আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন তারা তো দলগতভাবেই অসংখ্য অপকর্ম করেছে। নৌকায় ভোট দেবার অপরাধে আটবছরের শিশু থেকে অন্তঃসত্ত্বা নারী, ষাটবছরের বয়স্কা পর্যন্ত রক্ষা পায়নি তাদের লেলিয়ে দেয়া বাহিনীর হাত থেকে। যারা অতীতে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ দলগতভাবেই করেছে, তাদের মুখে এসবের বিরুদ্ধে কথা বলা মানায় না। এ নিয়ে যখন কিছু বলা হয়, বিষয়টা তখন হাস্যকর হয়ে দাঁড়ায়। তাই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য হাস্যকর।
তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবরা যখন কথা বলেন তখন ভুলে যান তাঁরা যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন তাঁরা কি করেছেন। তাঁরাই আসলে এ রকম লাগামহীন কথা বলতে পারেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকার এ ধরনের ঘটনা অতীতে যা ঘটেছে সেগুলোর বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়েছে। এখনো যেগুলো ঘটেছে বা ঘটছে, সেগুলোরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার জন্য সরকার বদ্ধপরিকর।
গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে বাংলাদেশ বেতারের উদ্যোগে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) বিষয়ক প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে নারী ও শিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকারকে আর সময় দেয়া যাবে না বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন মন্তব্যের ব্যাপারে সাংবাদিকেরা তথ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক হোসনে আরা তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদ, চট্টগ্রাম বেতারের পরিচালক এসএম আবুল হোসেন প্রমুখ।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, উনারা অবশ্য আমাদের সময় দিচ্ছেন না বহু আগে থেকেই। সেই ২০০৯ সালে আমরা সরকার গঠনের তিন মাসের মাথায় উনারা আমাদের আর সময় দিতে চাননি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে জনগণ আমাদের সময় দিয়েছে। এবং প্রায় পৌনে ১২ বছর ধরে জননেত্রী শেখ হাসিনা একটানা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। সুতরাং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব সময় দিলেন কি দিলেন না, সেটি বড় ব্যাপার নয়। জনগণ সময় দিচ্ছে কিনা, সেটিই হচ্ছে মুখ্য বিষয়।
মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে। স্থানীয় সরকার পর্ষদে ৩৩ শতাংশ নারীর জন্য সংরক্ষিত কোটা তিনিই করেছেন। নারী সংসদ সদস্যের সংখ্যা পঞ্চাশে উন্নিত করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যাই। দেশের ইতিহাসে প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্পিকারসহ নানা পদে নারীর পদায়ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে উন্নতি হয়েছে, সেটি পৃথিবীর সামনে বড় উদাহরণ।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, আজ যে ঘটনাগুলো ঘটছে, এগুলো যে আগে ঘটেনি, তা নয়। কিন্তু আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যাপকতা ছিল না বিধায় সেগুলো মানুষ বেশি জানতে পারতো না। নোয়াখালীর ঘটনাটা কোনো টেলিভিশন কিংবা পত্রপত্রিকা এমনকি কোনো অনলাইন প্রথম প্রকাশ করেনি। এটি প্রথমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসেছে। এরপর অন্যান্য মূলধারার গণমাধ্যম সেটি নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করেছে। অর্থাৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে কিন্তু এখন কোনো ঘটনাই ঢাকা থাকছে না। এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভালো দিক।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বেতারের ভুমিকার কথা উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, ততদিন স্বাধীন বাংলা বেতারের কথা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। দেশ বিনির্মাণে বেতার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বেতারের অনেকগুলো অনুষ্ঠান অত্যন্ত ভালো এবং জনমানুষের কাছে সেগুলোর ব্যাপক আবেদন রয়েছে। আমাদের সংস্কৃতিকে লালন করার ক্ষেত্রে বেতার গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে। দুর্যাগ-দুর্বিপাকে বেতারই কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের কাছে খবর পৌঁছায়। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও স্মার্টফোনের ব্যাপকতা বেড়েছে। এক সময় একটি রেডিও বহন করাও সম্ভব ছিল না। তাই রেডিওকে অ্যাপসের মাধ্যমে ফোনে আনার উদ্যোগ নিয়েছি। এখন অ্যাপসের মাধ্যমে বিভাগীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ বেতার মোবাইলেও শোনা যায়।
তিনি বলেন, ১০০ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন হলেও আশপাশে পাহাড়সহ নানাকারণে ফেনীতেও চট্টগ্রাম বেতারের অনুষ্ঠান শোনা যায় না। অথচ ১০০ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন খুলনা কেন্দ্রের অনুষ্ঠান প্রতিবন্ধকতা না থাকায় এখানেও শোনা যায়। গুরুত্ব বিবেচনায় ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীসহ নানা সংবাদ ও তাদের সংস্কৃতির চাহিদা রয়েছে সারাদেশে। তাই আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি যাতে ঢাকা কেন্দ্রের মতো বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে আপলিঙ্ক করে সেটি আবার বিভিন্ন বেতার কেন্দ্রে ডাউনলিঙ্ক করে সারাদেশে শোনানোর। চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠানও খুব সহসা সেভাবে উদ্বোধন হবে। এটি চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের ইতিহাসে বিরাট মাইলফলক হয়ে থাকবে। বিজ্ঞপ্তি