এসব পণ্য ব্যবহারে স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে : চিকিৎসক #
রাস্তা থেকে পণ্য না কেনার অনুরোধ ওষুধ প্রশাসনের #
রুমন ভট্টাচার্য :
করোনা ভাইরাসকে পুঁজি করে নকল ও ভেজাল সুরক্ষা পণ্যে ছেয়ে গেছে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের বাজার। রাস্তা, ফুটপাত থেকে শুরু ওষুধের দোকান এমনকি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ও মুদি দোকানেও বিক্রি হচ্ছে নকল সুরক্ষা সামগ্রী। এতে ভোক্তারা যেমন প্রতারিত হচ্ছে, তেমনি নকল পণ্য ব্যবহারে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। বাজারে অভিযান চললেও থামছে না ভূঁইফোড় ব্যান্ডগুলোর অনৈতিক কারবার। এসব নকল পণ্য ব্যবহার করে জীবাণুমুক্ত হতে গিয়ে উল্টো ত্বকের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, বলছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. রজত শংকর রায় বিশ্বাস বলেন, ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজার জাতীয় পণ্যে ৭০ শতাংশের নিচে অ্যালকোহল থাকলে তাতে হাত জীবাণুমুক্ত হবে না। যারা এসব নকল পণ্য ব্যবহার করবে তারা মনে করবে, তারা ভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষিত আছে; কিন্তু আসলে সুরক্ষা দেবে না। তাই ভালোভাবে দেখেশুনে প্রতিষ্ঠিত ব্যান্ডের সুরক্ষা পণ্য রেজিস্টার্ড দোকান থেকে কিনতে হবে।’
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, হ্যাক্সিসল, হ্যান্ড রাব, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্রান্ডের নামে নকল বিভিন্ন মানহীন পণ্য ও নকল জীবাণুনাশক সামগ্রী দিনদুপুরে প্রকাশ্যে অহরহ বিক্রি হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, নগরীর বিভিন্ন স্থানে রাস্তের পাশে ফুটপাতে টেবিল বসিয়ে অস্থায়ী দোকান ও ভ্যানে করে বিক্রি হচ্ছে মানহীন নকল মাস্ক, হাত জীবাণুমুক্ত করার সামগ্রীসহ বিভিন্ন সুরক্ষা পণ্য। বেশিরভাগ পণ্যের উৎপাদন ও মেয়াদের কোনো তারিখ গায়ে লেখা নেই। করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সাধারণ মানুষ এসব নকল সুরক্ষাসামগ্রী যাচাই-বাছাই ছাড়াই কিনছে।
এসব নকল সুরক্ষা পণ্য বিক্রির অপরাধে নগরীর বিভিন্ন স্থান নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে ওষুধ ও জেলা প্রশাসন। তবুও থামছে না এসব অসাধু চক্রের দৌরাত্ম্য।
বাজারে নিয়মিত অভিযান জোরদারের পাশাপাশি ভোক্তাদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘দেশীয় কোম্পানিগুলো তাদের পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় এবং ওষুধের দোকানে নিয়মিত না পাওয়ার সুযোগে এক দল অসাধু ব্যবসায়ী নকল করে বাজারে বিক্রি করছে।’
নগরীর হাজারিলেইনে ফুটপাতের একজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা জীবাণুনাশক সকল পণ্য রেয়াজুদ্দিন বাজার, খাতুনগঞ্জ ও পাথরঘাটা এলাকা থেকে পাইকারি দামে কিনে এনে বিক্রি করি। পণ্যে ভেজাল আছে কি নেই, সেটা আমরা কিভাবে বুঝব?
হাজারিলেইনের একটি ওষুধের দোকানে কথা হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সুজন বসাকের সাথে। তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠিত ব্যান্ডের পণ্যের বড়ই অভাব বাজারে, পাওয়টাই দুষ্কর। বাজারে যেসব পণ্যের সরবরাহ বেশি সেসব পণ্যই মানুষকে বাধ্য হয়ে কিনতে হচ্ছে। এছাড়া কোনো উপায় নেই।’
এসিআই লিমিটেড কোম্পানির চট্টগ্রামের জোনাল ম্যানেজার মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম সুপ্রভাতকে বলেন, ‘নকল স্যাভলন বিক্রি নিয়ে কোম্পানি থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। কিছু অসাধু প্রতিষ্ঠান নি¤œমানের পণ্য বিক্রি করছে বাজারে, যা ভোক্তাদের ঝুঁকির মুখে ফেলছে। বাজারে বর্তমান পরিস্থিতিতে সকল মানুষেরই সুরক্ষা পণ্য ব্যবহার করা দরকার। কিন্তু হঠাৎ করে চাহিদা ব্যাপক বেড়ে যাওয়ায় তা পূরণ করতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। এই সমস্যা দ্রুত কেটে যাবে বলে আশা করছি।’ অসাধু চক্রের দৌরাত্ম বন্ধে প্রশাসনের তৎপরতা আরো বাড়ানো প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম এর সহকারী পরিচালক হোসাইন মোহাম্মদ ইমরান সুপ্রভাতকে বলেন, ‘নকল সুরক্ষা পণ্যের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া অসাধু ব্যবসায়ীদের জরিমানা ও সতর্ক করার পাশাপাশি জব্দকৃত পণ্যগুলো ধ্বংস করা হচ্ছে নিয়মিত।’
তিনি আরো বলেন, ‘রাস্তা ও ফুটপাত থেকে কোনো ধরনের জীবাণুনাশক পণ্য না কিনে রেজিস্টার্ড ওষুধের দোকান থেকে কেনা উচিত। না হয় নকল জীবাণুনাশক ব্যবহারে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। সুরক্ষা পণ্য কেনার সময় সকলকে সচেতন থাকতে হবে।’ অভিযান অব্যাহত থাকলে বলে জানান তিনি।