নিজস্ব প্রতিবেদক »
আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে পবিত্র মাহে রমজান। এ রমজানে নগরবাসী নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি আর সড়ক চলাচলে স্বস্তি চায়। বিদ্যুৎ ও গ্যাসে সরবরাহ ঠিক থাকায় নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ রাখার আশ্বাস মিললেও পানি নিয়ে সংকটের আভাস দিয়েছেন সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তবে সংস্থাটি নগরবাসীকে সুপেয় পানি দেওয়ার বিষয়টি আন্তরিকভাবে বিবেচনা করে প্রস্তুত রাখবে মোবাইল টিম। অন্যদিকে জরুরি খাদ্য ও পণ্যবাহী গাড়ি ছাড়া অন্য সব মালবাহী গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যানজট নিরসনের আশ্বাস দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সাম্প্রতিক সময়ে গ্যাস সংযোগে চাপ না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে রমজানের প্রস্তুতি নিয়ে জানতে চাওয়া হয় কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) বিপণন উত্তর ডিবিশন ও দক্ষিণ ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপকের কাছে।
বিপণন উত্তর ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. শফিউল আজম খান বলেন, ‘আমাদের এখন এলএনজি বেশি আসছে। সুতরাং পুরো রমজানে আমরা ঠিকভাবে গ্যাস সরবরাহ করতে পারবো বলে আশা করছি। সম্প্রতি গ্যাসের চাপ নিয়ে কিছু সমস্যা হয়েছিলো। কিন্তু রমজানে এমন কোনো সমস্যা হবে না।’
একই সুরে বিপণন দক্ষিণ ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আমিনুর ইসলাম বলেন, ‘ভাল্ক চালালে দৈনিক গ্যাস লাগে ৩৬০ মিলিয়ন ঘনফুট। আর ভাল্ক না চালালে দৈনিক চাহিদা থাকে ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। এখন আমাদের সাপ্লাই ঠিক আছে। তাই নগরবাসীর চাহিদা মেটাতে আমরা সক্ষম হব বলে আশা করছি।’
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘গরম পড়ার পর থেকে আমাদের চাহিদা কিছুটা বেড়েছে। প্রায় ১২ ’শ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হচ্ছিল। তবে গত দুই-তিন দিন ধরে আরও কমে গিয়ে ১ হাজার ৫০ মেগাওয়াটে দাঁড়িয়েছে। এরপরও বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এর কারণ হচ্ছে অনেকদিন শুষ্ক থাকা ইনসুলেটরে হঠাৎ বৃষ্টি পড়ায় সেখানে শর্ট হয়ে গিয়েছিলো। তখন আমাদের নির্দিষ্ট সুইচগুলো অফ করে আবার অন করতে হয়েছে। তবে এটা সাময়িক সময়ের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়। এ সমস্যা বৃষ্টি-বাতাস হলে হতে পারে।
লোডশেডিংয়ের কোনো সম্ভাবনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এবার লোডশেডিংয়ের কোনো সম্ভাবনা নেই। চাহিদা অনুযায়ী এখন উৎপাদন ঠিক আছে। তাই সরবরাহও ঠিক থাকবে। এরপরও যদি কোনো কারণে উৎপাদন চাহিদা অনুযায়ী না হয় সেক্ষেত্রে আমরা ইফতার ও সেহেরির সময়কে বিবেচনায় রেখে বিদ্যুতের ব্যবহার নিশ্চিত করবো। আশা করি, এবার সেরকম সমস্যা হবে না।’
সুপেয় পানি সরবরাহ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, আমাদের তো সবকিছুই ঠিক ছিলো। কিন্তু হঠাৎ করে একটা সমস্যায় পড়ে গেলাম। গত বছর ঠিকভাবে বৃষ্টি হলেও এ সমস্যাটা হতো না। বৃষ্টি হলে কাপ্তাইয়ের পানি পেতাম। কিন্তু এখন পানিতে লবণ চলে আসায় আমাদের জোয়ারের সময় সরবরাহ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। বন্ধ রেখে চালু করতে গেলে পানির প্রেশার কমে যায়। সুতরাং পানি সরবরাহে এবার হয়তো সুখবর দেওয়া যাচ্ছে না। তবে আমরা সার্বক্ষণিক মোবাইল টিম রাখছি। গ্রাহক চাওয়ার সাথে সাথেই গাড়ি করে পানি ওই এলাকায় চলে যাবে।’
অন্যদিকে নগরজুড়ে যানজট নিরসন প্রসঙ্গে কথা হয় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ফয়সল মাহমুদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রমজানে নগরবাসীকে যানজটে যেন কোনো দুর্ভোগ পোহাতে না হয়, এ নিয়ে আমরা ১১টি নির্দেশনা দিয়েছে। যানজট নিরসনে অতিরিক্ত পুলিশ থাকবে। এছাড়া মালবাহী গাড়ি চলাচল সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এছাড়াও বন্দর এলাকায় লং ভেহিক্যাল, কনটেইনার, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ রাখা হবে। পাশাপাশি রমজান উপলক্ষে সড়কে খোঁড়াখুড়ি বন্ধ রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। আশা করছি যানজটমুক্ত সড়কে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবেন নগরবাসীরা।’