সুপ্রভাত ডেস্ক »
বাহাত্তরের সংবিধান গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটের সঙ্গে যায় না বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। বুধবার (২৩ অক্টোবর) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে “বাহাত্তরের মুজিববাদী সংবিধান বাতিল এবং রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অপসারণ দাবিতে জাতীয় ঐক্যের ডাক” শীর্ষক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, গত ৩ আগস্ট আমাদের এক দফায় ছিল ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল একাত্মতা পোষণ করে রাজপথে নেমে আসে। হাসিনার পতনে আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য অর্জন হয়েছে। ’৭২-এর সংবিধানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ কায়েম হয়েছে, ফ্যাসিস্ট সংঘবদ্ধ হয়েছে, এর প্রসারণ হয়েছে। যখন হাসিনা সরকারকে পদত্যাগের কথা বলা হতো, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচনের কথা বলা হতো— তারা সবসময় সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার দোহাই দিতো। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সংবিধানের দোহাই দিয়ে রাষ্ট্রপতিকে টিকিয়ে রাখতে চায়।
তিনি আরও বলেন, তাদের কাছে আহ্বান থাকবে ’৭২-এর সংবিধান প্রশ্নে এবং আমাদের অভ্যুত্থান প্রশ্নে আপনাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। কারণ যারা গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে, এক দফায় একাত্মতা পোষণ করেছে তারা ’৭২-এর সংবিধান সমর্থন করতে পারে না। ৫ আগস্টের ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপ ঘোষণার অন্যতম হচ্ছে ’৭২-এর মুজিববাদী সংবিধান বিলোপ করতে হবে। একাত্তর পরবর্তী সংবিধান আওয়ামী সংবিধান, বাকশালি সংবিধান। মুজিববাদী আদর্শের আড়ালে বাংলাদেশ পরিচালিত হতো। চব্বিশের অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে বাকশালি সংবিধান অপ্রাসঙ্গিক।
জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে নতুন সংবিধান চাই, যে সংবিধানে গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হবে, নতুন ফ্যাসিবাদের পথ রুদ্ধ থাকবে। সংবিধান বাতিল হলে রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার প্রয়োজন হবে না। গণতন্ত্রকামী প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের ঐক্য চাচ্ছি, তবে মুজিববাদী ও জাতীয় পার্টির কোনও সংস্পর্শ থাকবে না৷ গণতন্ত্রকামী সকল রাজনৈতিক দলকে আহ্বান জানিয়ে বলতে চাই, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যে ৫ দফা দিয়েছে এই ৫ দফাই গণঅভ্যুত্থানকে বিপ্লবে রূপান্তর করার চূড়ান্ত দফা। ৫ দফার মধ্য দিয়ে গণঅভ্যুত্থান বিপ্লবে রূপান্তরিত হবে। বাংলাদেশ প্রশ্নে স্থায়ী সমাধানের দিকে যেতে পারবো।
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক মুহাম্মদ নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, আজকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মিটিং ছিল। আমরা দেখেছি সেখানে হাসিনার ফেসিস্ট রেজিমের যে অংশগুলো রয়েছে সেগুলো তারা এখনও রাখা বা বাস্তবায়নের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা বিএনপির বিবৃতিতে দেখেছি যে তারা বলেছে, সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হবে এবং রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হবে। আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি স্পষ্ট করে বলতে চাই, চুপ্পুকে (রাষ্ট্রপতি) যদি অপসারণ না করা হয় তাহলেই সাংবিধানিক এবং রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হবে।
রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন চুপ্পুর পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরতদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিরাজমান পরিস্থিতিতে যতগুলো রাজনৈতিক দল আছে, তবে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, জাতীয় পার্টিসহ অপ্রাসঙ্গিক দলগুলো বাদে যে দলগুলো প্রাসঙ্গিক, গণঅভ্যুত্থানে যে শক্তিটা রয়েছে তাদের প্রতি জাতীয় ঐক্যের ডাক দিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, কোনও ফ্যাসিস্ট রেজিমের কোনও অংশ আমরা বাংলাদেশে বিরাজমান দেখতে চাই না। এর ফয়সালা রাজনৈতিকভাবে করতে হবে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আমরা আহ্বান রাখছি যে আপনারা বাংলাদেশকে রক্ষার জন্য কোনও হঠকারী সিদ্ধান্ত নেবেন না, ছলচাতুরির আশ্রয় নেবেন না। জাতীয় ঐক্যের জন্য হাসিনা ফ্যাসিস্ট রেজিমের যে অংশ চুপ্পুকে অপসারণের দাবিতে একমত আপনারা ঐক্যবদ্ধ হন এবং রাজনৈতিক যে সংকটটা রয়েছে সেই সংকট মোকাবিলা করুন। দেশবাসীর কাছে আমাদের আহ্বান কোনও রাজনৈতিক দল যদি ফ্যাসিস্ট রেজিমের অংশ চুপ্পুকে অপসারণের আন্দোলনে না আসে, তাহলে তাদেরকে ত্যাগ করে একসঙ্গে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।