সুপ্রভাত ডেস্ক »
সম্প্রতি ভারতীয় উজানের পানি ও অতিবৃষ্টির কারণে ফেনীতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা হয়। এতে জেলার ৬ উপজেলায় বন্যায় প্লাবিত হয়ে লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। অনেকেই জোয়ারের পানিতে ভেসে যায় তবে তখন মৃতের সংখ্যা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ইতোমধ্যে পানি কমে যাওয়ায় অনেকের গলিত লাশ পাওয়া যাচ্ছে।
শুক্রবার (৩০ আগস্ট) রাতে পুলিশের প্রশাসনের বরাতে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২৩ জন।
এখন পর্যন্ত যাদের মরদেহ পাওয়া গেছে তারা হলেন- ফেনী সদর উপজেলার লালপুল এলাকায় দুজন অজ্ঞাত পুরুষ (৩৩), (৪৫) ও তের বাড়িয়ার সালেহ আহমদের মেয়ে উম্মে সাইমার (৯) মরদেহ পাওয়া যায়। এ ছাড়া ছাগলনাইয়া উপজেলায় অজ্ঞাত নারী (৩৮), উত্তর মন্দিয়া গ্রামের ফুরফুরের নেছা (৭৫), কাশিপুর গ্রামের আইউব খান (৬০), পরশুরাম উপজেলার ধনিকুন্ডা এলাকার আমির হোসেনের ছেলে সাহাব উদ্দিন (৭০), মির্জানগরের দেলোয়ার হোসেন (৫০); ফুলগাজী উপজেলার নোয়াপুরের হাবিবের স্ত্রী শাকিলা (২২), উত্তর করইয়ার বেলালের ছেলে কিরণ (২০), দক্ষিণ শ্রীপুরের মিজানুর রহমানের ছেলে রাজু (২০), কিসমত বাসুডার রহিম বাদশার ছেলে আবুল খায়ের (৫০), লক্ষ্মীপুরের সিরাজুল ইসলামের ছেলে সৈয়দ তারেক (৩২), শনির হাটের নুর ইসলামের মেয়ে রজবের নেছা (২৫), পূর্ব দরবারপুরের ইউসুফ (৬০); সোনাগাজী উপজেলার সমপুরের মাবুল হকের ছেলে নাঈম উদ্দিন (২৮), অজ্ঞাত পুরুষ (৩৮), অজ্ঞাত নারী (৩৮), ছাড়াইতকান্দির শেখ ফরিদের ছেলে আবির (৩) ,অজ্ঞাত পুরুষ (৪০), অজ্ঞাত পুরুষ (২২) এবং দাগনভূঞা উপজেলার করিমপুরের নুর নবীর ছেলে নূর মোহাম্মদ মিরাজ (৮ মাস) ও আলমপুরের হুমায়ুন কবিরের ছেলে জাফর ইসলাম (৭)।
এর আগে, গত ২৪ আগস্ট রাতে ফেনী শহরের মিজান রোডে সোনালী ব্যাংকের সামনে হাঁটুপানিতে একটি মরদেহ ভেলায় ভাসতে দেখেন স্থানীয়রা। পরে সেখানে লোকজন ভিড় জমান। পরে কয়েকজন সেই লাশটির জানাজা ও দাফনের জন্য নিয়ে যান। পরদিন রবিবার (২৫ আগস্ট) ফেনী সদর উপজেলার লালপোল এলাকার উত্তর গোবিন্দপুর গ্রামে বন্যায় ভেসে আসে এক শিশুর লাশ।
প্রবাসী মাসুদ খান নামে এক ব্যক্তি ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘আমার বাবাকে গত ২৩ আগস্ট বিকালে কলাগাছের ভেলা দিয়ে বন্যার পানিতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আপনারা যারা ওখানে উপস্থিত ছিলেন কীভাবে পারলেন এটা? দরকার হলে বাইরে ভেলাতে রেখে আরেকটা দিন অপেক্ষা করতেন। কেউ বোট বা কোনও উদ্ধারকর্মী আসেনি। একটা বোট নিয়ে কেউ আসলে আমার বাবাকে ফ্রিজিং করে রাখা যেত। মনের ভেতর আগুন জ্বলছে কীভাবে কোথায় আছে? আল্লাহ, আমার বাবাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করো।’
উল্লেখ্য, গত ২০ আগস্ট দুপুর থেকে ফেনীতে বন্যা শুরু হয়। পরদিন দুপুর থেকে তা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। জেলার পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলা শুরুতে বন্যাকবলিত হলেও পরে ফেনী সদর, সোনাগাজী ও দাগনভূঞা ছড়িয়ে পড়ে। ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ে পড়েন ফেনীর বাসিন্দারা।