আন্তর্জাতিক ফুটবল স্টেডিয়াম হিসেবে তৈরির জন্য ১২ শর্তে চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামকে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কাছে ‘লিজ’ দিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)।
এটা সুখবর হতে পারতো চট্টগ্রামবাসীর জন্য কিন্তু তা হচ্ছে না। কারণ এতে স্টেডিয়ামকে ঘিরে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেকেএস) অধীনে বছরে অন্তত ৩২টি ইভেন্টের আয়োজন এবং ক্রিকেটসহ বিভিন্ন লিগ আয়োজন অনিশ্চয়তায় পড়েছে। ইতিমধ্যে এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রামের ক্রীড়া সংগঠকেরা।
এর আগে মাঠ সঙ্কট কাটাতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) কাছে চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম বরাদ্দ চেয়েছিল বাফুফে। গত ২২ ডিসেম্বর এক অনুষ্ঠানে এম এ আজিজ স্টেডিয়াম বাফুফেকে দেওয়ার ঘোষণা দেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
সে সময় তিনি বলেছিলেন, স্টেডিয়ামটি ১০ বছরের জন্য বাফুফেকে দেয়া হয়েছে।
তবে সেদিনই বাফুফের তরফ থেকে জানানো হয়, ১০ বছরের জন্য স্টেডিয়াম নিয়ে কোনো লাভ নেই। কারণ, ফিফার নিয়ম অনুযায়ী কমপক্ষে ২০ বছরের অধিকৃত না থাকলে সেখানে তারা বিনিয়োগ করে না। তাই ২৫ বছরের জন্য স্টেডিয়ামটি চেয়ে এনএসসিকে ফের চিঠি দেয় বাফুফে। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ বছরের জন্যই স্টেডিয়ামটি বাফুফেকে দিয়েছে সরকার।
ফিফার একটি শর্ত আছে এমন, তারা তখনই অর্থায়ন করবে যখন সরকার একটি স্টেডিয়াম অন্তত ২০ বছরের জন্য বরাদ্দ দেবে বাফুফের অনুকূলে। এখন এনএসসি আরও ৫ বছর বাড়িয়ে অর্থাৎ ২৫ বছরের জন্য এমএ আজিজ স্টেডিয়াম বরাদ্দ দিয়েছে বাফুফেকে।
ফিফা ফরোয়ার্ড প্রোগ্রামের আওতায় প্রতিটি দেশের ফুটবল ফেডারেশন অন্তত ৮ মিলিয়ন ডলার (৯৮ কোটি টাকা) করে ডেভেলপমেন্ট ফান্ড পেতে পারে ফিফা থেকে। ২১১ টা দেশেই প্রাপ্য। তবে প্রোজেক্ট হতে হবে বিল্ডিং অবকাঠামো, ট্রেনিং সেন্টার, খেলার মাঠ ও জাতীয় দলগুলোর আবাসন ব্যবস্থার জন্য। এটাকে ফিফা বলছে টেকসই উন্নয়ন।
তাদের শর্ত হচ্ছে মাঠে কোনো সংষ্কার ও মেরামত করতে হলে ক্রীড়া পরিষদকে অবহিত করে কাজের ব্যয়ভার বাফুফে বহন করবে। লিজ চলাকালে কোনো ক্ষতি হলে বাফুফে ক্ষতিপূরণ দেবে। স্টেডিয়ামের বিদ্যুৎ,পানিসহ সকল ধরনের ইউটিলিটি বিল, ভূমিকরসহ যাবতীয় রাজস্ব ব্যয় বাফুফে বহন করবে। ক্রীড়া পরিষদের অনুমতি ছাড়া স্টেডিয়ামের কোন মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন করা যাবে না। ক্রীড়া পরিষদের অনুমতি ছাড়া বাফুফে মাঠটি অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহারের অনুমতি দিতে পারবে না। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খেলায় ১৫ শতাংশ গেট মানি ক্রীড়া পরিষদের অনুকূলে দিতে হবে।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের এ সিদ্ধান্তে চট্টগ্রামের খেলাধুলায় ‘সংকট সৃষ্টির’ আশঙ্কা করছেন চট্টগ্রামের ক্রীড়া সংগঠকেরা। তাঁরা বলছেন, ঢাকা ছাড়া দেশের অন্যান্য জেলার স্টেডিয়ামগেুলো জেলা ক্রীড়া সংস্থা তাদের খেলাধুলা এবং প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহার করে। একইভাবে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা তাদের নিজস্ব ইভেন্টগুলো পরিচালনা করে। এম এ আজিজ স্টেডিয়াম আগে থেকেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু হিসেবে তালিকাভুক্ত।
আমরা মনে করি এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আরও খোলামেলা আলোচনা ও অংশীজনের মতামত নেওয়া দরকার। মাঠটি বাফুফেকে দিলে ফুটবলের উন্নয়ন হবে বটে তবে বঞ্চিত হবে অন্য খেলাধুলা এবং খেলোয়াড়েরা। সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করছি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। ফিফার অর্থ দিয়ে চট্টগ্রামে আরেকটি স্টেডিয়াম নির্মাণের কথা ভাবা যায়।