সুপ্রভাত ডেস্ক »
যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ব্র্যান্ড ওয়াল্ট ডিজনি আট বছর পর আবারও তাদের পোশাক কেনার উৎস দেশের তালিকায় বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনার কথা বিবেচনা করেছে বলে জানিয়েছে পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ।
তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড এবং রাসা প্লাজা ধসের ঘটনার পর ২০১৩ সালে ওয়াল্ট ডিজনি বাংলাদেশ থেকে পোশাক কেনা বন্ধ করে দিয়েছিল।
শুক্রবার বিজিএমইএ- এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক শ্রম মান নিরীক্ষা বিবেচনায় নিয়ে ওয়াল্ট ডিজনি তাদের অনুমোদিত সোর্সিং দেশগুলোর তালিকায় আবারও বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি বিবেচনা করেছে বলে ‘বিশ্বস্ত সূত্রে’ জানতে পেরেছে সংগঠনটি। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
তবে ওয়াল্ট ডিজনির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা এখনও আসেনি, সে কথাও বিজিএমইএ জানিয়েছে।
সংগঠনের সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, “বাংলাদেশে পোশাক শিল্পের যে সার্বিক অগ্রগতি ও রূপান্তর ঘটেছে, বিশেষ করে কর্মক্ষেত্রের সুরক্ষা, সামাজিক মান এবং পরিবেশগতভাবে টেকসই ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে, তার স্বীকৃতি এল ওয়াল্ট ডিজনির এই পদক্ষেপে।”
ভবিষ্যতে ওয়াল্ট ডিজনি বাংলাদেশ থেকে কেনাকাটা শুরু করলে পোশাক খাতের সংস্কারের আন্তর্জাতিক উদ্যোগ ‘আরএমজি সাসটেইনেবলিটি কাউন্সিল’ বা আরএসসি এবং আইএলওর ‘বেটার ওয়ার্ড বাংলাদেশ’ প্রকল্পে যুক্ত কারখানাগুলো অগ্রাধিকার পাবে।
২০১২ সালে তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড এবং ২০১৩ সালে সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের কর্মপরিবেশ নিয়ে ক্রেতা দেশগুলোর মধ্যে উদ্বেগ দেখা দেয়। বিদেশি অনেক সংগঠন বাংলাদেশি পোশাক বর্জনের ডাক দেয়।
তার পরিপ্রেক্ষিতে কারখানা পরিদর্শনে ইউরোপীয় ২২৮টি ক্রেতার সমন্বয়ে গঠিত হয় অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ, যা সংক্ষেপে অ্যাকর্ড নামে পরিচিতি পায়। আর একই লক্ষ্যে গঠিত আমেরিকার ক্রেতাদের জোট পরিচিতি পায় অ্যালায়েন্স নামে। পাশাপাশি দাতা সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় রিমেডিয়েশন কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল (আরসিসি) গঠন করে সরকার।
এরপর বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে ব্যাপকভিত্তিক সংস্কার কাজ শুরু হয়। কারখানার অবকাঠামো উন্নয়ন, আগুন থেকে সৃষ্ট দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা, শ্রমিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে বাস্তবায়ন করা হয় বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা। এর বাইরে বিভিন্ন দাতা সংস্থার উদ্যোগে শ্রমিকদের কর্মদক্ষতার উন্নয়নে প্রশিক্ষণ শুরু হয়।
এছাড়া মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর উদ্যোগে উচ্চমূল্যের পণ্য উৎপাদন, পোশাকপণ্যের ভ্যালু সংযোজন ও পণ্যের বহুমুখীকরণেও বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে, যাতে বিনিয়োগ হয়েছে বিপুল অংকের টাকা।
ফলে সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বে কারখানার নিরাপত্তার বিষয়ে বাংলাদেশের সুনাম বেড়েছে। হংকংভিত্তিক সাপ্লাই চেইন কমপ্লায়েন্স সল্যুশনস প্রোভাইডার, ‘কিউআইএমএ’ তাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ‘ইথিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারিং’ দেশের স্বীকৃতি দিয়েছে।
এই রেটিংয়ে স্বাস্থ্যবিধি, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা, শিশু ও তরুণ শ্রমিক, বাধ্যতামূলক শ্রমসহ শ্রম বিষয়ক চর্চাগুলো, শ্রমিক প্রতিনিধিত্ব, শৃঙ্খলাবদ্ধ অনুশীলন এবং বৈষম্য, কর্মঘণ্টা ও মজুরি এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মত মাপকাঠি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
বিজিএমইএ বলছে, বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরিবেশবান্ধব কারখানার অবস্থান বাংলাদেশেই। বাংলাদেশের ১৪৪টি কারখানা ইউএসজিবিসির লিড গ্রিন সনদ পেয়েছে, যার মধ্যে ৪১টি প্লাটিনাম স্তরের।
বিশ্বে বাহারি পোশাকের অন্যতম বড় ক্রেতা ওয়াল্ট ডিজনি বাংলাদেশ থেকে মূলত শিশু কিশোরদের পোশাক কিনত। সোর্সিং কান্ট্রির তালিকা থেকে বাংলাদেশের নাম বাদ দেওয়ার আগে তারা বছরে প্রায় ৫০ কোটি ডলারের পোশাক নিত বাংলাদেশ থেকে।
মহামারী শুরুর আগেও তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। সে সময় বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের মত, যা বিশ্বের মোট পোশাক রপ্তানির ৬ দশমিক ৮ শতাংশ।