ঢাকায় বিজিবি-বিএসএফ সম্মেলনে সীমান্তে হত্যা বন্ধে পুনরায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। দু দেশের মধ্যেকার ৫০তম বৈঠকে সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা, গুলি ও আহত হওয়ার বিষয়টি প্রধান আলোচ্যসূচি ছিলো। মহাপরিচালক পর্যায়ের এই বৈঠকে ঐকমত্য হয় ১৪টি বিষয়ে। দু দেশের সীমান্ত প্রধানদের সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলোচনায় বিএসএফ প্রধান বলেন, আমাদের সদস্যদের নির্দেশ দেওয়া আছে যদি গুলি চালাতেই হয় তবে যেন শরীরের নিচের অংশে চালানো হয়। কিন্তু দেখা যায় এই নির্দেশ উপেক্ষিত থাকে এবং বাংলাদেশীদের গুলি চালিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে বিএসএফ বাহিনীর সদস্যরা। এটি জাতিসংঘ কনভেনশানের পরিপন্থি। করোনাকালে ভারতে লকডাউন এবং বাংলাদেশে সাধারণ ছুটি থাকার পরও সীমান্তে হত্যা বন্ধ হয়নি। বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থা আইন ও শালিস কেন্দ্র জানায়, চলতি বছরের ৮ মাসে বাংলাদেশের সীমান্তে সহিংসতায় প্রাণ গেছে ৩৯ জন বাংলাদেশীর। এর মধ্যে ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে বিএসএফ এর গুলিতে। এর আগের বছরও বিএসএফ এর গুলিতে মারা গিয়েছিলেন ২৮ জন বাংলাদেশী।
বিএসএফ সদস্যদের এ ধরনের অসহিষ্ণু আচরণ সমর্থনযোগ্য নয়। পৃথিবীর সব দেশের সীমান্তে বাণিজ্য ও চোরাকারবার চলে। কিন্তু বাংলাদেশীদের মতো এত বিপুল হারে কোন দেশের মানুষকে মৃত্যুবরণ করতে হয় না। ভারত-নেপাল সীমান্তেও চোরাচালান হয়, কিন্তু সেখানে কি এত লোকের প্রাণ যায়? আগে ভারত থেকে গরু আনার বিষয় বেশি আলোচিত ছিল। এখন তা নেই, বাংলাদেশ পশু উৎপাদনে এখন অনেক এগিয়ে। ভারত থেকে চোরাপথে গরু আনার প্রশ্নই ওঠে না। দু দেশের নিরাপত্তা বাহিনী সতর্ক থাকলে চোরাচালান হ্রাস করা অসম্ভব কিছু নয়। ভারত থেকে কাশির সিরাপ, ইয়াবা, হেরোইন বাংলাদেশে ঢোকার কথা স্বীকার করেছেন বিএসএফ প্রধান। এসব মাদক বাংলাদেশের জন্য ভয়ানক সামাজিক ও পারিবারিক অভিশাপের মতো। অথচ বড় বড় চোরাকারবারি বা অবৈধ পণ্যের ব্যবসায়ী ধরা পড়ে না। বাহক এবং সাধারণ মানুষের প্রাণ যায়। দু দেশের সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় আত্মীয়স্বজন রয়েছে, এ জন্যে তাদের মধ্যে যোগাযোগ হয়। এটি বিশ্বের নানা দেশেই ঘটে থাকে। সীমান্তরক্ষীদের এসব ব্যাপারে সংবেদনশীল হতে হয়। সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা দু দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে কাঁটার মতো বিঁধে আছে। এটি মানবাধিকারের প্রশ্নও বটে। ভারতের ঊর্ধ্বতন সীমান্ত কর্তৃপক্ষ সীমান্তে হত্যা বন্ধের বিষয়ে বারবার বাংলাদেশকে আশ্বাস দিচ্ছে। অথচ নিচের দিকে তা কেন প্রতিপালন হয় না- সে ব্যাপারটি ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে বিশদভাবে খতিয়ে দেখতে হবে।
সম্মেলনে উভয় পক্ষ সীমান্তে সংগঠিত অপরাধ বিষয়ে ‘রিয়েল টাইম ইনফরমেশন’ আদান-প্রদানে একমত হয়েছে। এছাড়া চোরাচালান প্রবণ অঞ্চলে যৌথ টহল দান, মানবপাচার ও অবৈধভাবে আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রম করা প্রতিরোধে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে।
আমরা মনে করি, দু দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যা বন্ধ, জাতিসংঘ কনভেনশন ও মানবাধিকার নীতি অনুসরণ, হত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের যথোপযুক্ত বিচার ও শাস্তি দান বাঞ্ছনীয়। সীমান্তে হত্যা বন্ধে ভারত তার প্রতিশ্রুতি রাখবে-বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ তা আশা করে।
মতামত সম্পাদকীয়