বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) স্বাস্থ্য খাত সংস্কারবিষয়ক একটি জনমত জরিপ করেছে। সেখানে হতাশাজনক চিত্র পাওয়া গেছে। বলা হয়েছে, দেশের প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন মানুষের সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে অবহেলা, অযত্ন ও অপচিকিৎসার শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। এই হার গ্রামের চেয়ে শহরে বেশি।
বিবিএস গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে দেশের ৬৪ জেলার শহর ও গ্রামাঞ্চলের ৮ হাজার ২৫৬টি খানার ওপর জরিপ করে। জরিপে প্রতিটি খানা থেকে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী একজন নারী বা পুরুষের মতামত নেওয়া হয়।
জরিপে বলা হয়েছে, দেশের ৩৮ শতাংশ মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে অবহেলা, অযত্ন বা অপচিকিৎসার শিকার হন। গ্রামের ৩৬ শতাংশ মানুষ ও শহরের ৪৪ শতাংশ মানুষ এই অভিযোগ তুলেছেন। এসব অভিযোগ নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে প্রায় সমান। সব বয়সী মানুষের মধ্যে এই অভিযোগ প্রায় সমানভাবে দেখা গেছে।
সরকারি হাসপাতালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ চিকিৎসা নেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে। জরিপে দেখা যাচ্ছে, ৩৮ শতাংশ মানুষ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেওয়ার কথা বলেছেন। এরপর বেশি মানুষ চিকিৎসা নেন জেলা সদর হাসপাতাল ও সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে, এই হার যথাক্রমে ২৭ শতাংশ ও ২৫ শতাংশ। কমিউনিটি ক্লিনিক থেকেও উল্লেখযোগ্য হারে মানুষ (২০ শতাংশ) সেবা নেন।
তবে মানুষ একই সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে যেমন সেবা নেন, তেমনি সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক থেকে এবং এনজিওর প্রতিষ্ঠান থেকে সেবা নেন। এনজিওর তুলনায় ব্যক্তিমালিকানাধীন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা নেওয়া মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি।
চিকিৎসকদের অবহেলা ও আধুনিক চিকিৎসা সংকটের কারণে প্রচুর রোগী দেশের বাইরে চলে যায়। এতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় হয়। বিদেশে বাংলাদেশের রোগীদের চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়টি স্বাস্থ্য খাতের দুর্বলতা বলে চিহ্নিত করা হয়েছে । কিন্তু কত মানুষ বিদেশে চিকিৎসা নিতে যান, তার সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও জরিপে বলা হয়েছে, ২ দশমিক ৪ শতাংশ উত্তরদাতার মতে, গত পাঁচ বছরে তিনি নিজে বা পরিবারের অন্য কোনো সদস্য চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে গেছেন।
অন্যদিকে চেম্বারে চিকিৎসকদের সঙ্গে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ করার বিষয়ে উত্তরদাতাদের সমর্থন আছে কি না, জরিপে তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। ৬৭ শতাংশ উত্তরদাতা বলেন, বিষয়টিকে তাঁরা সমর্থন করেন না।
চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্রে ওষুধের মূল বা জেনেরিক নাম, নাকি কোম্পানির দেওয়া নাম লেখা উচিত—জেনেরিক নাম লেখা উচিত বলে মতামত দিয়েছেন ৪৪ শতাংশ মানুষ।
অনেক বছর ধরে বেহাল স্বাস্থ্যখাত। এই জরিপের মাধ্যমে যে অভিজ্ঞতা, মতামত ও পরামর্শ উঠে এসেছে তার আলোকে আগামীতে চিকিৎসাখাতের সংস্কার হওয়া উচিত। দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে দীর্ঘদিন ধরে মানুষ বঞ্চিত হয়েছে। এবার অন্তত জনবান্ধব হয়ে উঠুক চিকিৎসাখাত।