নিজস্ব প্রতিবেদক »
বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে চলেছে। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় শুধু নিম্নবিত্ত নয়, দুর্বিষহ হয়ে উঠছে মধ্যবিত্তের জীবনও। চাল, ডাল, চিনি, পেঁয়াজ, জিরা, রসুন, মরিচ, আদা, হলুদ, দারুচিনি, লবঙ্গ, ডিম- সবকিছুরই দাম বাড়ছে লাগামহীন। বাজারের এমন পরিস্থিতিতে অনেকটা অসহায় নি¤œ মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত। এতে শঙ্কা প্রকাশ করছেন ভোক্তারা।
তারা মনে করেন, রমজানের দুই মাস আগে থেকে এভাবে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকলে, রমজান মাসে পণ্য কেনা কঠিন হয়ে পড়বে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরীর রেয়াজউদ্দিন ও বক্সিরহাট কাঁচাবাজারে সরেজমিনে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে হাঁসের ডিমের বাজার ডজন প্রতি ২০০ টাকা ছাড়ালেও লেয়ার মুরগির ডিমের দাম ডজনপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে ১২০ থেকে ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ১১৮ থেকে ১২০ টাকা।
এদিকে হুট করেই নগরীর বাজারগুলোতে অস্বাভাবিক বেড়েছে আদা ও রসুনের দাম। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ১০০ টাকার চায়নার আদার দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। রেয়াজউদ্দিন বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা চায়নার আদা কেজিপ্রতি বিক্রি করছেন ২২০ টাকা। যা দুই সপ্তাহ আগে ছিল ১০০ থেকে ১১০ টাকা। অন্যদিকে রসুনের কেজি ১৭০ টাকা ছাড়িয়েছে।
এ প্রসঙ্গে রেয়াজউদ্দিন বাজারের কাঁচামালের আড়তদার আকতার হোসেন বলেন, ‘বাজারে আদা ও রসুন যোগান কম। আমি পাশ্ববর্তী দোকান থেকে এনে বিক্রি করছি। ডলার সংকট ও এলসি খুলতে পারছি না। মায়ানমারের আদাও বাজারে নেই।’
তাছাড়া শীতকালীন প্রত্যেক সবজিতে কেজিপ্রতি ১০ টাকার বেশি দাম বেড়েছে। কাঁচা মরিচ কেজিপ্রতি ১২০ টাকা ছাড়িয়েছে।
রেয়াজউদ্দিন ও বক্সিরহাট কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায় গরু ও খাসির মাংসের দাম কেজিতে ৫০ টাকা করে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০-২৫০ টাকার নিচে নেই কোনো মাছ। ৮৫০ টাকা কেজি গরুর মাংস। ১০০০ থেকে ১১০০ টাকা কেজি খাসির মাংস, সবজির ভরা মৌসুমে তিন সপ্তাহ ধরে ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে সবজির বাজার থাকলেও গতকাল রিয়াজউদ্দিন বাজারে আড়তে বাড়তি দামে সবজি বিক্রি হয়েছে।
রিয়াজউদ্দিন বাজারের মুরগির দোকানগুলোতে দেখা যায়, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকায়। লেয়ার ও সোনালি মুরগির কেজি ২৫০-২৮০ টাকা। দেশি মুরগি ৪২০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে মাছ বাজারও কিছুটা বাড়তি। বাজারে সাগরের মাছের পর্যাপ্ত যোগান থাকলেও কমছে না মাছের দাম।
রেয়াজউদ্দিন বাজারে দেখা যায়, পাবদা ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা, পোয়া ৩০০ টাকা, চিতল ৪০০ টাকা, রুই ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, কোরাল (সাইজভেদে) ৩২০ থেকে ৮০০ টাকা, বাটা মাছ ৩২০ থেকে ৬০০ টাকা, এক কেজি ওজনের ইলিশ ৮৫০ টাকা, কাতলা ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, চিংড়ি ৫৮০ থেকে ৭৫০ টাকা, শোল ৫৫০ টাকা, টাকি ৪০০ টাকা, শিং ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাছের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রিয়াজউদ্দিন বাজারের মাছ ব্যবসায়ী মানিক দাস বলেন, ‘শীতকালে জেলেরা সাধারণত মাছ ধরতে কম যায়। বাজারে মাছের যোগানও কম। যার কারণে মাছের দাম বাড়ছে। তবে হোটেলগুলোতেই বড় মাছ বিক্রি হচ্ছে। খুব কম সংখ্যক সাধারণ মানুষই মাছ কিনছে। অতিরিক্ত দাম নিয়ে আমাদেরও কিছু বলার নেই।’
বাজারে শীতের সবজির ভালো যোগান থাকার কারণে তিন সপ্তাহ ধরে ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে থাকলেও আবার দাম বাড়ছে। দুই-একটি ছাড়া বেশিরভাগ সবজির কেজি ৪০ টাকার ওপরে। কোনোটির দাম ১০০ টাকাও ছুঁয়েছে। টমেটো ৪০ টাকা, বেগুন ৪০ টাকা, তিতা করলা ১০০ টাকা, শিম ৪০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, গাজর ৬০ টাকা, ফুলকপি ৪০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, কাঁচামরিচ ১২০ টাকা, নতুন আলু ৩০ টাকা, শালগম ৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া লাউ কেজিপ্রতি ৩০ টাকা বিক্রি হয়েছে।
সবজি বিক্রেতা ফারুক হোসেন বলেন, ‘সীতাকু- থেকে বেশি দামে সবজি কিনতে হয়েছে। একমাস ধরে সবজির বাজার কম থাকলেও আজকে থেকে আড়তে একটু বাড়তি দামে হচ্ছে।’
নগরীর আগ্রাবাদের এক কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক সালাউদ্দিন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের মতো সাধারণ মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। বাজার ব্যবস্থা দিন দিন যেভাবে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের দখলে চলে যাচ্ছে এতে সরকারের দৃষ্টি কামনা করছি। তা না হলে নিম্ন আর মধ্যবিত্তের অবস্থা কাহিল হয়ে যাবে। বানিজ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণেই কিছু পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। আর অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন কারসাজি করে দাম বৃদ্ধি না করতে পারে এজন্য প্রশাসন মাঠে কাজ করবেন। আমাদের মতো সাধারণ জনগণের দিকে চেয়ে প্রশাসন যেন সে প্রতিশ্রুতি রাখে।’