নিজস্ব প্রতিবেদক :
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বাজেটে উচ্চাভিলাষ না থাকলে অভিলাষ পূরণ হয় না। ব্যক্তি জীবনে যেমন অভিলাষ না থাকলে সেই মানুষের লক্ষ্যে পৌঁছানোর কোনো তাগাদা থাকে না। রাষ্ট্রীয় জীবনেও লক্ষ্য ও অভিলাষ থাকতে হয়। তাহলে সেই অভিলাষ ও লক্ষ্য পূরণে তাগাদা থাকে, জাতি এগিয়ে যায়। যেভাবে গত ১১ বছর ধরে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাজেট বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশ আজকে এগিয়ে গেছে এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণের পথে আরো এগিয়ে যাচ্ছে।
শুক্রবার (১২ জুন) বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সাইফ পাওয়ার টেকের উদ্যোগে কোভিট-১৯ মোকাবেলায় ১০০ অক্সিজেন সিলিন্ডার বিতরণ অনুষ্ঠানে বাজেট প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। বাংলাদেশ একটি খাদ্য ঘাটতির দেশ ছিল। আমাদের দেশে মানুষের ঘণত্ব পৃথিবীতে সর্বোচ্চ। প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ১২০০ মানুষের বসবাস। বাংলাদেশের কৃষি জমির পরিমাণ সর্বনি¤œ। ৫০ এর দশকের মাঝামাঝি যখন পৌনে ৫ কোটি জনসংখ্যা ছিল তখন আমাদের দেশ খাদ্য ঘাটতির জনপদে রূপান্তরিত হয়। সেই দেশে আজকে লোকসংখ্যা ১৭ কোটি এবং কৃষিজমি এক ইঞ্চিও বাড়েনি, বরং ২০-৩০ শতাংশ কমেছে। কারণ শহর বড় হয়েছে। বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য ঘরবাড়ি নির্মাণ করতে হয়েছে। রাস্তাঘাট বড় হয়েছে। দু’লেইনের রাস্তা চারলেইন হয়েছে। অনেক মিল কারখানা হয়েছে। কিন্তু কৃষিজমি কমা এবং মানুষ তিনগুণ বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও আজকে বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে রূপান্তরিত হয়েছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘১১ বছরে বাজেটের অঙ্ক সাড়ে ৬ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা যখন ২০০৯ সালে সরকার গঠন করি তখন দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ৬০০ ডলার। আজকে সেটি ২০৮০ ডলারে পরিণত হয়েছে। অর্থাৎ মানুষের মাথাপিছু আয় সাড়ে তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এব যে বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে এই বাজেট বাস্তবায়নের পর দেশের মানুষের জনপ্রতি উপার্জন হবে প্রতিবছর প্রায় ২ লক্ষ টাকা। গত ১১ বছরে আমরা যদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যোগ করি তাহলে সেটি পৃথিবীর সর্বোচ্চ। গতবছর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৮.১৫ শতাংশ। যেটি পৃথিবীর কয়েকটি উচ্চ প্রবৃদ্ধির দেশের মধ্যে একটি। এই করোনা ভাইরাসের মধ্যেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে অর্থমন্ত্রী একটি সাহসী বাজেট ঘোষণা করেছেন।
সমালোচনার জবাবে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘পত্র-পত্রিকায় অনেক সমালোচনা ও বিশ্লেষণ দেখতে পাচ্ছি। বিশেষজ্ঞরা তাদের মতামত দিচ্ছেন। এদের কিছু চিহ্নিত বিশেষজ্ঞ আছে। তার সবসময় মতামত দেন। আমরা দেখতে পেয়েছি গত ১১ বছর বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। ততবার সিপিডি বাজেটের প্রশংসা করতে পারেনি। কিন্ত প্রতিবারই তারা বলেছে বাজেট উচ্চাকাক্সক্ষী, এটি বাস্তবায়নযোগ্য নয়। গত ১১ বছরের যদি হিসাব নিয়ে থাকি তাহলে দেখতে পায় প্রতিবার বাজেট ৯৪-৯৫ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে। যেটিকে উচ্চাভিলাষী বাজেট বলা হয়েছিল এবং এবারও তাদের একই কথার ধারাবাহিকতা লক্ষ্য করছি। একিভাবে তারা সমালোচনা করছে। যদি উচ্চাভিলাষ না থাকে, যদি আশা, লক্ষ্য না থাকে তাহলে সে লক্ষ্য পূরণের তাগাদাও থাকে না। আমাদের ১১ বছর ধরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের লক্ষ্য ছিল, আমরা সেই লক্ষ্য পূরণ করে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করা সম্ভবপর হয়েছে। বাংলাদেশে দারিদ্রতার হার ৪০ থেকে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে।’
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে একটি সামাজিক কল্যাণ রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করতে চান। সেজন্য তিনি বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, স্বামী পরিত্যক্ত ভাতা, পঙ্গুভাতাসহ নানা ধরনের ভাতা চালু করেছেন। বাংলাদেশের মেয়েরা কখনো ভাবেনি স্বামী পরিত্যক্ত ভাতা পাবেন, এইধরনের ভাতায় বর্তমানে ৮৮ লক্ষ সুবিধাভোগী আছে। এইবার আরো ১১ লাখ মানুষকে নতুন করে সামাজিক সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে রাখা হয়েছে। এছাড়া করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, কালো টাকা সাদা করার সিস্টেম চালু করেছিলেন বিএনপির অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান। তিনি নিজেও কালো টাকা সাদা করেছিলেন, তাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নিজেও কালো টাকা সাদা করেছিলেন। অর্থনীতির স্বার্থে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই ধরণের অপ্রদর্শিত টাকাকে বৈধ করার সুযোগ দেয়া হয়। বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদের উচিত সেই তথ্য ও উপাত্ত যাচাই বাছাই করা এবং আয়নায় নিজেদের চেহারাটাও একটু দেখা।
চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত হচ্ছে না এমন প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামে এনিয়ে কয়েকটি সমন্বয় সভা হয়েছে। কয়েকটি হাসপাতাল চালু করা হয়েছে। তবে চট্টগ্রামে নয় শুধু সারাদেশ এবং পৃথিবী জুড়েই আইসিইউ সঙ্কট আছে। তবে এভাবে রোগী ফেরত দেওয়া কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়। যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান রোগী ফেরত দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। শনিবার থেকে প্রশাসন মোবাইল কোর্ট শুরু করবে। প্রয়োজনে তাদের লাইসেন্সও বাতিল হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদ, জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন, বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মোস্তফা খালেদ আহমদ, সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি, সাইফ পাওয়ার টেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার রুহুল আমিন।
স্বদেশ