বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী
সুপ্রভাত ডেস্ক
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিশ্বনেতারা বক্তব্য রেখেছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে শুগা, কানাডার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো , ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ।
চীনা স্বপ্নের সঙ্গে সোনার বাংলাকে বাঁধতে চান শি
চীন নিজেকে নবায়িত করার যে স্বপ্ন দেখছে তার সঙ্গে সোনার বাংলার স্বপ্নের মেলবন্ধন গড়ার কথা বললেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। বুধবার বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজনে ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, এখন দুদেশই পুনরুজ্জীবন ও উন্নয়নের খুব গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে। চীনের বৃহৎ জাতীয় নবায়নের স্বপ্ন জোরালোভাবে ‘সোনার বাংলা’ স্বপ্নের সঙ্গে মেলবন্ধন গড়তে পারে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে তিনি বলেন, তিনি গোটা জীবন দেশ ও জনগণের জন্য উৎসর্গ করেছিলেন। এখনও বাংলাদেশের মানুষ তাই শেখ মুজিবকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। যে সোনার বাংলার স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন, তা এখনও বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষকে জাতীয় পুনরুজ্জীবনের দিকে ধাবিত করছে। শেখ মুজিবকে চীনের ’পুরনো ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ হিসেবে বর্ণনা করে প্রেসিডেন্ট শি বলেন, ১৯৫২ ও ১৯৫৭ সালে দুবার চীন সফরে তিনি চেয়ারম্যান মাও সে তুং ও প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাইসহ জ্যেষ্ঠ চীনা নেতাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করেছিলেন। একটি চীনা প্রবাদে আছে ‘পানি পানের সময় কূপ খননকারীকে ভুলো না’, পূর্বপ্রজন্মের নেতারা কী করেছিলেন তা আমাদের সবসময় মনে রাখা উচিত।
চীন-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের চাবিকাঠি পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে দেওয়া উচিত মন্তব্য করে শি বলেন, পাঁচ দশকে বাংলাদেশ স্বাধীনতার সময়ের দৃঢ় বিশ্বাসে অটল থেকেছে এবং একের পর এক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে গেছে। জাতীয় অগ্রগতিতে করেছে উন্নতি ও সমৃদ্ধি।
গত কয়েক বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নতি ও প্রবৃদ্ধির প্রথম সারিতে উঠে এসেছে মন্তব্য করেন দ্বিতীয় শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ চীনের প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ৬ শতাংশের উপরে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার মাধ্যমে বাংলাদেশ জনগণের জীবনমান ভালো করার পাশাপাশি বৈশ্বিক দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হিসাবে চীন বাংলাদেশের অগ্রগতিতে খুব খুশি।
চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, চীন ও বাংলাদেশ সব সময় বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী ছিল, প্রাচীন সিল্ক রোড শত শত বছর ধরে যার সাক্ষী। কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪৬ বছরে আমরা নিজেদের পারস্পরিক শ্রদ্ধার সঙ্গে এবং সমান হিসেবে বিবেচনা করেছি। আমরা একে অপরকে সহযোগিতা করেছি এবং একসঙ্গে এগিয়েছি।
২০১৬ সালে বাংলাদেশ সফরের কথা উল্লেখ করে শি জিনপিং বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আমি আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে ’কৌশলগত সহযোগিতার’ পর্যায়ে নিয়ে গেছি। বাংলাদেশ প্রথম দক্ষিণ এশীয় দেশ, যেটি প্রথম ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ সহযোগিতার আন্তঃসরকার চুক্তিতে সই করেছে। আমাদের সহযোগিতা উপকৃত করছে দুদেশের জনগণকে। পদ্মা সেতু ও বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণে চীন সরকারের সহযোগিতা এবং চীনে প্রায় ৯৭ শতাংশ বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে আমি বেশ গুরুত্ব দিই। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মিলে আমাদের উন্নয়ন কৌশল, ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ সহযোগিতা এবং কৌশলগত অংশীদারিত্ব নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাব।’
‘জাপানের পতাকা মাথায় রেখে বাংলাদেশের পতাকা চিন্তা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু’
‘বাংলাদেশ ও জাপানের পতাকার সঙ্গে মিল রয়েছে। জাপানের পতাকাকে মাথায় রেখে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের পতাকা চিন্তা করেছিলেন’ বলে মনে করেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে শুগা।
এক ভিডিওবার্তায় শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মনে করতেন জাপানের উন্নয়ন মডেল অনুসরণযোগ্য।’ জাপানের জনগণের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, দুদেশের সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্য তিনি দৃঢ় উদ্যোগ নিয়েছিলেন। বর্তমান সম্পর্কের বিষয়ে জাপানি প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে জাপানি শিশুরা ত্রাণ সংগ্রহের জন্য যেমন অত্যন্ত পরিশ্রম করেছে, তেমনি ১০ বছর আগে যখন জাপানে একটি বড় ভূমিকম্প হয় তখন বাংলাদেশ ত্রাণ দিয়ে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। তিনি বলেন, ‘বিশ্বাস, সহযোগিতা ও উভয়ের জন্য মঙ্গলজনক এই তিনটি জিনিষের ওপর ভিত্তি করে আমাদের প্রথাগত সম্পর্ক এখন আরও দৃঢ় ও মজবুত হয়েছে।’ স্বাধীনতার সময় থেকে সোনার বাংলা অর্জনে জাপান সহায়তা দিচ্ছে জানিয়ে ইয়োশিহিদে শুগা বলেন, যমুনা সেতু, ১০০ টাকার ব্যাংক নোট, সোনারগাঁও হোটেল স্বাধীনতার পরপরই তৈরি হয়। বর্তমান সময়ে ঢাকায় রোড নেটওয়ার্কসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে জাপান সহায়তা দিচ্ছে। এছাড়া ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরি করছে আঞ্চলিক কানেকটিভিটি বৃদ্ধির জন্য। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ভারত উপমহাদেশের মাঝখানে বাংলাদেশ অবস্থিত হওয়ায় এবং সাম্প্রতিক উন্নতির কারণে জাপানের কোম্পানিগুলোর বাংলাদেশের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে বলে তিনি জানান। বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ক সামনের দিনগুলোতে আরও বৃদ্ধি পাবে আশা করে শুগা বলেন, এই অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা এখন আমাদের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য আইনের শাসন ও কানেকটিভিটির ওপর ভিত্তি করে একটি স্বাধীন ও উন্মুক্ত ব্যবস্থা তৈরি করা সম্ভব হলে এটি শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি বয়ে আনবে। স্বাধীন ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করবে জাপান।
বঙ্গবন্ধুর ভিশন বাস্তবে পরিণত হয়েছে: ট্রুডো
১৯৮৩ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ট্রুডোর সঙ্গে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন তার ছেলে ও কানাডার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। ওই বাংলাদেশের সঙ্গে নতুন বাংলাদেশকে মেলাতে পরছেন না তিনি। এক ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, ‘আমি যখন আমার বাবার সঙ্গে বাংলাদেশ সফর করেছিলাম ওই সময় থেকে বাংলাদেশ অনেক পরিবর্তন হয়েছে। গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন করেছে। এই সময়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পেয়েছে, দারিদ্রতা কমেছে, শিক্ষার হার বেড়েছে এবং স্বাস্থ্য সেবার প্রসার ঘটেছে। এরফলে দেশের জনগণের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে।’
একজন ব্যক্তির কারণে ইতিহাসে দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তন সম্ভব সেটি শেখ মুজিবুর রহমান করে দেখিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমানের ভিশন বাস্তবে পরিণত হয়েছে কারণ তিনি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতেন মানুষকে।’
ট্রুডো বলেন, ‘আজকে আমরা উৎসব করতে পারছি শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক একটি দেশ গড়ার ভিশনের কারণে। এটি সম্ভব হয়েছে এদেশের মানুষের প্রতি তার ভালোবাসার জন্য। আমার পিতার সঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমানের দৃঢ় সম্পর্ক ছিল। ওই সময় থেকে দুদেশ দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রাখছে।’
তিনি বলেন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আমূল রূপান্তর হয়েছে এবং এই পথযাত্রায় কানাডা অংশীদার হিসাবে আছে। আমরা বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিতে অবদান রেখেছি এবং নারী অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন উন্নয়নে সহায়তা করছি। শিশুস্বাস্থ্য ও শিক্ষা, যুব সম্প্রদায়ের জন্য দক্ষতা বৃদ্ধিসহ অন্যান্য কাজে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কানাডা।
বঙ্গবন্ধু ভারতীয়দের কাছেও বীর : মোদি
বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০১তম জন্মবার্ষিকীতে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, সকল ভারতীয়র কাছেও বঙ্গবন্ধু একজন ‘বীর’। গতকাল বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের সকালে বাংলায় টুইট করে মোদি লিখেছেন, ‘মানবাধিকার ও স্বাধীনতার রক্ষক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে তাঁর প্রতি আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা। সকল ভারতীয় নাগরিকের কাছেও তিনি একজন বীর হিসেবে গণ্য হন।’ খবর : বিডিনিউজের।
আলাদাভাবে ইংরেজিতেও একই টুইট করেছেন মোদি। মানবাধিকার ও স্বাধীনতার রক্ষক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে তাঁর প্রতি আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা। সকল ভারতীয় নাগরিকের কাছেও তিনি একজন বীর হিসেবে গণ্য হন। এই মাসের শেষের দিকে ঐতিহাসিক মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ সফর করতে পারা আমার জন্য সম্মানের বিষয়। খবর : বিডিনিউজের।
স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। কালক্রমে তার হাত ধরেই বিশ্ব মানচিত্রে নতুন দেশ হিসেবে স্থান করে নেয় বাংলাদেশ। বেঁচে থাকলে এই দিনে বঙ্গবন্ধুর বয়স হত ১০১ বছর। আর ঠিক নয় দিন বাদেই ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ দুই বিশেষ উপলক্ষ ঘিরে গতকাল শুরু হয়েছে জাতীয় পর্যায়ে দশ দিনের অনুষ্ঠানমালা, যা শেষ হবে ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির দিনে।
জাতীয় প্যারেন্ড গ্রাউন্ডে ১০ দিনের এই অনুষ্ঠানমালার পাঁচ দিনের আয়োজনে যোগ দেবেন প্রতিবেশী পাঁচ দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান; যার মধ্যে নরেন্দ্র মোদিও আছেন।
এই সফর নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে মোদি টুইটে লিখেছেন, ‘এই মাসের শেষের দিকে ঐতিহাসিক মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ সফর করতে পারা আমার জন্য সম্মানের বিষয়।’
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে ২৬-২৭ মার্চ বাংলাদেশ সফর করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সফরের প্রথম দিন রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে। এরপর তিনি সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করবেন।
একই দিন বিকেলে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ‘গেস্ট অব অনার’ হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী।
সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন মোদি। সফরের দ্বিতীয় দিন ২৭ মার্চ সকালে তিনি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ পরিদর্শন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
একই দিনে সাতক্ষীরা এবং গোপালগঞ্জে দুটি মন্দির পরিদর্শন করে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত পরিসরে মতবিনিময় করবেন মোদি। ২৭ মার্চ বিকেলে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একান্ত বৈঠক ছাড়াও প্রতিনিধি পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে।
বৈঠকে দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে কিছু সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর এবং কয়েকটি প্রকল্প উদ্বোধনের সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। পরে ২৭ মার্চ রাতেই তিনি দিল্লীর উদ্দ্যেশ্যে ঢাকা ছেড়ে যাবেন।
বাংলাদেশকে স্বতন্ত্র পরিচয় দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু: মোহাম্মদ সলিহ
বন্ধুর পথ পেরিয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে উপনীত হওয়া বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং জনগণের জীবনমানের উন্নয়নের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ। তিনি বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন বাংলাদেশকে স্বতন্ত্র একটি পরিচয় দান করেছে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম তিনি অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে দশ দিনের আয়োজনের সূচনায় বুধবার জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করছিলেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়নের গতি উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং জনগণের কঠোর পরিশ্রম দেশকে দ্রুত উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।’ বাংলাদেশের এই উদযাপনে যোগ দিতে তিন দিনের সফরে বুধবার সকালে বাংলাদেশে পৌঁছান মোহাম্মদ সলিহ। ফার্স্ট লেডি ফাজনা আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সম্মানিত অতিথি ইব্রাহিম সলিহ বলেন, ‘এই মহতী আয়োজনে আমন্ত্রিত হয়ে আমি সম্মানিত বোধ করছি। শেখ মুজিবুর রহমান প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। তার জীবন বাংলাদেশকে স্বতন্ত্র একটি পরিচয় দান করেছে। ‘সারাজীবন তিনি গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছেন। তার ছয় দফা বাংলাদেশের স্বাধীনতার ভিত্তি স্থাপন করেছিল। তার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ কার্যত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা। তার এই ভাষণ ইউনেস্কোর ডকুমেন্ট হেরিটেজের অংশ হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়েছে।’ করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে বাংলাদেশ যে সাহায্য মালদ্বীপকে করেছে, সে কথা তুলে ধরে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম সলিহ বলেন, ‘মহামারীর মধ্যে সারা বিশ্ব একটি বিশেষ অবস্থার মধ্যে যাচ্ছে। মালদ্বীপ বাংলাদেশের জনগণের বন্ধুত্বের জন্য কৃতজ্ঞ। এই বন্ধুত্ব মহামারি সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের সাহায্য করছে। ‘আমরা বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই খাদ্য, পিপিই এবং স্বাস্থ্য সামগ্রী দিয়ে সাহায্য করার জন্য। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার বিমান বাহিনীর একটি হেলথ কেয়ার প্রফেশনাল টিম পাঠিয়েছিল। মালদ্বীপ আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। এই সহযোগিতা দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের একটি নিদর্শন।’
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দ্বীপ দেশ মালদ্বীপকে যে সঙ্কট মোকাবেলা করতে হচ্ছে, সে কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন তিনি। ইব্রাহিম সলিহ বলেন, ‘দুই দেশের সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার। মানবসম্পদ উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা পরস্পরের ওপর নির্ভর করি। জলবায়ু পরিবর্তন জনিত সঙ্কট দুই দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত হুমকি মোকাবলোয় আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে একত্রে কাজ করতে চাই। ‘আমি নিশ্চিত, দুই দেশের বিদ্যামান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে। মালদ্বীপ সবসময় বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়। মালদ্বীপে বিদেশি শ্রমিক পাঠানো দেশ হিসেবে বাংলাদেশ অন্যতম। আমার দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে তাদের অবদান গুরুত্বপূর্ণ।’
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমার সরকার বিদেশি শ্রমিকদের সব ধরনের অধিকার রক্ষার নিশ্চয়তা দিচ্ছে। মালদ্বীপের সকল বিদেশি শ্রমিককে বিনামূল্যে কোভিড-১৯ এর টিকা দেওয়ার বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখানে নাগরিক ও অনাগরিক কারও মধ্যে কোনো বৈষম্য করা হবে না।’ রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মালদ্বীপ সফরেরও আমন্ত্রণ জানান ইব্রাহিম সলিহ।