সুপ্রভাত ডেস্ক »
আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে সামষ্টিক অর্থনীতির যে চলকগুলো ধরা হয়েছে, সেগুলো ‘বাস্তবসম্মত হয়নি’ বলে মনে করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি। প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগের যে লক্ষ্যমাত্রা বাজেটে ধরা হয়েছে, তা অর্জন কঠিন হবে বলেও মত তাদের।
বাজেট ঘাটতি পূরণে ব্যাংক খাত থেকে যে ঋণের কথা বলা হয়েছে, সেটি মূল্যস্ফীতি বাড়াবে বলে মনে করছে সিপিডি, যদিও অর্থমন্ত্রী এই মূল্যস্ফীত ১০ শতাংশ ছুঁই ছুঁই থেকে নামিয়ে ৬ শতাংশে করার লক্ষ্য ঠিক করেছেন। কারও আয় করমুক্ত সীমার নিচে হলেও সরকারি ৩৮টি সেবা নিতে টিআইএনের বিপরীতে দুই হাজার টাকা কর নেওয়ার বিধানটি বৈষম্যমূলক বলে মনে করছে সিপিডি।
সব মিলিয়ে তাদের ভাষ্য, অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় আগামী অর্থবছরের বাজেটটি ‘সময়োপযোগী হয়নি’; চলমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় আরও অনেক উদ্যোগ নিতে পারতেন মন্ত্রী।
জাতীয় সংসদে বাজেট প্রস্তাবের পরদিন শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে বাজেট পর্যালোচনা তুলে ধরে সিপিডি। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
তিনি বলেন, জিডিপি ও বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে যে ধরনের প্রক্ষেপণ করা হয়েছে সেখানে।
যেসব অনুমিতি বা অর্থনীতির সূচক ধরা হয়েছে, সেগুলোকে গতবছরের সঙ্গে তুলনা করে আমাদের মনে হয়েছে, এই সূচকগুলোর বাস্তবতার সঙ্গে তেমন মিল নেই।”
সংস্থার সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
মূল প্রবন্ধে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, এই কঠিন সময়ে কঠিন কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ ছিল যা নেওয়া হয়নি।
‘রেমিটেন্স নি¤œমুখী। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও কিন্তু নি¤œমুখী। বৈদ্যুতিক এবং জ্বালানি খাতে ব্যাপক একটা ঘাটতি দেখা গেছে। এর ফলে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগের বিষয়ে বাজেটের বক্তব্য তুলে ধরে তিনি বলেন, নতুন অর্থবছর ২০২৩-২০২৪ এ জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। গত অর্থবছরেও ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হয়েছিল। পরে এটাকে নামিয়ে ৬ শতাংশ করা হয়।
সরকারি বিনিয়োগের হার ৬ দশমিক ২ শতাংশ আর ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ জিডিপির ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ ধরা হয়েছে। কিন্তু ২০২৩ সালে যেটা ধরা হয়েছিল, তার চেয়ে কম হয়েছে এখন পর্যন্ত; সেটা ২১ দশমিক ৮ শতাংশ। এখান থেকে লাফ দিয়ে ২৭ শতাংশ কীভাবে হবে? সেটা আমাদের কাছে মনে হচ্ছে একটি উচ্চাবিলাষী।
ব্যক্তিখাতে ঋণ প্রবাহ নিয়ে ফাহমিদা বলেন, ব্যক্তি খাতে ঋণ প্রবাহ ১৫ শতাংশ ধরা হয়েছে। এই বছরের ঋণ প্রবাহ যেটা ধরা হয়েছে সেটা গত বছরের ধরা ঋণ প্রবাহের সঙ্গে মিলছে না।
ব্যক্তি খাতের যে বিনিয়োগের হার ধরা হয়েছে সেটা এমন ঋণ প্রবাহ দিয়ে কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তা আমাদের বোধগম্য নয়।
মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও কঠিন মনে হয়েছে ফাহমিদার কাছে। তিনি বলেন, “আমাদের আমদানিকৃত মূল্যস্ফীতির কথা বলা হলেও বৈশ্বিক বাজারে এখন সব পণ্যের দাম নি¤œমুখী। তাই মূল্যস্ফীতিকে এর ওপর চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না, আমাদের অভ্যন্তরীণ অনেক দুর্বলতা আছে, করকাঠামোর মধ্যে আছে, প্রাতিষ্ঠানিক ও মনিটারি পলিসির মধ্যেও দুর্বলতা আছে।
মুদ্রানীতির সঙ্গে আমাদের আর্থিক নীতির যদি সমন্বয় না থাকে তাহলে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ খুবই কঠিন হবে।
‘দুই হাজার’ টাকা কর ‘বৈষম্যমূলক’
করমুক্ত আয় সীমা তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা করাকে ‘ভালো বিষয়’ বলে উল্লেখ করেন সিপিডি নির্বাহী পরিচালক। তবে ন্যূনতম দুই হাজার টাকা করারোপের বিষয়টি ভালো হয়নি বলে মত তার। তিনি বলেন, কারো যদি আয় সাড়ে তিন লাখের নিচেও হয়, তাহলে সরকারি ৩৮টি সেবা নিতে টিন লাগবে। করযোগ্য আয় না থাকলেও তাকে দুই হাজার টাকা দিতে হবে।
মানুষকে স্বস্তি দিতে এখানে করমুক্ত আয় বাড়িয়ে আবার যার করযোগ্য আয় নেই তার উপর দুই হাজার টাকার কর আরোপ করা এটা কীভাবে যুক্তিযুক্ত হয় তা আমরা খুঁজে পাই না।
তিনি বলেন, যে কর দেওয়ার যোগ্য, ক্ষমতা-আয় আছে সেই তো কর দেবে, কিন্তু যার নাই তার ওপর আবার বসিয়ে দিলাম। এটা সাংঘর্ষিক ও বৈষম্যমূলক। নৈতিকভাবেও এটা ঠিক না। এটা অর্থনৈতিক চাপ বাড়াবে। ফল মূল যে উদ্দেশ্য ছিল সেটিও নষ্ট হয়ে গেল।