বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য অধ্যায়ের অবসান ঘটল। দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াণে জাতি এক শোকাবহ মুহূর্ত অতিক্রম করছে। তাঁর মৃত্যু কেবল একটি দলের নেত্রীর বিদায় নয়, বরং বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষার দীর্ঘ সংগ্রামের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের পতন।
বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিল এক আকস্মিক ও কঠিন পরিস্থিতিতে। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাতের পর দলের অস্তিত্ব যখন সংকটে, তখন এক সাধারণ গৃহবধূ থেকে রাজনীতির ময়দানে তাঁর আবির্ভাব ঘটে। কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও তিনি অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে দলের হাল ধরেন এবং অল্প সময়ের মধ্যেই নিজেকে এদেশের গণমানুষের প্রিয় নেতায় পরিণত করেন।
নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তৎকালীন সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে তাঁর আপসহীন অবস্থান তাঁকে ‘দেশনেত্রী’ উপাধিতে ভূষিত করে। সে সময় তিনি কেবল রাজপথ কাঁপানো নেত্রীই ছিলেন না, বরং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের মূল শক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জয়লাভের মাধ্যমে দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং সংসদীয় গণতন্ত্র পুনরুত্থানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
তাঁর শাসনামলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা, বিশেষ করে নারী শিক্ষার প্রসারে অভাবনীয় বিপ্লব ঘটেছিল। বিনামূল্যে বই বিতরণ এবং মেয়েদের উপবৃত্তি প্রদানের যে ধারা তিনি শুরু করেছিলেন, তা বাংলাদেশের সামাজিক উন্নয়নে মাইলফলক হয়ে আছে। এ ছাড়া গ্রামবাংলার অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের চেতনায় জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।
রাজনৈতিক জীবনের শেষ সময়গুলো তাঁর জন্য অত্যন্ত কষ্টকর ছিল। কারাবাস, অসুস্থতা এবং প্রিয়জনদের হারানোর বেদনা তাঁকে সইতে হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে তিনি নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগেছেন, তবুও তাঁর মনোবল ছিল অটুট। তিনি বারবার প্রমাণ করেছেন যে, প্রতিকূল পরিস্থিতি মানুষকে দমাতে পারে কিন্তু আদর্শ থেকে বিচ্যুত করতে পারে না।
বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াণ দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক বিশাল শূন্যতার সৃষ্টি করল। ইতিহাসের পাতায় তিনি বেঁচে থাকবেন গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।



















































