শুভ্রজিৎ বড়ুয়া »
পবিত্র রমজান এলে ঈদের পোশাক কেনাকাটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন সকলেই। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নগরে বেড়েছে মানুষ ও শপিং মল বা মার্কেট। কিন্তু তৈরি পোশাকে আগ্রহ না রেখে দর্জিদের প্রতি আস্থা রেখেছেন অনেকে। চাহিদা কমেনি দর্জি দোকানের। আর তাই ঈদ বা যে কোনো উৎসবে জমে ওঠে দর্জির দোকান। দিন-রাত কেটে যায় ব্যস্ততায়। এ ব্যস্ততার ৮০ শতাংশ ঈদকে ঘিরে বলে জানান দর্জিরা।
নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঈদের পোশাক নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন দর্জিরা। শার্ট, প্যান্ট, থ্রিপিস, কুর্তি, লেহেঙ্গা, ব্লাউজ ও স্কার্ট সেলাইয়ে ব্যস্ত তারা। নতুন করে অর্ডার পেলেও নিতে পারছে না কাজের চাপে। দোকানগুলোতে বছরের অন্য সময়ে তেমন কাজ না থাকায় ঈদের কাজ সামলাতে নিতে হয়েছে অতিরিক্ত কর্মীও। কেউ কাপড় কাটছেন, কেউ সেলাই করছেন, কেউ আবার সেলাই করার কাপড়ে নানা ধরনের পুঁতি ও লেইচ সংযুক্ত করছেন।
জানা যায়, সবসময়ের চেয়ে কাজের চাপ বেশি থাকলেও দামের তেমন পার্থক্য রাখেনি দর্জিরা। প্যান্ট ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, শার্ট ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, সুতির কামিজ ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, নেট কাপড়ের কামিজ ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকা, সুতি কাপড়ের ব্লাউজ ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, নেট কাপড়ের ব্লাউজ ৫০০ টাকা, কুর্তি ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা, লেহাঙ্গা সেলাই করছে ১০০০ টাকায়। তবে লেহেঙ্গা সেলাইয়ে কুঁচির উপর নির্ভর করে দাম। যত বেশি কুঁচি, তত বেশি দামে সেলাই হয় লেহাঙ্গা। এছাড়া বাকি সব পোশাক সেলাইয়ে বাড়তি টাকা গুনতে হয় নামি-দামী সেলাইয়ের দোকানগুলোতে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দর্জির দোকানে আসা প্রিয়া বলেন, ‘কাপড় কিনে রেখেছিলাম রমজান শুরু হওয়ার আগে। কিন্তু নানা কাজের চাপে কাপড়গুলো সেলাইয়ে দিতে পারিনি। তবে উনাকে (দর্জি) আগে বলে রেখেছিলাম বলে উনি আমার কাপড়গুলো নিয়েছেন। এখনতো উনারা কাজের চাপে নতুন কাজ নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। এ সময় অধিকাংশ দর্জিরা নতুন কাজ নিতে চান না। আর যারা নেন তাদের সেলাইয়ের ফিনিশিং খুব একটা ভালো হয় না।’
বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজে বাহারি পোশাক থাকার পরও কেন দর্জিবাড়িতে আসলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘ফ্যাশন হাউজগুলোতে বিভিন্ন ডিজাইন থাকে ঠিকই। কিন্তু কোনো ডিজাইনতো খুব বেশি এক্সট্রা অডিনারি হয়, এমন তো নয়। কিন্তু দামটা আকাশ-পাতাল তফাৎ হয়ে যায়। একটা জামার কাপড় নিয়ে সেলাই করতে হাজার দেড় হাজার টাকা লাগে। অথচ ফ্যাশন হাউজ থেকে একটা জামা নিতে কমপক্ষে তিন থেকে চার হাজার টাকা লাগবে। এছাড়া একেকজনের রুচি একেকরকম।’
নতুন কাজ নিয়ে কথা হয় ওয়াসা মোড়ের রূপায়ন টেইলার্সের স্বত্ত্বাধিকারী উজ্জল শীলের সঙ্গে। তিনি বলেন, নতুন কাজ নেওয়ার মতো তো আর সুযোগ নাই। আমরা কত দিন সময়ে কতটি সেলাই করতে পারবো, সেটা হিসেব করেই অর্ডার নিয়েছি। এরমধ্যে মাস্টার বা টেইলারদের কেউ অসুস্থ হলে কিছু কাজ আটকে যেতে পারে। আমরা রিস্ক ফ্যাক্টরগুলো চিন্তা করেই অর্ডার নিই। কেননা বেশি অর্ডার নিতে গিয়ে বা ব্যবসা বেশি করতে গিয়ে আরেকজনের আনন্দ মাটি করাতো ঠিক না।’
লালখান বাজার মোড়ের হাইওয়ে ভবনের পাশের এক দর্জি বলেন, ‘আমরা সারাবছর যা কাজ করি, তার ৮০ শতাংশ কাজ হয় ঈদের আগে। দেশি ছাড়াও বিদেশি বিভিন্ন বাহারি ডিজাইনের স্যুট, শার্ট, প্যান্ট, থ্রিপিস, লেহেঙ্গা ও স্কার্ট তৈরি করে থাকেন ডিজাইন মাস্টাররা। কিন্তু অর্ডার ততটুকুই নেওয়া হয়, যতটুকু আমরা করতে পারবো। কেননা আজকে আমার কাছ থেকে মনমতো কাজ না পেলে আমরা একটা গ্রাহক হারাবো। পাশাপাশি এটা আমাদের সুনামও নষ্ট করবে।’