নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁশখালী »
বাঁশখালীতে রাতের আঁধারে নির্জন স্থানে আলোচিত গন্ডামারা ব্রিজের পাশে বিক্রয় কর্মী মো. দুদু মিয়া সরকার (৩৮) হত্যার প্রধান আসামি মো. ছোটনকে পুলিশ দুপুর ১২ টায় বাঁশখালী প্রধান সড়কের শীলকূপ এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে।
খুনির ঘটনাস্থলে ফেলে যাওয়া গেঞ্জি ও ব্যবহৃত মোবাইল উদ্ধারে পর ক্ল্যু ছাড়া এই হত্যার রহস্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উদঘাটন হয়েছে। গ্রেফতারের পর খুনি মো. ছোটন (২৩) গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় বাঁশখালী আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাইনুল ইসলামের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারুক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে আদালতের পেশকার মো. সেলিম জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র ও পুলিশ জানিয়েছেন, ১০ জানুয়ারি রাত ৯টায় কোহিনুর কেমিক্যাল (তিব্বত) কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি (এসআর) মো. দুদু মিয়া সরকার (৩৮) গন্ডামারা বাজারে মালামাল বিক্রির কাজ সেরে চাম্বল বাজারস্থ ভাড়া বাসায় ফেরার পথে অজ্ঞাত কিছু লোকের ছুরিকাঘাতে খুন হন। জনবিচ্ছিন্ন নির্জন স্থানে মো. দুদু মিয়া খুন হবার পর পর বাঁশখালীর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামাল উদ্দিন, ওসি তদন্ত সুমন চন্দ্র বণিক এবং সেকেন্ড অফিসার এস আই রাজীব পোদ্দার ৩ দলে বিভক্ত হয়ে হত্যার রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে। প্রথমত খুনের আলামত হিসেবে খুনিদের ফেলে যাওয়া একটি গেঞ্জি, খুনির ছবিসহ ব্যবহৃত মোবাইল উদ্ধার করে পুলিশ। প্রাপ্ত ওই দুইটি জিনিস থেকেই খুনিকে চিহ্নিত করে পুলিশ এলাকায় অভিযানে নামে। খুনের পর থেকেই খুনিরা পালিয়ে যাবার চেষ্টা করতে থাকে। গতকাল দুপুর ১২টায় খুনি মো. ছোটন (২৩) বাঁশখালী প্রধান সড়ক হয়ে সিএনজি অটোরিক্সা যোগে পালিয়ে যাবার সময় পুলিশ শীলকূপ এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে। গন্ডামারা ইউনিয়নের পূর্ব বড়ঘোনা গ্রামের নেজাম উদ্দিনের ছেলে মো. ছোটন মূলত একজন পেশাদার ছিনতাইকারী। পুলিশ তাকে গ্রেফতারের পর পরই বাঁশখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যজিস্ট্রেট মো. মাইনুল ইসলামের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণের জন্য সোপর্দ করে। দুদু মিয়া হত্যার প্রধান আসামি মো. ছোটন আদালতে স্বীকারুক্তিমূলক জবানবন্দিতে স্বীকার করেছে ওই খুনের জন্য তিনি অনুতপ্ত। তারা ৩ জন মিলে টাকা ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে ব্যর্থ হয়ে বিক্রয় কর্মী দুদু মিয়াকে উর্পযুপরি ছুরিকাঘাত করে ও পরে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে পালিয়ে যায়। স্বীকারোক্তিতে সে আরো জানায়, দুদু মিয়াকে খুন করা আমাদের ইচ্ছা ছিল না। মূলত তার টাকা ছিনিয়ে নেয়াই উদ্দেশ্য ছিল।
স্থানীয়রা জানায়, রংপুর জেলার মিঠাপুকুর এলাকার বিরামপুর গ্রামের হযরত আলীর পুত্র মোহাম্মদ দুদু মিয়া সরকার (৩৮) বাঁশখালীতে কোহিনুর কেমিক্যাল (তিব্বত) কোম্পানিতে এসআর হিসাবে কমরত ছিলেন। মঙ্গলবার রাতে গন্ডামারা এলাকা থেকে মালামাল বিক্রির টাকা সংগ্রহ করে আসার পথে শীলকূপের মধ্যবর্তী গন্ডামারা ব্রিজে ছিনতাইকারীরা তাকে ছুরিকাঘাত করে। তিনি চাম্বল বাজার এলাকায় ভাড়া বাসায় সস্ত্রীক থাকতেন। খুনের পর তার স্ত্রী তাজমিন নাহার তমা (২৬) বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি দেখিয়ে বাঁশখালী থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামাল উদ্দিন জানান, বাঁশখালীর গন্ডামারা ব্রিজের পাশের বিক্রয় কর্মী দুদু মিয়া সরকার হত্যার প্রধান আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে আদালতে খুনের স্বীকারোক্তি দিয়েছে। খুনের সাথে জড়িত অন্য যুবকদেরও গ্রেফতারে অভিযান চলছে। ক্ল্যু লেস এই হত্যার রহস্য উদঘাটন সহজ হয়েছে, মূলত ঘটনাস্থলে খুনির ফেলে যাওয়া মোবাইল ও পরিধেয় গেঞ্জি উদ্ধারের পর।