পাঁচ দিনব্যাপী শারদ উৎসবের শেষদিন আজ। বিজয়া দশমীর দিনে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এই প্রধান ধর্মীয় উৎসব।
বিজয়া দশমীতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে অন্যরকম আবেগ ও মন খারাপ করা এক অনুভূতির সৃষ্টি হয়। কারণ, দশমী মানেই দুর্গা মায়ের ফিরে যাওয়া। তারপর অপেক্ষায় থাকতে হবে আরেকটি বছর।
গতকাল ম-পে ম-পে মহানবমীতে দেবীর বন্দনায় ভক্তকুলে ছিল ভিন্ন এক আবহ। যদিও বৈরী আবহাওয়ার কারণে উৎসব পালনে বিঘœ ঘটে। ঢাকঢোল, কাঁসর-ঘণ্টাসহ বিভিন্ন বাদ্য, ধূপ আরতি ও দেবীর পূজা-অর্চনায় ছিল প্রাণখোলা উচ্ছ্বাস। সেই সঙ্গে ছিল এক মানবিক ও সুন্দর পৃথিবীর প্রার্থনা। সকাল থেকে চট্টগ্রামসহ সারা দেশের ম-পে ম-পে শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা। পুরাণ মতে, এ তিথিতে দেবী দুর্গার আশীর্বাদ নিয়ে লঙ্কার রাজা রাবণকে বধ করেছিলেন দশরথ পুত্র শ্রীরামচন্দ্র। এছাড়া ১০৮টি নীলপদ্ম দিয়ে দেবী দুর্গার পূজা করেছিলেন রামচন্দ্র। তাই এ মহানবমীতে ষোড়শ উপচারের সঙ্গে ১০৮টি নীলপদ্মে পূজিত হয়েছেন দেবী দুর্গা।
মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয় পাঁচ দিনব্যাপী সার্বজনীন শারদীয় দুর্গোৎসব। স্বামীর ঘর স্বর্গ ছেড়ে মর্ত্যে পিতৃগৃহে পদার্পণ করেন দেবী দুর্গা। পাঁচ দিনের এ সফরে তার সাথে রয়েছেন চার সন্তান গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী ও সরস্বতী। আরও আছে কার্তিকের কলা বউ। ষষ্ঠী সন্ধ্যায় প্রথমে দেবীর বোধন হয়, জাগিয়ে তোলা হয় দেবীকে। পরে অধিবাস এবং দেবী পূজার জন্য আমন্ত্রণ করা হয়। এদিন মাতৃরূপী দুর্গার মুখ উন্মোচিত হয় ম-পে। দেবী দর্শনে ভিড় জমান ভক্তরা। লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক, সরস্বতীকে নিয়ে ম-পে অধিষ্ঠিত হন দশভুজা দেবী।
মহানবমীর দিন হলো দেবী দুর্গাকে প্রাণভরে দেখে নেওয়ার সময়। দুর্গাপূজার অন্তিম দিন বলা যায় মহানবমীর দিনটিকে। পরের দিন অর্থাৎ আজ কেবল বিজয়া ও বিসর্জনের পর্ব। পঞ্জিকামতে, দেবী দুর্গা এবার মর্ত্যে এসেছেন ঘোটকে অর্থাৎ ঘোড়ায় চড়ে। যাবেনও ঘোড়ায় চড়ে। এর ফল ‘ছত্রভঙ্গ’। তবে বিশ্বাস হচ্ছে, ঘোটকে দেবীর আগমন এবং গমন অশুভের বার্তা দিলেও ভক্তের আরাধনায় দেবীর মন তুষ্ট হলেই মিলবে শান্তি।
এ বছর অনেকটা নির্বিঘেœ পালিত হলো বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এই উৎসব। এই সম্প্রীতি বহমান থাকুক দেশে। ধর্ম যার যার উৎসব হোক সবার। যে অসাম্প্রদায়িক চেতনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশটি স্বাধীন হয়েছিল সে চেতনা থেকে বাংলাদেশ কখনও বিচ্যুত হতে পারে না। কারণ এই দেশ যে সকল ধর্মের, সকল বর্ণের, সকল লিঙ্গের সে প্রতিশ্রুতি উচ্চারিত হয়েছে আমাদের মহান সংবিধানে। যে নিশ্চয়তা ঘোষণা করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
সে চেতনা থেকেই আমরা বলতে চাই, এ দেশ সকলের। সব ধর্মের মানুষের। আজ বিজয়ার এই দিনে আমাদের অনাবিল শুভেচ্ছা রইল।
এ মুহূর্তের সংবাদ