বিচারককে হেনস্থার অভিযোগে পাঁচ আইনজীবীর সনদ বাতিলসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি

সুপ্রভাত ডেস্ক »

জামিন নামঞ্জুর করার পর বিচারককে হেনস্থার অভিযোগে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ঢাকা বার ইউনিটের আহ্বায়ক ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি খোরশেদ আলমসহ পাঁচ আইনজীবীর সনদ বাতিলসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে অধস্তন আদালতের বিচারকদের সংগঠন জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।

সোমবার (১৯ মে) সংগঠনের সভাপতি মো. আমিরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়।

আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন দেশের সব জেলা আদালতের বিচারকদের সঙ্গে নিয়ে যেকোনো কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন গভীর ক্ষোভ ও চরম উদ্বেগের সঙ্গে জানাচ্ছে যে, গত ১৭ মে দুপুরে ঢাকার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নম্বর-১ এর চলমান এজলাসে কিছু আইনজীবী কর্তৃক বিচারক ও বিচারকার্যের প্রতি প্রকাশ্য অবমাননা, চিৎকার-চেঁচামেচি, অশ্রাব্য গালিগালাজ, অশালীন মন্তব্য, কোর্টরুমের কজলিস্ট ছুঁড়ে ফেলা ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের যে ন্যক্কারজনক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, তা দেশের বিচার বিভাগ, বিচারক ও আইনের শাসনের প্রতি সরাসরি হুমকি এবং সুস্পষ্ট ফৌজদারি অপরাধ। এক পর্যায়ে এমন পরিস্থিতি হয় যে, বিচারককে বাধ্য হয়ে এজলাস ত্যাগ করতে হয়।

প্রকাশিত ভিডিও এবং প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, কেরাণীগঞ্জ মডেল থানার জিআর ১৫৬/২৫ মামলার জামিন শুনানির সময় বিজ্ঞ বিচারক আইনানুগভাবে জামিন নামঞ্জুরের আদেশ দিলে আসামিপক্ষের আইনজীবী খোরশেদ আলম, আব্দুল খালেক মিলন, মো. জাবেদ, মো. ইলিয়াস ও মো. জহিরুল চরম মাত্রার ঔদ্ধত্যপূর্ণ, অবমাননাকর ও সহিংস আচরণে লিপ্ত হন।

আইনজীবী খোরশেদ আলম একটি নথি দেখিয়ে উচ্চস্বরে আঙুল নেড়ে আদালতকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘ঘটনার তারিখ, ঘটনার সময়, ঘটনার স্থান সেইম- দুইটা মামলা (বাদী আলাদা); এটা হয় নাকি। ’

আইনজীবী আব্দুল খালেক মিলন বিচারককে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘শোনেন স্যার, বলতে তো এখন খারাপ শোনা যায়, আমাদের কারণে আজ এই চেয়ারে বসা আপনি’।

অপর আইনজীবী মো. জাবেদ জামিনের জন্য পুনরায় শুনানির তারিখ নির্ধারণের জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা পুনরায় জামিনের একটা আবেদন করি। আপনি কালকে শুনানির জন্য রাখেন। ’

বিজ্ঞ বিচারক তাদের আইনানুগ প্রক্রিয়ায় স্পেশাল পুটআপ নিয়ে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যাওয়ার জন্য বললে আইনজীবীরা আরও ক্ষিপ্ত ও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন। এক পর্যায়ে উক্ত আইনজীবীরা বিজ্ঞ বিচারককে আওয়ামী লীগের দালাল, ফ্যাসিবাদের দোসরসহ নানা অশ্রাব্য গালিগালাজ করতে থাকেন। তারা এজলাসে থাকা কজলিস্টও ছুঁড়ে ফেলে দেন। তাদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও অবৈধ বলপ্রয়োগের কারণে বিচারকার্য ব্যাহত হওয়ায় বিজ্ঞ বিচারক এজলাস ত্যাগ করতে বাধ্য হন।

এই ঘটনার মাধ্যমে শুধুমাত্র একজন বিচারককে অপমান করা হয়নি, বরং গোটা দেশের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার ভিত্তি কেঁপে উঠেছে। বিচারকের স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে, যা কোনোভাবেই একটি সভ্য, গণতান্ত্রিক ও আইনশাসিত দেশে গ্রহণযোগ্য নয়। এজলাসে অরাজকতা সৃষ্টি, বিচারকের প্রতি হুমকি ও অপমান এবং বিচারকার্যে অবৈধ বলপ্রয়োগ দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ধারা ২২৮ ও ৩৫৩ অনুযায়ী গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ।

বিচারিক কর্তৃত্বকে পাশ কাটিয়ে, পেশি শক্তি ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিজ পক্ষে আদেশ আদায়ের অপচেষ্টা স্পষ্টভাবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা ও শৃঙ্খলার ওপর আঘাত। এটি একটি সংগঠিত, উদ্দেশ্য প্রণোদিত অপপ্রয়াস, যা রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামোকে দুর্বল করার শামিল। বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এই ঘটনাকে স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক অপতৎপরতা হিসেবে দেখছে। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি কর্তৃক ঘোষিত স্বাধীন বিচার বিভাগের রোডম্যাপ বাস্তবায়নের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এমন ঘটনা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে বিপন্ন করার হীন ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়।