নগরের ১০ কেন্দ্রে আজ থেকে মিলবে টিসিবির পণ্য
নিজস্ব প্রতিবেদক »
বাজারে প্রতিটি জিনিসের দামে ঊর্ধ্বগতি। মানুষের আয়ের সাথে মিল নেই ব্যয়ের হিসাবে। নিত্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব জিনিসের দর যে হারে বাড়ছে তা নিয়ে শঙ্কায় নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা। ব্যয়ের যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।
নগরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতার সংখ্যা কমেছে। এমনকি বাজারের অনেক দোকানি মালামাল ভ্যানে করে পাঠাচ্ছে পাড়া-মহল্লার গলিতে। এরপরও ক্রেতা-বিক্রেতার কপালে চিন্তার ভাঁজ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শিবু নামে কর্নেলহাট সিটি করপোরেশন বাজারের এক মুদি দোকানদার বলেন, ‘আগের সাথে তুলনার করার আর কোনো সুযোগ নাই। আমরা এখানে দোকানদার হলেও অন্য সব প্রয়োজনীয় জিনিসের ক্রেতা। এখন বাজারের যে অবস্থা, এতে দোকান চালানো মুশকিল হয়ে পড়েছে। আমাদের মালামাল তুলতে কিছু লোন (ঋণ) নিতে হয়েছে। এখন তা পরিশোধ করতে কষ্ট হচ্ছে। কিভাবে পোষাবো তা বুঝতে পারছি না।’
একই সুরে একই এলাকার চাল বিক্রেতা রতন বলেন, ‘ব্যবসা করার সুযোগ নাই। দুই-তিন দিন পর পর চালের দাম বাড়ছে। বাজার খুবই অস্থির হয়ে গেছে।
কিন্তু এটা কথা ক্রেতাদের বোঝানো যাচ্ছে না। গত মাসে যে লোক ২৯শ’ টাকায় চালের বস্তা নিয়েছে, এ মাসে তাকে ৩৪শ’ টাকা বললে সেতো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবেই। আমরা বুঝতে পারছি না, কিভাবে ব্যবসা করবো। আয় কমে গেছে। কিন্তু প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে। মনে হচ্ছে, করোনার মতো অনেককে নতুন বছরের শুরুতে গ্রামে ফিরে যেতে হবে।’
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, বিগত এক বছরের ব্যবধানে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে আটার। আটার দাম প্রতি কেজি ৩৩-৩৫ টাকা থেকে বেড়ে এখন ৬২-৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এরপরে রয়েছে- ময়দা, চিনি, মসুর ডাল, সয়াবিন ও চাল। ময়দার দাম কেজি ৪৩-৪৫ টাকা থেকে ৬৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেড়ে এখন ৭০-৭৫ টাকায়, চিনির দাম কেজি ৭৫-৮০ টাকা থেকে ৪৫ দশমিক ১৬ শতাংশ বেড়ে এখন ১১০-১১৫ টাকায়, মসুর ডালের দাম প্রতি কেজি ১০০-১১০ টাকা থেকে ২৬ দশমিক ১৯ শতাংশ বেড়ে এখন ১৩০-১৩৫ টাকায়, সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটার ১৪০-১৪৫ টাকা থেকে ২১ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে এখন ১৭০-১৭৫ টাকায় এবং চালের দাম কেজি ৫৮-৬৮ টাকা থেকে ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেড়ে ৬২-৭২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
টিসিবির বাজারদরের সাথে মিল থাকে না বলে মন্তব্য করছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই। কর্ণফুলী বাজারের একজন ক্রেতা বলেন, টিসিবির তথ্যে যে দাম দেওয়া হয় বাজারে তার চেয়ে কমপক্ষে পাঁচ টাকা বেশি থাকে। এসব করার মাধ্যমে সরকারি সংস্থার কর্মচারীরা সরকারের কাছে প্রকৃত সত্য গোপন করছে। সরকার সঠিক তথ্য পাচ্ছে না বলেই সরকার স্বাভাবিক নিয়মে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার কথা বলছে। সরকার যদি বাজারের প্রকৃত অবস্থা জানতো, তাহলে অবশ্যই আমরা এ জিম্মি অবস্থা থেকে মুক্তি পেতাম।’
আজ সোমবার থেকে নগরের ১০টি কেন্দ্রে টিসিবি পণ্য বিক্রি শুরু হবে। এরমধ্যে নগরে ৩ লাখ ও বিভিন্ন উপজেলায় দুই লাখ ৩৫ হাজার পরিবার এ পণ্য ক্রয়ের সুযোগ পাবেন। এতে থাকবে এক কেজি চিনি, দুই কেজি মসুর ডাল ও ২ লিটার তেল।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম টিসিবি অফিসের সহকারী কার্যনির্বাহী হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আগের মতো ওয়ার্ড কাউন্সিলররা যে তালিকা আমাদের দিয়েছেন, শুধু সেসব কার্ডধারীরাই পণ্য পাবেন। ডিলারদের বরাদ্দপত্রের মাধ্যমে এ পণ্য দেওয়া হয়। একজন ভোক্তা ৫৫ টাকায় এক কেজি চিনি, ৬৫ টাকা করে দুই কেজি মসুর ডাল এবং ১১০ টাকা করে দুই লিটার সয়াবিন তেল পাবেন।’
কিন্তু এ টিসিবি কার্ড পর্যাপ্ত নয় বলে দাবি করেছেন অনেকে। এ নিয়ে নগরের কসমোপলিটন এলাকার বাসিন্দা মুহাম্মদ সোহেল বলেন, প্রথমে যখন টিসিবি কার্ড করেছিলো, তখন আমরা এ কার্ড করিনি। কারণ তখন বাজার এতোটা খারাপ হয়নি। কিন্তু এখন বাজারে গিয়ে কিছু কিনতে পারছি না। সব জিনিসের দাম এতো বেশি, পাঁচটা পণ্য কিনতে গিয়ে দুটা কিনে ঘরে ফিরতে হয়। এখন টিসিবি কার্ডের দরকার হয়ে পড়েছে। কিন্তু আমরা আর কার্ড পাচ্ছি না।’
এছাড়া বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চাকরিজীবীরা মেসে থাকেন। তারাও এ কার্ডের আওতায় না থাকায় সুলভে পণ্য পাচ্ছেন না। এ নিয়ে ২ নম্বর গেট এলাকার একটি মেসে থাকা শাহাদাত বলেন, ‘আমাদের মেসের খরচ অনেকে বেড়েছে। নতুন বছরে বাসা ভাড়াও বাড়বে। তাই এ কার্ড আমাদের জন্য করার সুযোগ থাকলে ভালো হতো।’
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে সক্রিয় সংগঠন ক্যাবের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এম এম নাজের হোসাইন সুপ্রভাতকে বলেন, ‘আমরা বহু আগে থেকে বলে আসছি বাজার ব্যবস্থাপনা নীতিমালার কথা। এটি কোনোভাবে কার্যকর হচ্ছে না। বরং সব ধরনের পণ্য বড় বড় ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি হয়ে আছে। এতে বৈশ্বিক মন্দার সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছেমতো বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে।’