নিজস্ব প্রতিবেদক »
রাত পেরুলোই পাহাড়ে শুরু হবে ৩ দিনব্যাপী বৈসাবি উৎসব। এ উৎসবের প্রথম দিনটিকে চাকমা ভাষায় বলা হয় ‘ফুলবিজু’। এ দিন প্রথম ভোরে বিভিন্ন ফুল তোলা হয়। তার মধ্য অন্যতম ‘ভাতজোড়া ফুল’ ‘বিজু ফুল’ বা ‘বিউফুল’। নির্বিচারে পাহাড়ের জঙ্গল কেটে সাফ করায় বিলুপ্তির দিকে চলে যাচ্ছে এই ফুল।এটি ছোটো গুটিগুটি সাদাফুল। শুঁকলে ফুলটির সুগন্ধি টের পাওয়া যায়। অনেকটা বেলিফুলের মতো তার সুবাস।
গাছের প্রতিটি শাখার অগ্রভাগে থোকা-থোকা বিজুফুল ফোটে। ঊর্ধ্বমুখী মঞ্জরিগুলো হালকা সাদা আর গোলাপি। ফুল আকারে ছোটো নলাকৃতির। প্রতিটি ফুলের পাপড়ি থাকে চার-পাঁচটি। ফুটন্ত ফুল অনেক দিন স্থায়ী হয়। পাহাড়ের ঝোপে ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের শেষ দিকে দেখা মিলে এই ফুলটির।
বিজু ফুলকে চাকমারা বলে ‘ভাতজোড়া ফুল’, ত্রিপুরারা ‘কুমুইবোবা’, মারমারা বলে ‘চাইগ্রাইটেং’, সাঁওতালরা ‘পাতাবাহা’ আর বাঙালিরা বলে ‘বিউফুল’। ইংরেজিতে এটির নাম ‘ক্লেরোডেনড্রাম কারদিলেকুলার‘।
গঙ্গাদেবীর উদ্দেশে এ ফুল ভাসিয়ে পূজা করা হয়। তবে এ ফুলই লাগবে, এমন বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্ত গ্রামের বিজুতে প্রথম ভোরে তোলা ফুলের ঝুড়িতে ‘ভাতজোড়া ফুল’ থাকবেই। অনেকে তো এ ফুলটিকে বিজুফুল বলেও সম্মোধন করে।
এই তো ২০১৫ সালে দিকেও রাাঙামাটি সদরের দোখাইয়া পাড়া গ্রামে জঙ্গলে ব্যাপকভাবে দেখা মিলতো ভাতজোড়া ফুলের। এর একটি গাছে ৬-৭টি ডালে অনেক ফুল থাকে। একই সাথে বিশাল এলাকা জুড়ে তারা ফোটে। অবশ্য বর্তমান ফুলটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বললেই চলে। কোথাও-কোথাও দুয়েকটি গাছে এ ফুল ফুটতে দেখা গেছে। নির্বিচারে জঙ্গল কেটে বাগান করার প্রবণতায় এ ফুলের অস্তিত্বের বিলুপ্তি ঘটছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
যমুনা চাকমা নামে এক স্থানীয় বলেন, আগে এ ফুল ছাড়া আমাদের বিজুই হতো না। ফুলটি যেমন সুগন্ধিযুক্ত তেমনই এ দিয়ে ঘর সাজালে সৌন্দর্যও বাড়ে। ঘরের আঙিনা, ঝোপঝাড়ে যত্রতত্র পাওয়া যেত ভাতজোড়া বা বিজুফুল। কিন্ত এখন দেখাই মিলে না তেমন। আগে আমাদের গ্রামে অনেক জঙ্গল ছিল। এখন কোনো জঙ্গলই নেই। সব জায়গায় বাগান করা হয়েছে। তাই ফুলটিও হারিয়ে গেছে।
শুধু ভাতজোড়া ফুল নয়, এ ফুলের সাথে
নাগবল্লী ফুল, পরশপিপুল ফুল, জংলি ঝুমকালতা ফুল, সর্পগন্ধা বা চন্দ্রাফুল, কুরুক ফুলসহ বিভিন্ন ফুলের বিলুপ্তি ঘটেছে। যার কারণে ফুলবিজুতে এখন জায়গা নিয়েছে মালতী, জবা, কাগজ ইত্যাদি নামের ফুল। কোনো-কোনো গ্রামের বাড়ির আঙিনায় ফুলগাছ লাগানোর রেওয়াজ থাকায় কিছুটা ফুল পাওয়া যায়। কিন্ত শহরে ফুলবিজুতে জংলি এই ফুলের চেহারাও অনেকে ভুলে গেছে। শহরে ফুল না থাকায় বাজার থেকে ফুল কিনে এনে গঙ্গাদেবীর পুজো করতে হচ্ছে তাদের।