বাজেট সময়োপযোগী হওয়া বাঞ্ছনীয়

গত বৃস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ সালের বাজেট উত্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এটি তাঁর প্রথম বাজেট এবং সে সঙ্গে এটি দেশের ৫৩তম, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২৫তম বাজেট। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বাজেট দিয়েছিলেন দেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। একই সঙ্গে তিনি দুই অর্থবছরের বাজেট দিয়েছিলেন। এর আগে মুজিবনগর সরকার ১৯৭১ সালের ১৯ জুলাই দৈনন্দিন ও অপরিহার্য ব্যয় নির্বাহে একটি পেশ করেছিল। সব মিলিয়ে ১২ জন অর্থমন্ত্রী বা অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্তরা এই বাজেট দিয়েছেন। নতুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী হলেন বাজেট দেওয়া ১৩তম অর্থমন্ত্রী।
প্রস্তাবিত বাজেটের আকার সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চেয়ে এবারের বাজেটের আকার বাড়ছে চার দশমিক ছয় শতাংশ। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ছিল সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। পরে এটি সংশোধন করে সাত লাখ ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা করা হয়।
বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকছে পাঁচ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। বাকি দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকবে। দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ইতোমধ্যে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা সাত ছিল শতাংশের বেশি যা আগামী অর্থবছরে ছয় দশমিক ৭৫ শতাংশ হতে পারে। প্রস্তাবিত বাজেটে সরকার পাঁচ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে, যা গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৪১ হাজার কোটি টাকা বেশি।
প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ আট দশমিক এক শতাংশ বাড়িয়ে ৪১ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা করার কথা বলা হয়েছে। এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই বরাদ্দ ছিল ৩৮ হাজার ৫১ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ আট দশমিক এক শতাংশ বাড়িয়ে ৪১ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা করার কথা বলা হয়েছে। এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই বরাদ্দ ছিল ৩৮ হাজার ৫১ কোটি টাকা।
বাজেটে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ প্রায় ১৫ শতাংশ কমিয়েছে সরকার। এবার এই খাতে ৩০ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা গত অর্থবছরে ছিল ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা।
সংসদ সদস্যদের (এমপি) বিদেশ থেকে গাড়ি আমদানিতে সব ধরনের শুল্ক-কর বর্তমানে অব্যাহতি আছে। এ সুবিধা কমিয়ে শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছে সরকার। তাদের ক্ষেত্রে কর অব্যাহতি সুবিধা কিছুটা কমিয়ে আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটা করা হলে সাধুবাদ পাবে সরকার কারণ এটি ছিল একটি বৈষম্যমূলক নীতি।
তবে দুঃখজনক হলো আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) অনুপাতে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ চলতি অর্থবছরের তুলনায় কমেছে। প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষাখাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির তুলনায় ১ দশমিক ৬৯ শতাংশের কথা বলা হয়েছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষাখাতে মোট বরাদ্দ ছিল জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি ছয় দশমিক পাঁচ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার।
আগামী অর্থবছর থেকে নিয়োগ পাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের অবসর পরবর্তী পেনশন সুবিধার পরিবর্তে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এবং অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের বিক্ষোভের মধ্যে অর্থমন্ত্রী এ ঘোষণা দিলেন।
সাধারণ মানুষ বাজেটের অর্থ বোঝে না তবে তাদের ধারণা বাজেট মানে জিনিসের দাম বাড়া। কাজেই এবার বাজেট বাস্তববায়নে সবচেয়ে বেশি নজর দিতে হবে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে কীভাবে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে সহনশীল করা যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখা। এখন সেটাই হবে সময়োপযোগী।