সুপ্রভাত স্পোর্টস ডেস্ক »
হার দিয়ে শুরু, হারেই শেষ। সুপার লিগে টানা পাঁচ ম্যাচ হেরে ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করলো। চরম হতাশার বিশ্বকাপ মিশন শেষ হলো বাংলাদেশের।
দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম আজ ছিলো বিরান ভূমি। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে নিয়ে প্রবাসীদের প্রত্যাশার বেলুন আগেই চুপসে গেছে। হাতে গোনা উপস্থিতিই তার প্রমাণ। এমন ছন্নছাড়া ক্রিকেট আর যাই হোক কাজ বাদ দিয়ে দেখার কোন মানে হয় না।
বৃহস্পতিবার দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশকে বিধ্বস্ত করে দিয়ে অস্ট্রেলিয়া জিতেছে ৮ উইকেটে। বাংলাদেশের ৭৩ রান, রানরেট বাড়ানোর চিন্তায় তুড়ি মেরেই উড়িয়ে দেয় অজিরা ম্যাচ জিতে নেয় ৮২ বল আগে। দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার-অ্যারন ফিঞ্চ মিলেই তুলে ফেলেন ৫৮ রান। অধিনায়ক ফিঞ্চ করেন ২০ বলে সর্বোচ্চ ৪০। মাত্র ৬.২ ওভার বল করার সুযোগ পায় বাংলাদেশ।
প্রথম রাউন্ডে সহযোগি সদস্য দেশ স্কটল্যান্ডের কাছে হার দিয়ে শুরু হয়েছিল এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মিশন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিশাল হারে সমাপ্ত হলো তা। এবারও সুপার টুয়েলভে কোন ম্যাচই জিততে পারেনি মাহমুদউল্লাহর দল।
সাত বিশ্বকাপ খেলে তাই এখনো মূল পর্বে বাংলাদেশের একমাত্র জয় সেই ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। শুক্রবার ওমান ও পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে দুই জয় আর ছয় হার নিয়ে দেশে ফিরবে দল।
বাংলাদেশকে এবারের বিশ্বকাপের সর্বনিম্ন ৭৩ রানে গুটিয়ে দেওয়ার দিতে শুরুতে ঝাঁজ দেখিয়েছেন অজি পেসাররাই। দুই পেসার মিচেল স্টার্ক, জশ হ্যাজেলউড মিলে শুরুতেই নাড়িয়ে দিয়েছিলেন ভিত। এই দুজন মিলে তুলেছেন ৪ উইকেট। তবে সবচেয়ে সফল অ্যাডাম জাম্পা। মাত্র ১৯ রানেই ৫ উইকেট তার।
চূড়ান্ত ব্যাটিং ব্যর্থতার একই বর্ণনা আনুষ্ঠানিকতার স্বার্থে দিতে হচ্ছে আরও একবার। শুরুটা লিটন দাসকে দিয়েই। স্টার্কের গতিময় ইয়র্কার বলটা ঠিক অফ স্টাম্পের বাইরে ছিল। তিনি তা স্টাম্পে টেনে বোল্ড।
সৌম্য সরকার জশ হ্যাজেলউডকে একটা চার মেরেছিলেন। এরপর তার বলেই স্টাম্পে টেনে বোল্ড। চারে নেমে মুশফিকুর রহিম ১ রান করেই গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের বলে ফেরেন এলবিডব্লিউ হয়ে।
নাঈম শেখ কিছুটা রান আনছিলেন, থিতুও হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু হ্যাজেলউডের বাউন্সারে বলের নিচে না গিয়েই পুল শটে দেন সহজ ক্যাচ। আগের ম্যাচে প্রথম বলেই বোল্ড হওয়া আফিফ হোসেন এদিনও রানের খাতা খুলতে পারেননি। লেগ স্পিনার অ্যাডাম জাম্পাকে দেন স্লিপে সহজ ক্যাচ। ৩৩ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ।
এরপর অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে প্রতিরোধ গড়েছিলেন তরুণ শামীম হোসেন পাটোয়ারি। স্টার্ককে বাউন্ডারি, জাম্পাকে ছক্কায় উড়িয়ে আভাস দিয়েছিলেন অন্তত জুতসই কিছুর। কিন্তু থিতু হয়ে বিদায় তারও।
জাম্পার বলে স্কয়ার কাট করতে গিয়ে ধরা দেন কিপারের হাতে। ঠিক পরের বলেই শেখ মেহেদী ফেরেন এলবিডব্লিউ হয়ে।
এক পাশে টিকে থাকা অধিনায়কের যবনিকাপাত হয় পরের ওভারে। রাউন্ড দ্য উইকেটে বল করতে আসা স্টার্কের লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট লাগিয়ে ক্যাচ দেন কিপারের হাতে। ৬৫ রানেই বাংলাদেশ হারায় ৮ উইকেট। বাকি দুই উইকেটও পকেটে পুড়ে পাঁচ শিকার ধরেন জাম্পা।
মামুলি রান তাড়ায় অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্য ছিল রানরেট বাড়িয়ে নেওয়া। দুই ওপেনার ফিঞ্চ, ওয়ার্নার মিলে সেই কাজটা করতে থাকেন তড়িঘড়ি। যে উইকেটে বিস্তর ভুগেছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা সেখানে চার-ছয়ের মালা গাঁততে কোন অসুবিধাই হয়নি অজিদের।
পঞ্চম ওভারে তাসকিন ফিঞ্চকে বোল্ড করলেও তাতে ম্যাচের কিছু যায় আসেনি। অজি অধিনায়ক ২০ বলেই করে যান ৪০ রান। শরিফুল ইসলামের বলে স্লগ করতে গিয়ে বোল্ড হন ওয়ার্নার (১৪ বলে ১৮)। তবে রানরেট বাড়ানোর তাড়া না থাকলে ১০ উইকেটেই জিততে পারত তারা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ১৫ ওভারে ৭৩ (নাঈম ১৭, লিটন ০, সৌম্য ৫, মুশফিক ১, মাহমুদউল্লাহ ১৬, আফিফ ০, শামীম ১৯, শেখ মেহেদী ০, তাসকিন ৬*, মোস্তাফিজ ৪ , শরিফুল ০ ; স্টার্ক ২/২১, হ্যাজেলউড ২/৮, ম্যাক্সওয়েল ১/৬, কামিন্স ০/১৮, জাম্পা ৫/১৯)
অস্ট্রেলিয়া: ৬.২ ওভারে ৭৮/২ (ওয়ার্নার ১৮ , ফিঞ্চ ৪০ , মার্শ ১৬* , মাক্সওয়েল ০* ; তাসকিন ১/৩৬, মোস্তাফিজ ০/৩২, শরিফুল ১/৯ )
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৮ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: অ্যাডাম জাম্পা।