৫ শিশুসন্তান নিয়ে দিশেহারা স্ত্রী
নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁশখালী <
বাঁশখালীর চাম্বল ইউনিয়নের পূর্ব চাম্বল গ্রামে গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টায় ৭ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়ার পর সন্ত্রাসীরা নুরুল ইসলাম (৪১) নামের এক ব্যবসায়ীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে। ওই সময় তিনি চাম্বল বাজার থেকে তার মুরগি ও ডিমের পাইকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে বাড়ি ফিরছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পায়ে হেঁটে বাড়ি যাবার পথে চাম্বল উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছলে সিএনজি অটোরিকশাতে ওঁতপেতে থাকা ৪/৫ জন সন্ত্রাসী তার গতিরোধ করে হাতবেগে থাকা ৭ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এতে ব্যর্থ হবার একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা নুরুল ইসলামের অন্ডকোষ বরাবর ছুরি দিয়ে আঘাত করে। রক্তের ফিনকিতে স্কুলের দেয়াল পর্যন্ত রক্তাক্ত হয়। নুরুল ইসলামের মৃত্যু নিশ্চিত করে সন্ত্রাসীরা উত্তরের মেটো রাস্তা হয়ে সিএনজি অটোরিকশা যোগে পালিয়ে যায়।
এরপর নুরুল ইসলামের নিথর দেহ স্থানীয়রা বাঁশখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। নিহত নুরুল ইসলাম পূর্ব চাম্বল গ্রামের তেলিপাড়ার মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে।
সন্ত্রাসীরা খুন করে পালিয়ে যাবার দৃশ্য স্থানীয় এক ব্যক্তির সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ করা আছে।
এদিকে, স্বামী হারিয়ে নুরুল ইসলামের দ্বিতীয় স্ত্রী জিয়াসমিন আক্তার দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তাদের শাহেদা আক্তার (৭), মো. সোয়েব (২) ও সাফিয়া আক্তার (৬ মাস) নামের ৩ শিশু সন্তান রয়েছে। প্রথম স্ত্রী অন্যত্র চলে গেলেও তার দুই ছেলে শাহাদাত হোসেন (১২) ও সাকিবুল হাসান (১০)রাও জিয়াসমিনের সঙ্গে থাকে।
পাঁচ শিশুসন্তানের কথা ভেবে স্বামী হারিয়ে জিয়াসমিনের আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠেছে। নিহত নুরুল ইসলামের দোকানে মো. আনিছুর রহমান (২২) নামের এক কর্মচারীও ছিল। ওইদিন রাত ৮টায় সে বাড়ি চলে গিয়েছিল। খুনের ঘটনায় নিহত নুরুল ইসলামের বড় ভাই নুর আহমদ বাদি হয়ে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
নিহত ব্যবসায়ী নুরুল ইসলামের দ্বিতীয় স্ত্রী জিয়াসমিন আক্তার বলেন, এ ঘটনার আগে গত শুক্রবার রাতেও বাড়ি ফেরার পথে ওই সন্ত্রাসীরা টাকা ছিনতাইয়ের চেষ্টা চালিয়েছিল। ওই সময় পালিয়ে কোনরকমে প্রাণে বেঁচে যান। গ্রামবাসী ও আমি ওই ছিনতাইকারীদের নাম জানার চেষ্টা করলেও নুরুল ইসলাম ভয়ে ছিনতাইকারীদের নাম বলেননি।
চাম্বল বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাজী বশির আহমদ ও ওষুধ ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান বলেন, ‘নুরুল ইসলাম ২০ বছর ধরে ব্যবসা করছেন সততার সাথে। কখনও কারো সাথে বড় করে কথাও বলেননি। এলাকার কৃষক, দিনমজুর ও হতদরিদ্র মানুষকে নানাভাবে সাহায্য হাত করতেন নুরুল ইসলাম। বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী হিসেবে রাতে অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তাদের বেচা-কেনার উপার্জিত টাকা তার কাছে জমা রাখতেন। সেই কারণে প্রতিরাতে ৩ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত তার কাছে জমা থাকত। গত মঙ্গলবার রাতেও প্রচুর টাকা থাকায় ছিনতাইকারীরা টাকার জন্য খুন করেছে। অনেকে ওই টাকার অঙ্ক ৭/৮ লাখ টাকা হবে বলে ধারণা করছেন ।’
সার্কেল এএসপি মো. হুমায়ন কবির বলেন, ‘রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি জোরালোভাবে তদন্ত চলছে। টাকা ছিনতাইয়ের বিষয়কে সামনে রেখে হত্যার মোটিভ খোঁজা হচ্ছে। নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।’
চাম্বলের ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরী বলেন, ‘নুরুল ইসলামকে খুনের খবর পেয়ে পুলিশ ও আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। জনৈক ব্যক্তির বাড়ির সিসিটিভি ক্যামেরায় সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যাবার দৃশ্য পুলিশ দেখে ওই বাড়ির মালিককে তা সংরক্ষণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’