পাহাড়ধসের শঙ্কায় ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের আশ্রয়ে খোলা হলো ১৯ আশ্রয়কেন্দ্র #
নিজস্ব প্রতিবেদক :
বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ৩৫ মিলিমিটার। কিন্তু সন্ধ্যার পর বৃষ্টির তীব্রতা বেড়ে যায় এবং রাত ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় রেকর্ড হয় ১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত। বাড়তি এই বৃষ্টিপাত গত বুধবার রাতে আরো বাড়ার কথা। একইসাথে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আবারো ভারী বর্ষণ হতে পারে।
সাগরের উপরে প্রচুর মেঘ উড়ছে জানিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর পতেঙ্গা কার্যালয়ের আবহাওয়াবিদ শেখ ফরিদ আহমেদ বলেন, সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর কারণে সাগরের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বইছে। একইসাথে সাগর থেকে ভেসে আসা জলীয়বাষ্পের কারণে সারাদেশে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। আর এই বর্ষণ সহসা কমার সম্ভাবনা নেই। তবে বৃহস্পতিবার দিনভর ঝরিয়ে শুক্রবার থেকে বৃষ্টির তীব্রতা কমতে পারে।
তিনি আরো বলেন, বৃষ্টির তীব্রতা বাড়ায় পাহাড়ধসের শঙ্কাও রয়েছে। একইসাথে জোয়ারের উচ্চতা বেশি থাকায় নগরীর নিঁচু এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে।
এদিকে পাহাড়ধসে মৃত্যু ঠেকাতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেটগণ ঝুঁকিপূর্ণ ১৭ পাহাড়ে অভিযান পরিচালনা করেন। কোথাও পাহাড় ধসে যাতে কোনো জানমালের ক্ষতি না হয় সেজন্য ৪৪৩টি পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। একইসাথে ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু রাখা হয়েছে। গত মঙ্গলবারেরমতো গতকালও ডিটি বায়েজীদ সংযোগ সড়কের উভয়পাশের পাহাড়, মতিঝর্ণা, বাটালি হিল, একে খান পাহাড়, ট্যাংকির পাহাড়, আমিন জুট মিলস এলাকা, রউফাবাদ, খুলশী, পাহাড়তলি, ফয়েজ লেক, আকবর শাহ এলাকার ঝিল-১,২,৩ নং এলাকা, জিয়ানগর, মধ্যমনগর, মুজিব নগর, শান্তিনগর এলাকা, কৈবল্যধাম বিশ্বকলোনি এলাকা, ফিরোজ শাহ এলাকা, ফরেস্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউট এলাকা, বায়েজিদ-ফৌজদারহাট সিডিএ লিংক রোড এলাকা সমূহে ভারী বর্ষণের মধ্যে মানুষের জানমালের সুরক্ষায় জেলা প্রশাসন চট্টগ্রামের পক্ষ থেকে ঝুঁকি পূর্ণ পাহাড় থেকে জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নিতে মাইকিং কার্যক্রম অব্যাহত ছিল। এছাড়া কৈবল্যধাম বিশ্বব্যাংক কলোনীর লেকসিটি আবাসিক এলাকার পাশে পাহাড়ের উপরে রয়েছে বিশাল এক বসতি। সেখানকার বসতিদেরও নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যেতে মাইকিং করা হয়েছে।
অপরদিকে দিনভর বৃষ্টি না থাকায় সন্ধ্যার পর ভারী বর্ষণে নগরীর নিঁচু এলাকাগুলোতে পানি জমে যায়। এদিকে পানি যাতে কোথাও বেশিক্ষণ আটকে থাকতে না পারে সেজন্য জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় কুইক রেসপন্স টিম কাজ করছে বলে জানান জলাবদ্ধতা প্রকল্পের সেনাবাহিনীর নিয়োজিত প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মো. শাহ আলী। তিনি বলেন, ‘যেখানে পানি জমছে আমাদের লোকজন গিয়ে পানি অপসারণের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। তাই কোথাও পানি তেমন জমছে না। তবে প্রবর্তক এলাকাটি নিচু হওয়ায় ক্ষণিকের জন্য পানি জমলেও তা দ্রুত যাতে নেমে যেতে পারে আমরা সেই ব্যবস্থা নিয়েছি।
তবে নগরীর অনেক এলাকায় জোয়ারের পানি উঠছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, মা ও শিশু হাসপাতাল, হালিশহর, বন্দরটিলা প্রভৃতি এলাকায় জোয়ারের পানি উঠছে। আর এসব পানি এবারের বর্ষায় প্রবেশ করবে, তবে আগামীর বর্ষায় যাতে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য আমরা রেগুলেটর নির্মাণের কাজ করছি। আশা করছি আগামী বর্ষার আগে নগরবাসী এর সুফল পাবে।
উল্লেখ্য, নগরীতে বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। কিন্তু এবার নগরীর ষোলশহর দুই নম্বর গেইট থেকে মুরাদপুর পর্যন্ত রোডে পানি জমছে না। তবে জোয়ার দুর্ভোগে মানুষ ঠিকই ভুগছে। আর জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছিল সরকার। যা গত জুনে শেষ হলেও পরবর্তীতে তা বর্ধিত করা হয়।