সুপ্রভাত ডেস্ক »
দেশের অর্থনীতি বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়ছে মুদ্রা প্রবাহ। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে দেশের মুদ্রাবাজারে ছাপানো টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৩১২ কোটি টাকা। যেখানে অর্থবছরের শুরুতে টাকার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৯২ হাজার ৫৩৪ কোটি। এ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে ১৫ হাজার ২৩৯ কোটি টাকার প্রবাহ কমিয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়। খবর অর্থসূচক’র।
তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জুলাই মাস শেষে দেশের মুদ্রাবাজারে ছাপানো টাকার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৯২ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর শেষে যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৩১২ কোটি। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে দেশের মুদ্রাবাজার কিছুটা কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, জুলাইয়ে দেশের প্রচলিত মুদ্রার মধ্যে সরকারি নোট ও কয়েন ছিল ১ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর মাস শেষে সরকারি নোট ও কয়েন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮২১ কোটি টাকায়।
এদিকে জুলাই শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক নোট ছিল ২ লাখ ৯০ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৭৫ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। অর্থাৎ আলোচ্য এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে টাকার প্রবাহ কমিয়েছে।
স্বাধীন রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের অন্যতম প্রতীক যেকোনো দেশের নিজস্ব নোট। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে কাগজি মুদ্রার নাম টাকা। এর প্রচলন শুরু হয় ১৯৭২ সালের ৪ মার্চ। যুগে যুগে এর ব্যাপ্তি অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে দেশের অর্থনীতির ব্যাপ্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি বাজারে বাড়ছে মুদ্রা প্রবাহ।
তথ্য বলছে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ৪ মার্চ দেশের নিজস্ব কাগুজে মুদ্রা চালু হয়। মানচিত্র খচিত প্রথম নোটটি ছিল এক টাকার। এক টাকার নোটটিতে অর্থ সচিব কে এ জামানের স্বাক্ষর ছিল। ১৯৭৩ সালে ৫, ১০ ও ১০০ টাকার নোট ইস্যু করে বাংলাদেশ। এরপর ৫০ ও ৫০০ টাকার নোটের প্রচলন করা হয় ১৯৭৬ সালে। ১৯৭৯ সালে ইস্যু করা হয় ২০ টাকার নোট। দেশে দুই টাকার নোট চালু হয় ১৯৮৮ সালে। ২০০৯ সালের ১৭ জুলাই বাজারে আনা হয় সবচেয়ে বেশি মানের ১০০০ টাকার ব্যাংকনোট। আর ২০২০ সালে সবশেষ বাজারে আসে ২০০ টাকার নোট।
ব্যবহারের পদ্ধতিগত কারণে কাগুজে নোটের স্থায়িত্ব কমছে। ছয় মাস না যেতেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে কাগুজে নোট। সে তুলনায় খরচ বেশি হলেও ধাতব কয়েনের স্থায়িত্বও অনেক বেশি।
নষ্ট হয়ে যাওয়া টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকে সংরক্ষণ করার পর তা পুড়িয়ে ফেলা হয়। পুড়িয়ে ফেলা ব্যবহার অযোগ্য নোট ও বাজার সার্কুলেশন বা অর্থের প্রবাহের বিষয়টি দেখেই পরে নতুন নোট আনা হয়। অর্থাৎ, নতুন নোট ছাপানো হয়। এক্ষেত্রেও মার্কেট টুলস ব্যবহার করে পর্যালোচনা করে দেখা হয়, কী পরিমাণ নতুন টাকার দরকার পড়ে। সেভাবেই ছাপিয়ে বাজারের চাহিদার ভিত্তিতে ছাড়া হয়।
বাংলাদেশের টাকা ছাপানোর কারখানাটির নাম টাঁকশাল। টাঁকশালে টাকা ছাপানো শুরুর আগে অন্য দেশ থেকে ছাপানো হতো। এর মধ্যে রয়েছে ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি এবং ইংল্যান্ড। টাঁকশালের টাকা ছাপানোর ধাপগুলো খুবই গোপনীয়। সেখানে প্রায় ১২টি ধাপ পেরোতে হয় টাকা তৈরির জন্য। কারখানার অভ্যন্তরে সব কর্মচারীর মোবাইল ফোন কিংবা যে কোনো ধরনের ডিভাইস ব্যবহারও নিষিদ্ধ।