অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সম্প্রতি চাকরির আবেদন মাশুলের সঙ্গে ভ্যাটের হার বসিয়ে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। সরকার এত দিন মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট নিত না। কিন্তু এই প্রথম চাকরির আবেদন মাশুলের সঙ্গে ভ্যাটও নেওয়া শুরু করল।
এখন থেকে অনলাইনে চাকরির আবেদনের ক্ষেত্রে মোবাইল অপারেটরের কমিশনের ওপর ভ্যাটের হার হবে ১৫ শতাংশ। সাধারণত অনলাইনে আবেদন করা হয় সরকারি মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর টেলিটকের মাধ্যমে। নিয়ম হলো, টেলিটক আবেদন ফির সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কমিশন হিসেবে নিতে পারবে।
যেমন, নবম গ্রেডের একটি চাকরির আবেদনে ফি ৬০০ টাকা। এ ক্ষেত্রে টেলিটকের কমিশন হবে ৬০ টাকা। এই ৬০ টাকার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ হবে, যার পরিমাণ ৯ টাকা। সব মিলিয়ে চাকরিপ্রার্থীর ব্যয় হবে ৬৬৯ টাকা। ভ্যাট আরোপের আগে বাড়তি ৯ টাকা লাগত না।
একটি আবেদনে বাড়তি ৯ টাকা আপাতদৃষ্টিতে খুব বেশি নয়। অনেকে ভাবতে পারেন এ সময়ে ৯ টাকা কিছুই নয়। তবে প্রশ্ন হলো সরকার কেন রাজস্ব আদায়ের একটি উপায় হিসেবে বেকারদের চাকরির আবেদনকে বেছে নেবে। প্রার্থীদের অনেকবার চাকরিতে আবেদন করতে হয়। একবারে সবার চাকরি হয় না। প্রতিবার বাড়তি টাকা দিলে সেটা মোটের ওপর কম দাঁড়ায় না।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য মতে, সরকারি চাকরিতে অনুমোদিত পদের প্রায় ২৬ শতাংশ পদ শূন্য, যা সংখ্যায় প্রায় পাঁচ লাখ। চাকরির বিজ্ঞাপন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতিবছর সরকারি চাকরি ও সরকারি সংস্থায় প্রায় ৫০ হাজার পদের বিপরীতে ৬০ লাখ চাকরিপ্রার্থী আবেদন করেন। এর মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কয়েক হাজার পদে নিয়োগের বিপরীতে আবেদনকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ২৫ লাখ।
সরকার এ সময়ে এসে কেন এমন অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তা জানতে গিয়ে বোঝা গেল সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩ লাখ ২৫ হাজার ২৭২ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেছে এনবিআর, যা লক্ষ্যের চেয়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকা কম। আর এক দশকের মধ্যে রাজস্ব আদায়ে সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি হয়েছে গত অর্থবছরে। এই ঘাটতি পুষিয়ে নিতে বেকারের ওপর বাড়তি কর বসিয়েছে সরকার।
তবে সিদ্ধান্তটি যে ঠিক হয়নি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো অহেতুক অনেক ব্যয় করে থাকে। এসব নিয়ে চাঞ্চল্যকর অনেক খবরও সংবাদপত্রে আসে। সরকার অযথা খরচের খাতগুলো বন্ধ করলেই বেকারের ওপর বাড়তি চাপিয়ে দেওয়া করের অধিক অর্থ সাশ্রয় করতে পারে। সরকারের উচিত ওদিকে নজর দেওয়া।
এ মুহূর্তের সংবাদ