রাজিব শর্মা »
১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ফুলের দোকানগুলোতে বেড়েছে কেনাবেচা। চাহিদা বাড়াতেই পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লাল গোলাপসহ সকল ধরনের ফুলের দাম।
নগরীর ফুল বিক্রির অন্যতম এলাকা চেরাগীর মোড়ে সরেজমিনে দেখা যায়, অন্যান্য দিনের তুলনায় বেড়েছে ফুলের চাহিদা। গোলাপ, রজনীগন্ধা, জারবেরা, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, রডস্টিক, কেলেনডোলা, চন্দ্রমল্লিকাসহ সবধরনের ফুলের দাম অন্যান্য দিনের তুলনায় বেড়েছে কয়েকগুণ। আর চড়া দাম দিয়ে ফুল কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। ক্রেতাদের মধ্যে বিশেষ করে দেখা যায় তরুণ-তরুণীদের ভিড়।
ফুলের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে ফুল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি পিস চায়না নানা রঙের গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায় যা অন্যান্য দিন বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৪০ টাকা। কয়েকদিন আগের বাসি লাল গোলাপ বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা যা অন্যান্য দিন বিক্রি হয় ৭ থেকে ১০ টাকা। তাছাড়া তাজা দেশী গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা, যা অন্যান্য দিন বিক্রি হয় ১৫ থেকে ২০ টাকা।
এছাড়া গ্লাডিওলাস রঙভেদে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, জারবেরা ২০ থেকে ২৫ টাকা, রজনীগন্ধা ৩০ টাকা, ১০০ পিস চন্দ্রমলিকা ৫০০ টাকা, জিপসি প্রতি আঁটি ১০০ টাকা ও গাঁদাফুল প্রতি হাজার ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতিটি ফুলের দাম দ্বিগুণের চেয়ে বেশি বেড়েছে বলে জানা যায়।
এদিকে ফুলের বাজার চড়া হওয়ার কারণ হিসেবে ফুল ব্যবসায়ীদের কারসাজি হিসেবে দেখছেন ক্রেতারা। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা দুষছেন মধ্যস্বত্বকারবারি ও চাষীদেরকে।
চেরাগী মোড়ে ফুল কিনতে আসা নগরীর এক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাসরিন তমা অভিযাগ করে বলেন, ‘তিনদিন আগে যে লাল গোলাপ বিয়ের জন্য কেনা হয়েছে প্রতি পিস ১৫ টাকা করে। তা এখন ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন ৫০ থেকে ৭০ টাকা। তারা বলছে এসব চায়না লাল গোলাপ। আমদানি করতে হয়। তাই দাম বাড়তি।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসাদুর রহমান বলেন, ‘ভালোবাসা দিবসে প্রিয়জনকে উপহার দিতে বইয়ের পাশাপাশি লাল গোলাপ কিনতে আসলাম। এখন ব্যবসায়ীরা বলেন, প্রতি পিস তাজা লাল গোলাপ ৭০ টাকা। আর হলুদ চায়না গোলাপ ১০০ থেকে ১২০ টাকা। এসব ফুল অন্যান্য দিনে ১৫ থেকে ৩০ টাকায় পাওয়া যায়।’
শিক্ষার্থী নাজনীন চৌধুরী বলেন, ‘প্রতিবছর ভালোবাসা দিবসে ক্যাম্পাসে লাল গোলাপ দিয়ে প্রিয়জনদের ভালোবাসাকে স্মরণীয় করে রাখতে চাই। চেরাগীতে এসে দেখি ব্যবসায়ীরা ফুলের দাম বাড়তি বলছে।’
এদিকে ক্রেতাদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ফুল ব্যবসায়ীরা বলেন, কৃষিজাত পণ্যের দাম বাড়াতেই দেশীয় চাষী পর্যায়ে ফুলের দাম বেড়েছে। তাছাড়া কিছু ফুল বিভিন্ন দেশ থেকেও আমদানি করতে হয়। তাই আমদানি খরচ, সরবরাহ খরচের কারণে প্রতিবছর এদিনে ফুলের দাম বাড়তি থাকে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
চেরাগীর ফুলের দোকান হেভেনস এর মালিক মো. নাঈম উদ্দিন বলেন, ‘ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ঢাকা, চুয়াডাঙ্গা, দিনাজপুরের ফুল চাষিরা দাম বাড়িয়েছে। চাষি পর্যায়ে দাম বাড়ার কারণে বাড়তি বিক্রি করতে হচ্ছে। আজকে লাল গোলাপ বিক্রি করছি ৬০ থেকে ৭০ টাকা।’
অপরাজিতা পুষ্প বিতানের কর্মী মো. জুয়েল বলেন, ‘কৃষিজাত পণ্য সার, রাসায়নিক, শ্রমিকের বেতনসহ সবকিছুর দাম বেড়েছে। যার ফলে কৃষকরা ফুলের দাম বাড়িয়েছে। তাই একটু চড়া।’
স্টার পুষ্প বিতানের এর রাশেদ বলেন, ‘আজকে আমদানি করা চাইনিজ গোলাপ ৮০ থেকে ১০০ টাকা। আর দেশী গোলাপের দাম ৩০ টাকা। তাজা হলে ৫০ টাকা। সবকিছুর দাম বাড়তি তাই গোলাপের দাম বাড়ছে।’
এদিকে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর চাষি পর্যায়ে কিছুটা দাম বাড়তি বলে জানান উত্তরবঙ্গের ফুল চাষিরা। এছাড়া ফুলের দাম বাড়তি দরে বিক্রি করতে পেরে অনেকটা সন্তোষ প্রকাশ করছেন তারা।
চেরাগী ও ঢাকায় ফুল সরবরাহকারী যশোরের গদখালী এলাকার ফুল চাষি মো. আদুল জলিল মণ্ডলের সঙ্গে ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমি ৫ বছর ধরে ফুল ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত। আমার ১২ শতক জমিতে ফুল চাষ হয়। ভাইরাসের কারণে এ বছর ফুলের চাষ কম হলেও সর্বোচ্চ দামে ফুল বিক্রি করেছি।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের থেকে কিনে নিয়ে চট্টগ্রাম কিংবা ঢাকায় পৌঁছাতে প্রতি গোলাপে এবছর পড়েছে ১৮ থেকে ২০ টাকা। এখন যদি তারা ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করে তাহলে সে দায় তাদের।’
যশোরের পানিসারা এলাকার ফুলচাষি মো. আলমগীর বলেন, অন্যান্য বছর পাইকারি পর্যায়ে লাল গোলাপ ফুল বিক্রি করি ৫ থেকে ৬ টাকা। এবছর তা বিক্রি করছি ২০ থেকে ২৩ টাকা। চায়না গোলাপ ৪৫ টাকা।
বিশ্ব ভালোবাসা দিবস : প্রতি পিস গোলাপ ১২০ টাকা
বেড়েছে ফুলের দাম