীর প্রকোপ কমে এলে দেশের আমদানি-রপ্তানি বেড়েছে, দেশের মানুষের কাজ বেড়েছে উল্লেখ করে বিনামূল্যে টিকা দেওয়া থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার কথাও জানান সরকারপ্রধান।
‘আমরা খুব বেশি নিয়মে যাইনি। যখন যেটা প্রয়োজন হয়েছে সোজা প্লেন পাঠিয়ে কোটি টাকা খরচ করে আমরা কিন্তু নিয়ে এসেছি, মানুষকে ভ্যাকসিন দিয়েছি,’ বলেন তিনি।
দেশের মানুষের কাছে সুরক্ষিত অবস্থায় টিকা পৌঁছে দেওয়া এবং চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্য সেবীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এগুলোর জন্য তো টাকা খরচ হয়েছে। পানির মত টাকা খরচ করেছি।’
রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেওয়া নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে বিভিন্ন পণ্যের দাম ও পরিবহন খরচ বেড়ে গেলেও প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য কিনতে হওয়ায় বাড়তি খরচের কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী।
উৎপাদন বাড়াতে পতিত সব জমি আবাদের আওতার আনার আহ্বান আবার জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের যারা চিকিৎসক বা আমাদের এখানে যারা আছেন তাদেরকেও আহ্বান জানাই জমিজমা তো সবার কিছু না কিছু আছে। সবাই যাতে সেখানে ফসল হয় বা কিছু হয়, তরিতরকারি হয়, শাক সবজি হয় তার ব্যবস্থা নেন। সবাই উৎপাদন করেন।’
দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রচেষ্টা রয়েছে জানানোর পাশাপাশি এখন বিভিন্ন দেশ অর্থনৈতিক মন্দায় আক্রান্ত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সেখানে আমি সবাইকে আহ্বান করেছি যেন কৃচ্ছতা সাধন করে। সবাইকে একটু সাশ্রয়ী হতে হবে। বিদ্যুৎ, পানি বা খাদ্যের কোনো অপচয় যেন না হয় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য আমি অনুরোধ জানাচ্ছি।’
দেশে যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে সেখানে খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পের উপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলেও অনুষ্ঠানে জানান শেখ হাসিনা।
স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন তিনি।
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি এম ইকবাল আর্সলান ও মহাসচিব এম এ আজিজ বক্তব্য রাখেন।