সুপ্রভাত ডেস্ক
লন্ডনভিত্তিক শিপিং সংক্রান্ত সংবাদমাধ্যম লয়েডস লিস্টের বিশ্বের ১০০ শীর্ষ বন্দরের তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান গত বছরের তুলনায় ৩ ধাপ পিছিয়েছে। এবার বিশ্বের ব্যস্ততম বন্দরের তালিকায় ৬৭তম স্থানে অবস্থান করছে দেশের প্রধান এ সমুদ্র বন্দর। এর আগের বছর বন্দরের অবস্থান ছিল ৬৪ তম।
সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমটির প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছে ৩১ লাখ ৪২ হাজার ৫০৪ টিইইউস (২০ ফুট দৈর্ঘ্যের একক)। এর আগের বছর করেছিল ৩২ লাখ ১৪ হাজার ৫৪৮ টিইইউস কনটেইনার। শতকরা হিসেবে আগের বছরের তুলনায় চট্টগ্রাম বন্দর ২ দশমিক ২ শতাংশ কনটেইনার কম হ্যান্ডলিং করেছে।
এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমটি মন্তব্যে উল্লেখ করেছে, ‘ধারণক্ষমতার সীমাবদ্ধতা বাংলাদেশের প্রধান এ বন্দরের অগ্রগতির ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ খবর ঢাকাপোস্টের।
বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্বের অর্থনীতিতে অস্থিরতা চলছে। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে। দেশে ডলারের সংকট তৈরি হয়েছে। এলসি খোলার ক্ষেত্রে নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে। বিলাসজাত পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে সরকার নানা শর্ত আরোপ করেছে। আবার দেশে তৈরি পোশাকের অন্যতম বাজার ইউরোপ-আমেরিকা। তাছাড়া রাশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যেও বাংলাদেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। গত বছর ওইসব দেশ অর্ডার কম করেছে। অর্ডার কম হওয়ার কারণে দেশের পোশাক কারখানায় উৎপাদন কমেছে। উৎপাদন কম হওয়ায় বন্দর দিয়ে কাঁচামাল আমদানিও কমেছে। সব মিলিয়ে বন্দর এবার হোঁচট খেয়েছে।
যদিও বন্দর কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গত বছর কনটেইনার হ্যান্ডলিং একটু কম হলেও কার্গো হ্যান্ডলিং অনেকটা স্বাভাবিক রয়েছে। কার্গোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বেশি আসে এবং কনটেইনারে বেশিরভাগ আসে বিলাসবহুল পণ্য। গত অর্থবছরে বিলাসবহুল পণ্যের চেয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বেশি এসেছে।
বন্দর সচিব ওমর ফারুক বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ডলার সংকটের কারণে এবার কনটেইনার আমদানি কমেছে। কনটেইনারে সাধারণত বিলাসবহুল পণ্য আনা হয়। আর গত বছরে বিলাসবহুল পণ্য কম আমদানি হয়েছে। তবে বন্দরে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সংযুক্ত করা হয়েছে। কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বেড়েছে। আশা করি, আগামী বছর বন্দরের অবস্থান উন্নীত হবে।
এদিকে লয়েডস লিস্টের তথ্য অনুযায়ী, গতবারের মতো চলতি বছরও চীনের সাংহাই বন্দর শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে। বন্দরটি ২০২২ সালে ৪ কোটি ৭৩ লাখ ৩ হাজার টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছে। এর আগের বছর বন্দরটি ৪ কোটি ৭০ লাখ ৩০ হাজার ৩০০ টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছিল। শতকরা হিসেবে বন্দরটি শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ কনটেইনার বেশি হ্যান্ডলিং করেছে।
এছাড়া আগের বছরের তুলনায় কনটেইনার হ্যান্ডলিং কমলেও এবার দ্বিতীয় শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে সিঙ্গাপুর বন্দর। ২০২২ সালে বন্দরটি ৩ কোটি ৭২ লাখ ৮৯ হাজার ৬০০ টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডেল করেছে। এর আগের বছর বন্দরটি হ্যান্ডলিং করেছিল ৩ কোটি ৭৪ লাখ ৭০ হাজার টিইইউস কনটেইনার। শতকরা হিসেবে কনটেইনার হ্যান্ডলিং কমেছে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ।
বন্দর সূত্র জানায়, ২০১৩ সাল থেকে প্রতিবছর বিশ্বের শীর্ষ ১০০টি বন্দরের তালিকা করে লয়েডস লিস্ট। ওই সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ছিল ৮৬তম। এরপর ২০১৪ সালের তালিকায় ৮৬তম অবস্থানে ছিল চট্টগ্রাম বন্দর, ২০১৫ সালে ৮৭ তম, ২০১৬ সালে ৭৬ তম, ২০১৭ সালে ৭১তম, ২০১৮ সালে ৭০তম, ২০১৯ সালে ৬৪ তম, ২০২০ সালে ৫৭ তম, ২০২১ সালে ৬৭ তম এবং ২০২২ সালের তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দর ছিল ৬৪তম।
চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের আমদানি ও রপ্তানির ৯২ শতাংশেরও বেশি পণ্য এবং ৯৮ শতাংশ কনটেইনারজাত পণ্য হ্যান্ডলিং করে। বন্দরে প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাত হাজার কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়।