ব্যাংকখাতে টেকসই সংস্কারের জন্য কমিশনের পরিকল্পনা সরকারের

ছবি : সংগৃহীত

সুপ্রভাত ডেস্ক »

ব্যাংকখাতে খেলাপি ঋণের ছড়াছড়ি আর সুশাসনের অভাব প্রকট হয়ে পড়ায়- ব্যাংকিং কমিশন গঠনের তাগিদ ছিল বহুদিন ধরে – যা এতকাল উপেক্ষিত হয়েই এসেছে। অবশেষে সেই কাজ হাতে নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। ঘোষণা দিয়েছে, এই কমিশন গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা।
গতকাল রোববার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, নতুন সরকার আর্থিকখাতের সার্বিক পরিস্থিতি এবং দরকারি সংস্কারগুলোর বিষয়ে একটি রূপকল্প তৈরি করবে। অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন হওয়ার ১০০ দিনের মধ্যে তা প্রকাশ করা হবে। গত ৮ আগস্টে অন্তবর্তী সরকার গঠন করা হয়।
এদিন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বৈঠকে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে তারল্য বাড়ানোর উদ্যোগ হিসেবে আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যান্ড ১ শতাংশ হতে বাড়িয়ে ২.৫ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলোর সুফল পেতে সবাইকে একটু ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।
ব্যাংকখাতের সার্বিক চিত্র নির্ণয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন দুর্নীতি, অনিয়ম শনাক্ত এবং এ খাতের টেকসই উন্নয়নের জন্য অনেক বছর ধরেই ব্যাংকিং কমিশন গঠনের কথা বলে আসছিলেন অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। যার প্রেক্ষাপটে বেশ কয়েকবার এটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও – সবই ব্যর্থ হয় রাজনৈতিক অনীহার কারণে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দ্রুত কমিশন গঠন করে- তাদের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে যেতে হবে। তিনি বলেন, ‘তাহলে এখাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে থাকবে, তখন নির্বাচন পরবর্তী সরকার হয়তো সুপারিশ বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে আগ্রহী হবে। ব্যাংকিং কমিশন হতে হবে সম্পূর্ণ স্বাধীন, নিরপেক্ষ। তাদের মেয়াদ ও লক্ষ্য নির্ধারিত থাকতে হবে।’
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, কমিশন হতে হবে অত্যন্ত শক্তিশালী। কমিশনের প্রধান ও অন্যান্য সদস্যের সততা, দক্ষতা ও সাহসিকতা নিয়ে কেউ যাতে প্রশ্ন তুলতে না পারে, সেটি বিবেচনায় রাখতে হবে। কমিশনকে স্টাফ সাপোর্ট ও লজিস্টিকস সাপোর্ট সরকার থেকে নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকতে হবে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংককে। সরকার যদি মনে করে, তারা কিছু সুপারিশ বাস্তবায়ন করবে না- তাহলে সেগুলো বাস্তবায়ন না করার যৌক্তিক কারণ জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। যৌক্তিক কারণ ছাড়া সকল সুপারিশ বাস্তবায়ন সরকারের জন্য বাধ্যতামূলক করতে হবে।’
তবে এই অর্থনীতিবিদের মতে, ‘ব্যাংকখাতের জন্য যেসব ঘোষিত কর্মসূচি আগামী ছয় মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করা জরুরি, সেগুলো করতে কমিশনের সুপারিশের জন্য অপেক্ষার প্রয়োজন নেই। বরং মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে টেকসই ব্যাংকখাত প্রতিষ্ঠায় করণীয় সম্পর্কে কমিশন সুপারিশ করতে পারে। কমিশনের টার্মস অব রেফারেন্স সেভাবে প্রণয়ন করতে হবে।’ সূত্র: টিবিএস