জুয়েল আশরাফ »
ঢাকা থেকে বোয়ালখালীর এসি বাস। বকনগর মোড় থেকে ধানবানের দিকে যাচ্ছে। রাস্তাটাকে আঁকাবাঁকা, বৃষ্টিতে ভেজা একটি বড় কালো অজগরের মতো দেখাচ্ছে। এগারো নম্বর সিটে বসে নাফসি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়েছিল। জীবনের অনেক ঘটনা চোখের সামনে সিনেমার মতোন দৃশ্য পাল্টাতে থাকে। তার বয়স যখন আটবছর তখন বাবা-মা বাস দুর্ঘটনায় মারা গেলেন। সে বড় হয়েছে অনেক কষ্টে। পরিশ্রম করে মাস্টার্স পর্যন্ত পড়েছে। শিক্ষক হিসাবে ভালো চাকরিও হয়েছে তার। চাকরির সুবাদেই বোয়ালখালী যাচ্ছে আজ।
নাফসির চিন্তা ভেঙে গেল, বাস জোরে ব্রেক করায়। হঠাৎ একটি গরু বাসের সামনে এসে পড়ায় ড্রাইভার ঠিক সময়ে ব্রেক চাপাতে সৌভাগ্যবশত দুর্ঘটনা এড়ানো গেল। লাইট জ্বালিয়ে বাস চলতে শুরু করলেই কন্ডাক্টর জিজ্ঞেস করল, বোয়ালখালী নামবে কে?
নাফসি বলল, আমি।
কন্ডাক্টর ড্রাইভারকে জানানোর সাথে-সাথে বাসের গতি কমিয়ে থেমে গেল। নাফসি ব্যাগ নিয়ে নামল। মোবাইল ফোনের সময়ের দিকে তাকাল। রাত দশটা বাজে। সে চারপাশে তাকাল কিন্তু কেউ নেই। এমন সময় দূর থেকে একটা টর্চের আলো দেখতে পেল। ধীরে ধীরে দেখল কেউ একজন তার কাছে আসছে। নাফসি জোরালো কণ্ঠস্বরে একটি নাম উচ্চারণ করতেই বয়স্ক লোকটি সাথে সাথে হ্যাঁ বললেন। নাফসি জিজ্ঞেস করল, দবীর চাচা, আপনার এতো দেরি কেন?
লোকটি শুধু মাথা নেড়ে বললেন, ম্যাডাম মাফ করে দিও। অনেক বৃষ্টি হচ্ছিল আর আলো চলে গেছে। তাই আসতে দেরি হয়ে গেল। চলো যাই। না হলে আবার বৃষ্টি শুরু হবে।
বলেই ব্যাগটা তুলে হাঁটতে শুরু করলেন। নাফসি হাঁটতে হাঁটতে খুব ক্লান্ত। প্রতিটি পদক্ষেপের ওজন অনেক বেশি। কিছুদূর যাওয়ার পর সে একটি বিল্ডিং দেখতে পেল। অন্ধকার হওয়ায় ঠিক মতো কিছুই দেখতে পেল না। হঠাৎ আলো এসে বিল্ডিংটি পরিষ্কার হয়ে গেল। ‘বৌরিনগর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়’। নামটি একটি বড় অর্ধবৃত্তাকার খিলানে খোদাই করা। নাফসি মনে মনে আনন্দিত হয়ে হাসল। দুদিনের মধ্যে এই স্কুলে মেয়েদের পড়াতে আসবে।
এই দিকে আসো ম্যাডাম। বলে দবীর চাচা বিল্ডিংয়েরর পাশ দিয়ে হাঁটতে লাগলেন। স্কুলের পেছনে একটা ছোট বাড়ি। এখানেই নাফসির থাকা হবে। দবীর চাচা তালা খুলে জিনিসপত্র নিয়ে ভেতরে গিয়ে লাইট জ্বালিয়ে দিলেন।
ম্যাডাম, তুমি হাত-পা ধুয়ে নাও। আমি খাবারের ব্যবস্থা করি।
দবীর চাচা ভাত গরম করে নিয়ে এলেন। একটি খালি প্লেট দিয়ে গেলেন। নাফসি জিজ্ঞেস করল, চাচা, আপনি খাবেন না?
ম্যাডাম, আমরা গ্রামের মানুষ। সন্ধ্যা হতেই খেয়ে নিয়েছি।
দবীর চাচার বানানো আনাজপাতির তরকারি খেতে খুব পছন্দ করল নাফসি।
ম্যাডাম, তুমি আরাম করো, আমি সকালে আসব।
রান্নাঘর থেকে নাফসি শোবার ঘরে এলো। খুব সুন্দর করে সাজানো বিছানাটা। জানালার পাশে। পাশেই একটা ড্রেসিং টেবিল। সামনে একটা বইয়ের আলমারি।
সকালবেলা মোরগের ডাকে নাফসির চোখ খুলে যায়। সে জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। ছয়টা বেজে গেছে। বাড়ির পেছনের দিকে কিছুদূর বৌরিনগর গ্রাম থেকে দেখা যাচ্ছে। সেখান থেকে প্রবাহিত নদীর এলাকা দেখতে পেল। স্বপ্নে বাগানের মতো লাগছে। নদী যেন নাফসিকে ডাকছে। সে নদীতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে লাগল।
বাড়ির পেছনে ছোট্ট মাটির রাস্তা পেরিয়ে নদী দেখতে গেল। নদী উপচে পড়ছে, নদীর ঘোলাটে পানি দ্রুত প্রবাহিত হচ্ছে। কাছাকাছি একটি সুনির্মিত বাঁধ।
নাফসি পেছন দিকে তাকিয়ে বলল, আমি এখানে চাচা।
দবীর চাচা কাছে এসে বললেন, ম্যাডাম চলো বাসায়, চা-নাশতা করি।
দুজনে বাড়ি ফিরল। চা খেতে খেতে বাইরে থেকে কে যেন চিৎকার করে বলে উঠল, সময় নেই, জলদি আসেন।
দবীর চাচা আর নাফসি দুজনই বেরিয়ে এলো।
দবীর চাচা বললেন, ম্যাডাম, ইনি সারোয়ার।
নাফসি সঙ্গে সঙ্গে বলল, হ্যাঁ, আমি এখনই বের হচ্ছি।
নাফসির বয়স ছাব্বিশ বছর। সে খুব ফর্সা না, কিন্তু গাঢ় বর্ণের কারণে সে খুব আকর্ষণীয় দেখতে। ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলা আর সাঁতার কাটতে পছন্দ করে। বাদামি চোখ এবং আড়ম্বরপূর্ণ নাকের কারণে তার মুখটি খুব সুন্দর। নাফসি আজ একটি গোলাপি শাড়ি পরেছে। দবীর চাচার সাথে সারোয়ারদের বাড়িতে চলে গেল।
সারোয়ারদের পরিবার গ্রামে বেশ পরিচিত। তার দাদা প্রচুর জমির মালিক ছিলেন। কিন্তু সারোয়ারের বাবা দান-খয়রাতে খুব উদার ছিলেন। তাই তিনি তার সম্পদ দুহাতে উজাড় করেছিলেন। সারোয়ারের বয়স প্রায় আটত্রিশ থেকে চল্লি¬শ বছর। ব্যায়াম করা তার শরীরকে শক্তিশালী দেখায়। উচ্চতায় প্রায় ছয় ফুট। তার মুখে ঝোপঝাড়Ñ গোঁফ এবং গাল থেকে চিবুক পর্যন্ত ঘন বনের মতো দাড়ি। কেউ তার মুখের দিকে বেশিক্ষণ তাকায় না। কারণ তার চোখ দুটি হিংস্র এবং কণ্ঠস্বর কর্কশ। তাই সে বেশি কথা বলে না। বাড়িতে বৃদ্ধা মা আর স্ত্রী। স্ত্রীকে গ্রামের অন্য সব মেয়েদের মতো স্বাভাবিক দেখাচ্ছে।
বাইরে বড় হলঘরে গ্রামসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপস্থিত গ্রামের চেয়ারম্যান, মেম্বার, স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও বিশিষ্ট গ্রামবাসীরা। নাফসি হলের ভেতরে প্রবেশ করল। সে পেছনের সারিতে একটি চেয়ারে বসল। মিটিং শুরু হল। গ্রামের অনেক বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। নাফসি সব দেখছিল, কিন্তু সারোয়ার তার দিকে তাকিয়ে আছে, তা সে ভাবেনি। সভা শেষ হতে না হতেই নাফসি হেডমাস্টারের সাথে দেখা করতে এগোল। পেছন থেকে একটি উচ্চস্বর শুনতে পেল, ম্যাডাম।
নাফসি তাকাল। সারোয়ার। তাকে ডাকছে। সারোয়ার নিকটে এসে বলল, আমাদের স্কুলের ছেলেমেয়েরারা একটু একটু করে শিখছে। আপনি ভালো করে শেখাবেন। কোনো সাহায্যের প্রয়োজন হলে আমাকে বলবেন।
নাফসি শুধু হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে দবীর চাচার সাথে বাড়ির দিকে হাঁটতে শুরু করল। বাড়ি ফিরে দবীর চাচা আর নাফসি এক সঙ্গে দুপুরে খেলো। শুরুতে চাচা খেতে দ্বিধা করলেও নাফসির জোরাজুরিতে না খেয়ে পারল না।
দুপুরের খাবারের পর দবীর চাচা বাড়ির দিকে রওনা হলেন। নাফসি বইয়ের আলমারির দিকে ফিরল। তার প্রিয় বিষয় ইতিহাস। তাই সে একটি বইটি বের করে বিছানায় শুয়ে পড়ল। সন্ধ্যায় প্রধান শিক্ষক স্যার বাড়িতে এসে শনিবার থেকে স্কুলে আসতে বললেন। নাফসি রাতের খাবার শেষ করে শোবার ঘরে এলো। জানালাগুলো পুরোনো কাঠের। তাই সেগুলো বাজ পড়ারর মতো শব্দ শোনাচ্ছে। মাঝরাত হয়ে গেল। নাফসি এখন বিছানায়, কিন্তু ঘুম আসছে না। হঠাৎ প্রবল বাতাসে জানালায় টোকা পড়ল এবং খোলা বাতাসের সাথে বৃষ্টি। জানালা খুলতেই বাইরে একজনের অস্পষ্ট আকৃতি দেখতে পেল। ধীরে ধীরে চিত্রটা জানালার দিকে সরে যেতে লাগলো। নাফসি ভয় পেয়ে গেল। তাই তাড়াতাড়ি জানালাটা বন্ধ করে ভাবলো, বাইরে কোনো শব্দ হচ্ছে কিনা। কিন্তু বৃষ্টির প্রচ- শব্দে সে কিছুই শুনতে পেল না। সে যা দেখেছে তা সত্যিই। ওঠে আবার জানালা খুলতে গেল। তখনও বৃষ্টি ঝরছে। জানালা খুলে জোরে চিৎকার করে উঠল। আর শরীরটা এমন সাদা হয়ে গেল যেন একফোঁটা রক্তও নেই কোনো অঙ্গে। মেয়েটির গলায় একটি বড় লাল ঘা। সে নাফসির দিকে তাকিয়ে কাঁদছে। নাফসি সাহস সঞ্চয় করে জিজ্ঞেস করল, কে তুমি? আর সারারাত বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে দাঁড়িয়ে আছো কেন? তোমার গলায় ওটা কিসের আঘাত?
কিন্তু সামনের মেয়েটি শুধু কাঁদছে। নাফসি ভাবল বাইরে গিয়ে মেয়েটিকে বাড়িতে নিয়ে আসা উচিত। সে ছাতা নিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে এলো, কিন্তু বাইরে কেউ নেই। মাটিতে এক টুকরো কাপড় পড়ে থাকতে দেখে তুলে নিল। ধড়ফড় করে বিছানায় ওঠে বসল ঘুম ভেঙে নাফসি। কী ভয়ানক স্বপ্ন! বাথরুমে গিয়ে চোখেমুখে পানি ছিটাল। শোবার ঘরে এসে বিছানার কাছে একটা চেয়ারে বসে ভাবল, কী হয়েছে এতক্ষণ। ঠিক কী স্বপ্নে দেখেছে সে অনুভব করল। জীবনে আগে কখনও এ রকম ঘটেনি। বাকি রাতটা চেয়ারের বসে কাটিয়ে দিল।
সকাল সাতটার দিকে দরজার কলিংবেল বাজতেই নাফসি দরজা খুলল। সামনে দবীর চাচা দাঁড়িয়ে। শুক্রবার হওয়ায় নাফসি বাড়িতেই আছে। চাচা শোবার ঘরে চা নিয়ে এলেন।
নাফসি বলল, টেবিলে রাখুন চাচা।
দবীর চাচা টেবিলের ওপর এক কাপ চা রাখলেন। ঘুরতে ঘুরতে টেবিলের এক টুকরো কাপড়ের ওপর তার চোখ পড়ল। তিনি কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে থাকলেন যেন কিছু বোঝার চেষ্টা করছেন। তার চোখ ভিজে উঠল।
নাফসি জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে চাচা? বসুন। দবীর চাচা চোখের পানি মুছলেন। বিছানায় হেলান দিয়ে বসলেন। নিষ্প্রভ গলায় বললেন, আজ প্রায় এক বছর হলো রানু হঠাৎ গ্রাম থেকে উধাও। আমি আর গ্রামবাসী অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি। পুলিশও অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কোনো হদিস পায়নি।
দবির চাচা কান্না আটকাতে পারলেন না। বললেন, আমার রানু মা ছাড়া সংসারে আমার কেউ নেই। আমিই তার বাবা এবং মা। সে বৌরিনগর স্কুলে বড় হয়েছে। এ বছর স্কুল থেকে এসএসসি দেওয়ার কথা। কেউ কেউ বলে সে নদীতে সাঁতার কাটতে যাচ্ছিল, কেউ বলে তার প্রেমিকের সাথে পালিয়েছে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, সে শীঘ্র আসবে, সে তার বাবাকে ছেড়ে যাবে না।
দবীর চাচাকে রাত্রে যা স্বপ্নে দেখেছিল সব খুলে বলল নাফসি। স্বপ্নে কাপড়ের টুকরা তুলে এনেছিল। কিন্তু বাস্তবে টেবিলের ওপর সেই কাপড় দেখে নাফসি নিজেই বিস্মিত। ভয়ে বাকি রাত তার একটুও ঘুম হয়নি। দবীর চাচা আনন্দে উত্তেজিত হয়ে বললেন, মানে, আমার রানু এখনও গ্রামেই আছে। আমি তাকে এখনই খুঁজতে যাব।
সন্ধ্যায় ফিরে এলেন দবীর চাচা হতাশ হয়ে। মেয়েকে পাওয়া যায়নি কোথাও। নাফসি চাচাকে আজ রাতে এখানে থাকার অনুরোধ করল।
রাতের খাবারের পর দুজনে বারান্দায় বসে রানুর কথা আলোচনা করল। চাচা বললেন, ম্যাডাম, রানু রঙের দিক থেকে আপনার থেকে একটু ভালো। ওর চুলগুলো কোমর পর্যন্ত। আর সে ঢিলেঢালা পোশাক পরতে পছন্দ করত।
নাফসির মন অস্থির থাকায় ঘুমাতে পারল না। সে ভাবতে থাকল, তার কী হয়েছে। চাচা বাইরে বারান্দার সোফায় শুয়ে আছেন। সারাদিন বৃষ্টিতে হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে খুঁজেছেন, তাই খুব ক্লান্ত তিনি। রাত একটার দিকে নাফসি ঘুমে তলিয়ে গেল। হঠাৎ জানালায় টোকা পড়ল। বুকে ধড়ফড় নিয়ে ঘুমটা ভেঙে গেল। নাফসি সাথে সাথে গিয়ে চাচাকে ঘুম থেকে জাগালো। দুজনই শোবার ঘরের জানালার কাছে চলে আসে। চাচা জানালা খুলে দেখে। চোখ বড় বড় হয়ে গেল। রানু বাইরে দাঁড়িয়ে আছে…।
নাফসি দেখল গতকালের মতো মেয়েটি আজও কাঁদছে। মেয়ের অবস্থা দেখে দবীর চাচা দৌড়ে বাইরে চলে গেলেন, নাফসিও চাচার পেছনে ছুটল। চাচা মেয়েকে বুকে নিতে গেলেন, কিন্তু রানু অদৃশ্য হয়ে গেল। চাচা মেয়েকে স্পর্শ করতে পারেননি।
আমি এসেছি, বাবা!
তার গলার আওয়াজ মনে হচ্ছে গভীর কূপ থেকে আসছে।
তুমি কোত্থেকে আসলে মা?
রানু বলল, বাবা, আমি আর এই পৃথিবীতে নেই। এক বছর ধরে আমি এই বৌরিনগরে ঘুরে বেড়াচ্ছি। যতক্ষণ না ওই বখাটেকে সে যা করেছে তার শাস্তি না পাচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমার আত্মা শান্তি পাবে না। গত বছর আমি নদীতে সাঁতার কাটতে গিয়েছিলাম। লোকটি আমাকে তুলে নিয়ে তার খামারে ধর্ষণ করে। আমি অনেক কেঁদেছি, অনেক প্রতিরোধ করেছি। কিন্তু আমি আমার সুনাম রক্ষা করতে পারিনি। আমাকে তার খামার বাড়ির পেছনে কবর দিয়েছে
একথা শুনে দবির চাচার মুখ রাগে লাল হয়ে গেল। তার চোখ দুটি জ্বলন্ত আগুনের মতো হয়ে উঠলো। যেন তিনি এখনই গিয়ে সেই বদমাশের মাথা কেটে আনবেন…।
তার নাম বলো।
নাফসি সবাই শুনছিল, দবীর চাচার কাছে এসে রানুর দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি আমাকে সব খুলে বলো।
রানু তার বাবাকে বলল, বাবা, আমাকে এখন যেতে হবে।
সঙ্গে সঙ্গে বৌরিনগর যাওয়ার পথে অদৃশ্য হয়ে গেল। নাফসি আর দবীর চাচা খুব মন খারাপ করে বাড়িতে এল।
ঘুম ভাঙতেই মাথাটা কেমন ভার-ভার ঠেকছে নাফসির। এতক্ষণ তাহলে স্বপ্নের ভেতর সে ছিল। স্বপ্নও কেমন অদ্ভুত, স্বপ্নটাকেই বাস্তব লাগল। দবীর চাচার সঙ্গে ব্যাপারটি নিয়ে বসতে হবে। সকাল হতেই দবীর চাচাকে স্বপ্নের ব্যাপারটা নাফসি জানাল। পুলিশের কাছে যদিও ব্যাপারটি হাস্যকর। স্বপ্নের বিষয় আমল নিতে চাইবে না তারা। দবীর চাচার সঙ্গে পরামর্শ করল।
পরের দিন দুজনই থানায় গিয়ে ঘটনাটি জানাল। শুধু ‘স্বপ্নে দেখেছে’ এই কথাটুকু বাদ রেখে গেছে। ওসি সাহেব বললেন, আপনারা এগিয়ে যান আমি সার্চ ওয়ারেন্ট নিয়ে গ্রামে পৌঁছে যাব।
ওসি সাহেব পাঁচজন কনস্টেবল সঙ্গে নিয়ে তদন্তের জন্য বৌরিনগর গ্রামে এলেন। পুলিশ দেখে গ্রামবাসী সারোয়ারদের বাড়ির সামনে জড়ো হয়। ওসি সাহেব সারোয়ারকে একটি সার্চ ওয়ারেন্ট দেখালেন এবং তাকে তার খামারে নিয়ে যেতে বললেন। সারোয়ার খুব রেগে গেলেন। কিন্তু সমবেত গ্রামবাসীর সামনে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না এই ধারণা পেয়ে তিনি পুলিশের গাড়িতে ওঠে বসলেন। গাড়ি খামারে পৌঁছে গেল। ওসি সাহেব পাঁচজন কনস্টেবল সঙ্গে নিয়ে এলাকায় খোঁজাখুঁজি করেও কিছু পাননি। রাত হয়ে গেল। সমস্ত চত্বর তল্লাশি করা হল। একজন কনস্টেবল বাড়ির পেছনের উঠানের কাছে নতুন গাছ লাগানো দেখলো। সে ওসি সাহেবকে ডেকে বলল, স্যার, এখানে আসুন।
তিন-চার ফুট খননের পর একটি মানবদেহের অবশেষ পাওয়া গেল। দবীর চাচা বললেন, যে জামাকাপড় পাওয়া গেছে এগুলো তার মেয়ের।
লাশের পরিচয় অবশেষ রানুর বলে জানা গেছে। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠালেন। দেহাবশেষ পরিদর্শন করার সময় ওসি সাহেব লক্ষ করলেন তার পাশে কিছু পড়ে আছে। তিনি চকচকে জিনিসটা তুলে নিলেন। একটা আংটি। ঘুরে ঘুরে দেখলেন, আংটির ভেতরে খোদাই করা নাম ‘সারোয়ার’। এমন শক্ত প্রমাণ পেয়ে ওসি সাহেব সারোয়ারকে গ্রেফতার করেন। সারোয়ার গাড়ির দিকে হাঁটলো।