শিল্প এলাকার বাতাস সব সময় বেশি দূষিত থাকে। কলকারখানার কালো ধোঁয়া এর জন্য দায়ী। নাসিরাবাদ, ষোলশহর, বায়েজিদ এলাকায় অনেকগুলো ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান আছে। এর মধ্যে অর্ধেক প্রতিষ্ঠান বায়ুদূষণ করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কালো ধোঁয়ার সঙ্গে বস্তুকণা, সালফার ডাই অক্সাইড ও নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড, সিসাসহ অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে। এভাবে চট্টগ্রামের বাতাস দ্রুত দূষিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, কালো ধোঁয়ায় থাকা বস্তুকণা ও সালফার ডাই অক্সাইডের প্রভাবে ফুসফুস, কিডনি জটিলতা ও হৃদরোগের ঝুঁকি রয়েছে। এ ছাড়া, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড ও সিসার কারণে শ্বাসযন্ত্রের প্রদাহ, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস ও শিশুদের বুদ্ধিবৃত্তি ব্যাহত হয়।
বায়ুদূষণের মাত্রা পরিমাপকে সংক্ষেপে বলে এসপিএম। এখানে বাতাসে সাসপেনডেট পার্টিকুলেট মেটারের (এসপিএম) মাত্রা বেশি। এসপিএমের গ্রহণযোগ্য মাত্রা হচ্ছে ২০০-এর নিচে। অথচ এই এলাকায় প্রতি মাইক্রোগ্রাম বাতাসে এসপিএম -এর ওপরে।
চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিকের রিপোর্ট থেকে জানা যায় এখানে একাধিক রি-রোলিং এবং স্টিল মিলসহ বিভিন্ন ধরনের ক্যামিকেল কারখানাগুলো থেকে রাতে দিনে ভয়াবহ আকারে কালো ধোঁয়া বের হওয়ার ঘটনা ঘটছে। পুরনো প্রযুক্তির এসব কারখানায় ধোঁয়া ফিল্টারিং এর কোন ব্যবস্থা নেই। এতে করে স্টিলমিলে স্ক্র্যাপ গলানোর সময় ধোঁয়ার সঙ্গে কার্বন, আয়রন, অ্যালুমিনিয়ামসহ বিভিন্ন পার্টিকেল নিঃসরণ হয়। কালো ধোঁয়ার সাথে এসব মানুষের নাক, মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। দেশে ধোঁয়া ফিল্টারিং করার প্রযুক্তি রয়েছে। ধোঁয়া থেকে বিভিন্ন মেটাল কণাসমূহ বের করে আলাদা করে চীনসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানিরও সুযোগ রয়েছে। কিন্তু ফিল্টারিং খরচ বাঁচাতে নাসিরাবাদ শিল্প এলাকার অধিকাংশ কারখানা এসব ধোঁয়া আকাশে ছেড়ে দিচ্ছে। আকাশে ছেড়ে দেয়ার ক্ষেত্রেও কোনো নিয়ম নীতি মানা হচ্ছে না। যার যেভাবে খুশি সেভাবে ধোঁয়া নির্গমনের ফলে পুরো এলাকাটি অন্ধকার হয়ে থাকে। যা এলাকার হাজার হাজার মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলছে।
এক সময় নাসিরাবাদ শিল্প এলাকা স্বতন্ত্র একটি শিল্প এলাকা হিসেবে গড়ে উঠলেও শহরের বিস্তৃতি এবং মানুষের নানামুখী প্রয়োজন দেখা দেয়ায় বর্তমানে এটি শহরেরই অংশ। এখানে বিপুল বসতি গড়ে উঠেছে। একেবারে ধারে কাছেও বিস্তৃতি লাভ করেছে মানুষের বসবাস। আবাসিক এলাকায় শত শত বহুতল ভবন গড়ে তোলা হয়েছে। এর পাশাপাশি মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ইংরেজি ও বাংলা মাধ্যম স্কুল-কলেজসহ নানা ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। অপরদিকে নয়া নয়া শিল্প প্রতিষ্ঠানও হয়েছে। বেশ কয়েকটি ভারী শিল্পকারখানার পাশাপাশি গড়ে উঠেছে অসংখ্য গার্মেন্টস কারখানা। এতে করে এলাকাটিতে হাজার হাজার মানুষের আবাসনসহ বিপুল সংখ্যক মানুষের নানামুখী কর্মকা-ও চলে।
বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবনযাত্রায় অবর্ণনীয় দুর্ভোগের সৃষ্টি করছে কারখানার কালো ধোঁয়া। বিভিন্ন কারখানা থেকে অনবরত কালো ধোঁয়া নির্গত হওয়ায় মানুষ ঘরের দরজা জানালা পর্যন্ত খোলা রাখতে পারছে না।
বায়েজিদ এলাকায় নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে কালো ধোঁয়া বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। এখানে পরিবেশ অধিদপ্তরের নজরদারি বাড়াতে হবে এবং প্রয়োজনে কঠোর হতে হবে।
এ মুহূর্তের সংবাদ