ব্যাংকখাত সংস্কারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে

গত সপ্তাহ ব্যাংক থেকে একসাথে এক লাখ টাকার বেশি তোলা যায়নি। পরের সপ্তাহ অর্থাৎ চলতি সপ্তাহে দু লাখ টাকার বেশি তোলা যাচ্ছে না। ব্যবসা-বাণিজ্যের কারণে যাদের বেশি টাকার প্রয়োজন হয় তারা বেকায়দায় পড়েছেন। গত দেড় দশকে ব্যাংকখাতে চরম অব্যবস্থাপনার কারণে সৃষ্ট সংকট উত্তরণে জরুরি পদক্ষেপ চাইছেন ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও অর্থনীতিবিদরা।

ব্যাংক খাতের সুশাসনের পথে চার ধরনের সমস্যা বিদ্যমান বলে উল্লেখ করেছে সিপিডি। এগুলো হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক, প্রশাসনিক (রেগুলেটরি), আইনগত ও তথ্য সম্পর্কিত। সংস্থাটি বলেছে, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার মধ্যে রয়েছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক যোগাযোগের ভিত্তিতে ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগ এবং ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন। এ ছাড়া ঋণ পরিশোধের খারাপ উদাহরণ থাকা সত্ত্বেও ঋণ পুনঃ তফসিল করা, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে নিয়ম পরিপালনে ব্যর্থতাও রয়েছে।

গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটির (জিএফআই) প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৭-২০১৪ দেশ থেকে ৪৭ থেকে ৬৭ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। এ অর্থ ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) শক্তিশালী করার সুপারিশ করা হয়।

এ ছাড়া ব্যাংকের অনিয়ম বন্ধে তারা আরও বলেছে, মামলা নিষ্পত্তি ত্বরান্বিত করা, দেউলিয়া আইন সংশোধন, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে খেলাপি ঋণের মামলা নিষ্পত্তি, বেসরকারি ব্যাংকের পর্ষদে এক পরিবার থেকে একজনকে তিন বছরের জন্য এবং সারা জীবনের জন্য দুবার পর্ষদ সদস্য হওয়ার সুযোগ রেখে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন, একটি গ্রুপের এক কোম্পানি খেলাপি হলে অন্য কোম্পানিকেও খেলাপি বলে গণ্য করার বিধান পুনরায় চালু, ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের যাবতীয় তথ্য প্রকাশ, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মান অনুযায়ী খেলাপি তালিকা তৈরি করা ।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) সোমবার ঢাকার ধানমন্ডিতে সংস্থাটির কার্যালয়ে ‘ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা আনা, শিগগির কী করতে হবে’ শীর্ষক পর্যালোচনায় এসব কথা বলেছে।
বর্তমানে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের অবস্থা শোচনীয়। ফলে আতঙ্কিত হয়েছেন ব্যাংকগুলোর আমানতকারীরা। এ বিষয়ে
সংস্থাটি বলেছে, ১৫ বছরে ২৪ কেলেঙ্কারির মাধ্যমে যে অর্থ আত্মসাৎ হয়েছে, তার পেছনে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। বন্ধ করতে হবে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে মূলধন জোগান দেওয়া। এমন নীতি করতে হবে, যাতে ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেলেও আমানতকারীরা তাঁদের পাওনা ফেরত পান।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমরাও দাবি জানাব, ব্যাংকখাতে শৃঙ্খলা ফেরানোর কাজটি দ্রুত করে জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার।