সাধন সরকার :
বন্ধুরা, ওজোন গ্যাস ও ওজোন স্তর সম্পর্কে জানার আগে চলো জেনে আসি, ওজোন কী? সব পদার্থের (আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা আলাদা আলাদা বস্তু) ওজন আছে। পদার্থ ধুলা বা বালির কণার মতো যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন তার ওজন আছে। কোনো বস্তুকে পৃথিবী তার কেন্দ্রের দিকে কত জোরে টানছে তাই হলো বস্তুর ওজন। তবে বন্ধুরা, ওজন আর ওজোন কিন্তু এক নয়।
এবার জানা যাক ওজোন গ্যাস সম্পর্কে। তবে বন্ধুরা, এবার দু’একটি কঠিন কথা কিন্তু! মূলত অক্সিজেনের একটি অণুতে দুটি পরমাণু থাকে। এমনিভাবে অক্সিজেনের তিনটি পরমাণু মিলে ওজোন গঠিত হয়। অক্সিজেনের একটি বিশেষ রূপভেদ হলো ওজোন গ্যাস। ওজোন খুবই একটি সক্রিয় গ্যাস। মানুষ বা যেকোনো প্রাণীর জন্য এটি বিষাক্ত। আমরা যে বিশাল বায়ুর সাগরে বাস করি সেই বায়ুম-লের বিভিন্ন স্তর রয়েছে। বায়ুম-লের একটি স্তর হলো স্ট্রাটোস্ফিয়ার। ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২০ থেকে ৫০ কিলোমিটার ওপরে স্ট্রাস্টোস্ফিয়ারের ওপরিভাগে ওজোনের একটি আবরণ আছে। এটিই ওজোন স্তর। বায়ুম-লের স্ট্রাটোস্ফিয়ারে ওজোন স্তর সুরক্ষামূলক একটি আবরণ তৈরি করে মানুষসহ সমগ্র জীবজগতকে সূর্য থেকে আসা ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মির কবল থেকে প্রতিনিয়ত রক্ষা করে চলেছে। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে ওজোন স্তর ক্ষয়ের সম্পর্ক রয়েছে। তাপমাত্রা বেড়ে গেলে ওজোন স্তরের ক্ষয় বেড়ে যায়।
জীববৈচিত্র্যে ভরা আমাদের এই পৃথিবী। ওজোন স্তর (ঙুড়হব খধুবৎ) এই পৃথিবীর বায়ুম-লের এমন একটি স্তর যেখানে তুলনামূলক বেশিমাত্রায় ওজোন গ্যাস থাকে। বায়ুম-লের ওজোনের প্রায় ৯০ শতাংশ স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত। ওজোন স্তর সূর্য থেকে বিকিরিত হয়ে আসা অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পৃথিবী ও জীবজগতকে রক্ষা করে চলেছে। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির ৯৯ শতাংশ শোষণ করে নেয় এই ওজোন স্তর।
মনুষ্যকারণসহ অন্যান্য কারণেও গ্রিনহাউজ গ্যাসের প্রভাবে দিন দিন ক্ষয়ে যাচ্ছে এই ওজোন স্তর। যার ফলে তৈরি হচ্ছে ওজোন হোল বা গর্ত।
যদি ওজোন স্তরের মাত্রাতিরিক্ত ক্ষয় হতে শুরু করে তাহলে জীবজগতের জন্য ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি সরাসরি পৃথিবীতে চলে আসবে। এটি সমগ্র জীবজগতের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। প্রাণীদের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে। চোখের ছানি, ত্বকের ক্যানসার এবং অন্যান্য নতুন নতুন রোগের উদ্ভব ঘটবে। এই রশ্মি খাদ্যশস্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। উদ্ভিদের পাতার রোগ বৃদ্ধি করবে। ফসলের রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণকে বাড়িয়ে দেবে। তথ্য মতে, পৃথিবীতে এক-পঞ্চমাংশ অন্ধ রোগী ও নব্বই শতাংশ কর্কট রোগের কারণের জন্য দায়ী অতিবেগুনি রশ্মি। আর এত সব রোগ বেশি হয়ে থাকে পৃথিবীর উষ্ণম-লীয় অঞ্চলে। এক কথায়, এই রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাবে প্রাণিজগতের অনেক প্রাণী বিলুপ্ত হবে। যদিও এর জন্য দায়ী পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো। পরিবেশের বিরূপ প্রতিক্রিয়া এবং জলবায়ু পরিবর্তন সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে এই ওজোন স্তর।
এক কথায় বলতে হয়, আমাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম থেকে ওজোন স্তর ধ্বংসকারী বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ উদ্গীরণ হচ্ছে। উদ্ভিদ ও প্রাণিজগতের বাস্তুসংস্থান রক্ষায় ওজোন স্তরের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। উন্নত দেশগুলোতে শিল্পায়ন ও অতিবিলাসী জীবনযাপনের কারণে দিন দিন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে আমাদের এই ছোট্ট পৃথিবী। তাই ওজোন স্তর সংরক্ষণে প্রত্যেক দেশের দায়িত্ব রয়েছে। বিশেষ করে শিল্পোন্নত দেশগুলোকে কার্বন নিঃসরণ কমানোর দিকে নজর দিতে হবে। পৃথিবীর প্রায় ৬০ ভাগ কার্বন নিঃসরণ করে থাকে আমেরিকা, চীন, রাশিয়া, ভারত, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য। ওজোন স্তর রক্ষায় এসব দেশসমূহকে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে এনে বিকল্প জ¦ালানির সন্ধান করতে হবে। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। সূর্যশক্তি, বায়ুশক্তি, পানিশক্তির মতো নবায়নযোগ্য জ¦ালানির ব্যবহারের ওপর জোর দিতে হবে। দৃশ্যমান হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। তাই আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর ও বাসযোগ্য সবুজ পৃথিবী রেখে যেতে হলে ওজোন স্তর রক্ষায় শিল্পোন্নত দেশসমূহকে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে।