সুপ্রভাত ডেস্ক »
জিরাফ পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা প্রাণী। নিজেদের লম্বা গলা এবং পরিচিত বাদামি দাগগুলোর জন্য জিরাফ কাটুর্ন, শিশুদের বই এবং খেলনার তাকে স্থান করে নিয়েছে।
কিন্তু আফ্রিকার সাভানায় জিরাফের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে যাচ্ছে। এদের সংখ্যা এতটাই কমেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র সরকার এই লম্বাগলার প্রাণীগুলোকে তাদের বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফিশ অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ সার্ভিস গত বুধবার (২০ নভেম্বর) একটি প্রস্তাবনা ঘোষণা করেছে। প্রস্তাবনায় বিপন্ন প্রজাতি আইন অনুযায়ী, জিরাফের একটি বড় অংশকে রক্ষা করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো প্রাণীটি এই আইনের আওতায় সুরক্ষা পাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা আশা করছেন, এই পদক্ষেপটি জিরাফ শিকার বন্ধ করতে সহায়তা করবে। মূলত গালিচা, গয়না এবং জুতা তৈরিতে জিরাফের দেহের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করার ফলে প্রাণীটির সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। নতুন এই পদক্ষেপের ফলে এসব পণ্য আমদানি কমে আসবে এবং জিরাফ হত্যা বন্ধ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ফিশ অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ সার্ভিসের পরিচালক মার্থা উইলিয়ামস এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ফেডারেল সুরক্ষা জিরাফকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে। এটি একটি বিপন্ন প্রজাতিকে বাঁচাতে, জীববৈচিত্র্যকে উৎসাহিত করতে, পরিবেশের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে, বন্যপ্রাণী পাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং টেকসই অর্থনৈতিক নিয়মগুলো প্রচার করতে সাহায্য করবে।’
জিরাফ ১৮ ফুটেরও বেশি লম্বা হতে পারে এবং প্রাচীনকাল থেকেই প্রাণীগুলোকে নিয়ে অনেক রহস্য তৈরি হয়েছে। প্রাচীনকালে আফ্রিকানরা তাদের বিশাল পেট্রোগ্লিফে [খোদাই করা শিলা] জিরাফের ছবি এঁকেছে। প্রাচীন রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার একটি জিরাফ রোমে নিয়ে এসেছিলেন, যেটিকে তার দেশবাসী অর্ধেক উট এবং অর্ধেক চিতাবাঘ মনে করেছিল। অভিযাত্রী ঝেং হে আরেকটি জিরাফ চীন নিয়ে আসেন, যা তখনকার চীনা সম্রাটকে আকৃষ্ট করেছিল।
আজকের বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন,বিবর্তনের ফলে জিরাফের গলা (এবং জিভ) এরকম দীর্ঘ হয়েছে; যাতে তারা অন্যান্য তৃণভোজী প্রাণীর নাগালের বাইরে গাছের পাতা, ফুল এবং ফল খেতে পারে।
আফ্রিকার বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশ যেমন, মরুভূমি, বনাঞ্চল ও সাভানায় জিরাফ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে আজও প্রাণীগুলো রহস্যময়, বিশেষত গবেষকরা এখনও এই বিষয়ে আলোচনা করছেন, জিরাফ একটি প্রজাতি নাকি একাধিক প্রজাতি। তবে একটি বিষয় তারা একমত, জিরাফ বিপদে রয়েছে।
১৯৮৫ সালে ১ লাখ ৫০ হাজারের বেশি জিরাফ ছিল, যা ২০১৫ সালে মাত্র ৯৮ হাজারে নেমে আসে। প্রধানত দ্রুত নগরায়ণ, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তৈরি হওয়া খরা, স্থানীয় শিকার এবং বৈদেশিক বাণিজ্যের কারণে বাসস্থান হারানোর ফলে জিরাফের সংখ্যা কমতে থাকে।
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) ২০১৮ সাল থেকে কিছু জিরাফের উপপ্রজাতিকে ‘মহাবিপন্ন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
এখন, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা উত্তরাঞ্চলের জিরাফের ৩টি উপপ্রজাতি— পশ্চিম আফ্রিকান, কোরডোফান এবং নুবিয়ান জিরাফকে বিপন্ন ঘোষণা করার প্রস্তাব দিয়েছে। প্রাণীগুলোর সংখ্যা ১৯৮৫ সালের ২৬ হাজার থেকে থেকে ৭৭ শতাংশ কমে ৬ হাজারে নেমেছে। জিরাফগুলো প্রধানত ক্যামেরুন, চাদ, নিগার এবং উগান্ডায় বাস করে।
এছাড়াও, পূর্ব আফ্রিকার দুটি উপপ্রজাতি— রেটিকুলেটেড এবং মাসাই জিরাফকে ‘হুমকির মুখে থাকা প্রজাতি’ হিসেবে চিহ্নিত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে জিরাফের দেহাংশ এবং পণ্যের বড় বাজার ছিল। পরিবেশ সংগঠনগুলোর মতে, সেখানে এক দশকের মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার জিরাফের দেহাংশ বা সেগুলো থেকে তৈরি করা পণ্য আমদানি করা হয়েছে।
বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি, এই প্রস্তাব আফ্রিকার দেশগুলোকে জিরাফ সংরক্ষণে নতুন তহবিল প্রদান করবে। যুক্তরাষ্ট্রের ফিশ অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ সার্ভিস ফেব্রুয়ারির ১৯ তারিখ পর্যন্ত এই প্রস্তাবের জন্য মতামত গ্রহণ করবে এবং আশা করা হচ্ছে, এক বছরের মধ্যে এটি চূড়ান্ত হবে। সূত্র: দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট