নিজস্ব প্রতিবেদক »
পরিবেশের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে ও প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধ করতে এবার নতুন উদ্যোগ নিয়েছে দেশের জনপ্রিয় মানবিক সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন।
সংগঠনটির ‘প্লাস্টিকের বিনিময়ে বাজার’ নামে এমন এক পাইলট প্রকল্পে এক কেজি প্লাস্টিক দিলে মিলছে ডিম, মাছ, মুরগি, চাল, ডালসহ ২২ রকমের খাবার ও পোশাক। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে স্টোর সেন্টার চালু করছে সংগটনটি।
গতকাল সোমবার সকালে নগরীর কর্ণফুলী নদীরপাড় বাকলিয়া স্টেডিয়াম এলাকায় সংগঠনটির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
প্লাস্টিক সংগ্রহে বিদ্যানন্দের স্থাপিত সেন্টারগুলো থেকে চাল, ডাল, মাছ, মুরগি, ডিম, তেল, চিনি ও লবণসহ ২২ ধরনের নিত্যপণ্য সংগ্রহ করা যাবে প্লাস্টিকের বিনিময়ে। নেওয়া যাবে শিক্ষাসামগ্রী, কাপড়, স্যানিটারি প্যাডও। এর মধ্যে এক কেজি প্লাস্টিকের বিনিময়ে ১ কেজি চাল, ১ কেজি লবণ, ১টি টিশার্ট, ৬টি ডিম, ১ প্যাকেট বিস্কুট, ৪টি নুডলসের যে কোনো একটি নিতে পারবেন। একইভাবে ২ কেজি প্লাস্টিকের বিনিময়ে ১ কেজি মসুর ডাল বা ১ কেজি ছোলা নিতে পারবেন। ৩ কেজি প্লাস্টিকের বিনিময়ে ২ কেজি আটা, ১ কেজি চিনির যে কোনো একটি নেওয়া যাবে। ৪ কেজি প্লাস্টিকের বিনিময়ে ১ লিটার সয়াবিন, ১টি মাছ অথবা ১টি মুরগির যে কোনো একটি নেওয়া যাবে।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন জানান, পাইলট প্রকল্পটির মেয়াদ এক বছর। প্রকল্পের অধীনে নগরীর পতেঙ্গা ও হালিশহরে দুটি স্থায়ী স্টোর চালু থাকবে। এছাড়া নগরীর ৫০টি ভ্রাম্যমাণ বাজার ক্যাম্প করা হবে। আয়োজকরা জানান, প্রকল্পের প্রথম দিনেই ৫ মেট্রিক টন পরিত্যক্ত প্লাস্টিক সংগ্রহ করতে পারছেন তারা। প্রকল্পটির মাধ্যমে ২ লাখ কেজি পরিত্যক্ত প্লাস্টিক রিসাইকেল করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া বাজারে যেখানে প্রতি কেজি পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের দাম ২০ থেকে ২৫ টাকা সেখানে এই প্রকল্পে বিদ্যানন্দ নির্ধারণ করছে ৫০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত। প্রথম দুই বছর ভর্তুকি দিয়ে প্লাস্টিক সংগ্রহ কার্যক্রম পরিচালিতহবে বলে জানান সংগঠনটির কর্মকর্তারা।
সার্বিক সহযোগিতা দেবে চসিক
এছাড়া এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সার্বিক সহযোগিতা দেবে বলে জানায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। সংগঠনটির আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘নদীমাতৃক এই দেশে নদীগুলোকে রক্ষা করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। প্লাস্টিক দূষণ রোধ করে জীববৈচিত্র্যকে রক্ষা করতে হবে। আমাদের সবাইকে সচেতনতার পাশাপাশি এগিয়ে আসতে হবে। বিদ্যানন্দের এমন উদ্যোগ প্লাস্টিক দূষণ রোধে ভূমিকা রাখবে। চসিকের পক্ষ থেকে এ ধরনের মানবিক কাজে সার্বিক সহযোগিতা থাকবে।’
বিদ্যানন্দের বোর্ড সদস্য মো. জামাল উদ্দিন বলেন, ‘প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা দিন দিন বেড়েইে চলছে। আমাদের অবস্থান থেকে পরিবেশ দূষণ রোধে সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি জনসচেতনতা ও জনসম্পৃক্ততা আমরা কামনা করি। তাই মানবিক কাজে মানুষদের সম্পৃক্ত করতেই বিদ্যানন্দ প্লাস্টিক এক্সেঞ্জ স্টোর চালু করছি ।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম বছর আমরা প্রতিকেজি প্লাস্টিকে ৩০ থেকে ৪০ টাকা ভর্তুকি দিচ্ছি। ২ লাখ কেজি প্লাস্টিক রিসাইকেল করতে আমরা পণ্য দিচ্ছি ১ কোটি ২০ লাখ টাকার। অন্যদিকে প্লাস্টিক বিক্রি করা রিসাইকেল কোম্পানি থেকে পাবো ৬০ লাখ টাকা। একইভাবে দ্বিতীয় বছর ভতুর্কি কমবে ৫০ শতাংশ এবং তৃতীয় বছরে গিয়ে একই পরিমাণ প্লাস্টিক রিসাইকেল করতে আমাদের কোন ভর্তুকিই প্রয়োজন হবেনা।’
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) তথ্যমতে, ২০২৩ সালে দেশের উপকূলীয় নদনদীগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য জমা হয় কর্ণফুলী নদীতে। নগরীর ব্যবহৃত বজ্য ৪০ শতাংশ প্লাস্টিকের ঠাঁই হয় কর্ণফুলী নদীতে। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) এর সমীক্ষা মতে, চট্টগ্রামে প্রতিদিন ৩ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য উৎপাদন হয়। এর মধ্যে ২৫০ টন প্লাস্টিক এবং পলিথিন বর্জ্য। এসব প্লাস্টিক বর্জ্যের ১৫০ মেট্রিক টন বর্জ্য খাল ও নর্দমায় গিয়ে পড়ে। প্লাস্টিক বর্জ্যের কারণে দূষিত হয় কর্ণফুলী নদী।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে সর্বপ্রথম প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে বিদ্যানন্দ চালু করেন ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর’। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের এমন উদ্যোগকে সেন্টমার্টিনের প্লাস্টিককে ‘মুদ্রায়’ রুপান্তর করেন। ফলে একদিকে যেমন দ্বীপ ও সমুদ্র প্লাস্টিক দূষণমুক্ত দ্বীপবাসী পেয়েছে খাবার।