করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশে লকডাউন শুরুর সময় থেকে মুদির দোকান হতে ওষুধের দোকান সবখানে প্রতিযোগিতা করে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ানো হয়েছে। সরকারি ছুটি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে একদল মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী বিপুল পরিমাণে কিনতে থাকে । এজন্য তারা একপ্রকার হুমড়ি খেয়ে পড়ে দোকানগুলোতে। প্রয়োজনের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি পণ্য কিনে অনেকে ঘরে মজুদ করে রাখে ।
এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে সরবরাহ ঠিক থাকা সত্ত্বেও অনেক পণ্যের দাম বাড়ায় ব্যবসায়ীরা। দাম বাড়ানোর জন্য অনেক ব্যবসায়ী বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে। একইভাবে সংকট সৃষ্টি ও মূল্য বৃদ্ধি করা হয় ওষুধেরও। সুযোগ বুঝে চাহিদা বেড়েছে এমন ওষুধের দাম বাড়িয়ে দেয় ওষুধ দোকানিরা। ক্রেতারা সাধারণত ওষুধের দোকানে দরদাম করে না এবং অনেকে ওষুধের দামও মনে রাখতে পারে না। এই সুযোগে দোকানিরা একেক সময় একেক দাম আদায় করে ওষুধের।
এছাড়া সবচেয়ে মারাত্মক যা হচ্ছে তা হলো, শুধু মূল্যবৃদ্ধি করেই ক্ষান্ত হয়নি, ভেজাল নকল মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধে সয়লাব করে ফেলেছে বাজার। করোনাভাইরাসের কারণে যেসব ওষুধের দাম বেড়েছে সেসব ওষুধ নকল হচ্ছে। এই সুযোগে নিম্নমানের ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধও ক্রেতাদের গছিয়ে দেয়া হচ্ছে।
সুপ্রভাত বাংলাদেশে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, তিন হাজার টাকা দামের অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে ১২ হাজার টাকায়। কভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত রোগীদের অবস্থা জটিল হলে কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন দিতে হয।় এ কারণে বিভিন্ন হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডারের (যাদের কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন দেওয়ার সুযোগ নেই) চাহিদা বেড়েছে। অন্যদিকে, অনেকে বাড়িতে থেকে অক্সিজেন দেওয়ার উদ্দেশ্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে ঘরে দেখে নিচ্ছেন। এ কারণে সিলিন্ডারের চাহিদা বেড়েছে এবং এই সুযোগে ব্যবসায়ীরা দামও বাড়িয়ে দিয়েছে।
কভিড-১৯ রোগের ভ্যাকসিন ও ওষুধ এখনো আবিস্কৃত হয়নি। কিন্তু কিছু কিছু ওষুধে এই রোগ চিকিৎসায় ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে বলে কিছু চিকিৎসক জানিয়েছেন। যেসব ওষুধের নাম উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এসব ওষুধ সেবনে ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে সাথে সাথে সে সব ওষুধের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে ওষুধ দোকানিরা। রাতারাতি ওষুধগুলোর কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে এবং এভাবে ১৭০ টাকার ওষুধ ১৯০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রির সংবাদ পাওয়া গেছে।
বর্তমানে মহামারিতে পর্যুদস্ত বিশ্ব। তার সঙ্গে বাংলাদেশেও এখন প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। মানুষ বড় আতঙ্কের মধ্যে দিনযাপন করছে। কর্মহীন অনেক মানুষ দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। এ পরিস্থিতিতে যারা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সহ জীবনরক্ষাকারী ওষুধের দাম বাড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। পুলিশ ও প্রশাসন মহামারি নিয়ে ব্যস্ত থাকায় সুযোগ নিচ্ছে এসব লোভী ব্যক্তিরা। মহামারিতে যারা অযথা দাম বাড়িয়ে মানুষকে দুর্দশায় ফেলছে তারা গুরুতর অপরাধ করছে। ফলে অতি দ্রুত তাদের আইনের মুখোমুখি করা দরকার ।