বিপজ্জনক সড়ক : মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের গত ১২ মাসের তথ্য বিশ্লেষণ করে বলছে, দেশে সড়কপথে এক বছরে ৬ হাজার ৪২০ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৪৮ শতাংশই নারী-শিশু ও পথচারী। এ হিসাব গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সংস্থাটির পরিসংখ্যান বলছে, সড়কে বেশি মৃত্যু হয়েছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। ওই ১২ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত মানুষের সংখ্যা ১২ হাজার ৫২৮। ১২ মাসে মোট সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ৬ হাজার ৪৩৭।
মোট নিহত ব্যক্তির মধ্যে নারী ৯০৮, শিশু ৮৭১ এবং পথচারী ১ হাজার ৩২২ জন—যা মোট মৃত্যুর ৪৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে যানবাহনের চালক ও তাঁদের সহকারীর সংখ্যা ৮৫৫। সব মিলিয়ে এই চারটি ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণি (নারী, শিশু, পথচারী এবং চালক-সহকারী) মোট নিহতের প্রায় ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ।

সামগ্রিক পরিসংখ্যান বলছে, একক বাহন হিসেবে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বেশি প্রাণহানি ঘটছে। ওই ১২ মাসে দেশে মোট ২ হাজার ৬৯৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ২ হাজার ৪৪৮ জন, যা সড়ক দুর্ঘটনায় মোট মৃত্যুর ৩৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। অর্থাৎ সড়কে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে প্রায় দুজনের মৃত্যু ঘটছে মোটরসাইকেলসংক্রান্ত দুর্ঘটনায়। এমন দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে ‘তরুণ-যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো’কে দায়ী করা হচ্ছে।
ফাউন্ডেশনের তথ্য বিশ্লেষণে দুর্ঘটনার কিছু নির্দিষ্ট স্থান ও ধরন (যেসব কারণে দুর্ঘটনা ঘটে) উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, দুর্ঘটনার ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ঘটে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কগুলোতে। ফাউন্ডেশন বলছে, অতিরিক্ত গতি, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহনের অনিয়ন্ত্রিত চলাচল, ত্রুটিপূর্ণ সড়কনকশা এবং ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ—এসব দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।
দেশের সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে ‘অতিরিক্ত গতি’কে দায়ী করেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। আর সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে চালক নিয়ন্ত্রণ হারানোর কারণে। ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন মাসের প্রতিবেদনগুলোতে এই হার উল্লেখ ছিল ৪০ থেকে ৫০ শতাংশের কাছাকাছি।

দেশে সড়কে মৃত্যুর হার আতঙ্কজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ বিষয়ে বিশেজ্ঞরা বলেছেন, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যু বেশি হওয়ায় এই যানের চলাচল নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি সড়কে মোটরসাইকেল চলাচলের জন্য আলাদা লেন করতে হবে। একই সঙ্গে পথচারীদের জন্য আলাদা জায়গা রাখতে হবে। তারা বলছেন, শহরে ফুটপাতগুলোয় কিছুটা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হলেও শহরের বাইরে তা কঠিন। সে জন্য সড়ক-মহাসড়কের পাশে থাকা বাজারগুলোর বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে হবে। সড়ক-মহাসড়কের পাশের বাজারগুলোও অনেক ক্ষেত্রে সড়ক দুর্ঘটনার বড় কারণ। এ ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে অবকাঠামোগত উন্নয়নে মানবিক ও টেকসই ব্যবস্থার ওপর জোর দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।