বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের সিলেট টেস্ট আজ মাঠে গড়াচ্ছে

সুপ্রভাত ক্রীড়া ডেস্ক »

সফররত জিম্বাবুয়ে ও বাংলাদেশ দলের মধ্যকার দুই টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচ আজ সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে শুরু হচ্ছে। বাংলাদেশ বেশ চেনা প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ের জন্য। ঘরের মাঠে, বাংলাদেশে বহুবার টাইগারদের বিরুদ্ধে খেলা হয়েছে জিম্বাবুয়ের। এবার আরও একবার বাংলাদেশের সাথে মাঠে নামার অপেক্ষায় জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দল। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন। বাংলাদেশের কন্ডিশন ভালোভাবেই চেনা আছে জিম্বাবুয়ের। টেস্ট ক্রিকেটে খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে থাকা জিম্বাবুয়ে তাই ঘুরে দাঁড়াতে চায় এই সিরিজ দিয়ে। সে অনুযায়ী কাজ, প্রস্তুতি সবকিছুই হয়েছে। এবার শুধু মাঠের ক্রিকেটে খেলে দেখানোর পালা।
ক্রেইগ আরভিন বলেছেন, ‘আমাদের সময়টা ভালো যাচ্ছে না টেস্টে। তবে সামনে আমাদের অনেক টেস্ট খেলা রয়েছে। বিষয়টা বেশ রোমাঞ্চকর। এত ম্যাচ থাকায় ধারাবাহিকতা ধরে রাখার ব্যাপার থাকে। এখানে যে দলটা এসেছে তারা বেশ তরুণ। কয়েকজনের আগে বাংলাদেশে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। সময়ের সাথে সাথে তারা আরও পরিণত হয়ে উঠবে বলে আশা করছি। তাদের জন্যও ব্যাপারটা রোমাঞ্চকর।’
দলের কাছ থেকে কী অ্যাটিটিউড চান এমন প্রশ্নের জবাবে আরভিন বলেছেন, ‘প্রথমে বলব, আমি চাই ভয়হীন অ্যাটিটিউড এবং আত্মবিশ্বাস। বাংলাদেশের কন্ডিশনের সাথে ছেলেরা পরিচিত আছে। এখানে অনেক প্রস্তুতি নিয়েছে সবাই। ফলে আত্মবিশ্বাসও পাবে। টেস্ট ক্রিকেটটাকে উপভোগ করতে হবে এবং চ্যালেঞ্জকে আলিঙ্গন করে নিতে হবে।’
বাংলাদেশ সিরিজকে দলে থাকা তরুণদের জন্য সুযোগ হিসেবে দেখছেন আরভিন। তার মতে, ‘তরুণদের জন্য এই সিরিজ ভালো সুযোগ। টেস্ট ক্রিকেট সবচেয়ে কঠিন ফরম্যাট। এখানে মানসিক অনেক শক্তি লাগবে আপনার। তবে তরুণরা বাংলাদেশে এসে ভালো করতে পারলে অনেক আত্মবিশ্বাস পাবে বলে আশা করছি।’
এছাড়া দলের পেসার ব্লেসিং মুজারাবানিকে নিয়ে আরভিন জানিয়েছেন, ‘ব্লেসিং মুজারাবানি দারুণ একজন বোলার। সবসময় তাকে বল করতে দেখাটা দারুণ ব্যাপার। আশা করছি এখানে ২ ম্যাচে সে নিজের কাজটা করতে পারবে।’
আরভিন আরও বলেছেন, ‘উপমহাদেশে খেলার ছোট কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার রয়েছে। শন উইলিয়ামস বাংলাদেশে অনেক ভালো করেছে। ফলে সেভাবে নিজেকে খুঁজে বের করতে হবে তার জন্য কী কী ঠিকভাবে কাজ করছে। শারীরিক, মানসিক প্রস্তুতি সব দিক থেকেই। অনুশীলনে সেসব কাজে লাগাতে হবে। প্রক্রিয়া দেশ থেকেই শুরু হয়েছে। এখানে ভিন্ন কন্ডিশনে এসে মানিয়ে নিতে হবে।’
বাংলাদেশ কী করছে তা না ভেবে নিজেদের কাজেই বেশি মনযোগী আরভিন। তার মতে, ‘আসলে আমার মনে হয় না আমরা এসব সমীকরণ (বাংলাদেশ ঘরের মাঠে টেস্টে হেরেছে) দেখেছি। আমাদের নিজেদের প্রক্রিয়াতে কাজ করতে হবে। নিজেদের শক্তি নিয়ে কাজ করতে হবে এবং তা কাজে লাগাতে হবে। পেসারদের সাহায্য থাকতে পারে কালকে। ফলে সেটা কাজে লাগাতে হবে আমাদেরকে। মোমেন্টাম পেতে হবে।’
নিজেদের শক্তিতে আস্থা রাখছেন অধিনায়ক, ‘আসলে যেকোনো কিছুই সম্ভব। সিরিজ খেলতে গেলে সঠিক মানসিকতায় থাকতে হবে আপনাকে। কার বিরুদ্ধে খেলছেন তা ব্যাপার না। প্রস্তুতির কারণে আপনি এভাবে আগাতে পারেন। আমাদের প্রস্তুতি ভালো হয়েছে। আমার মনে হয় না এমন কিছু আছে যা আমরা কাভার করিনি। এখন কেবল মাঠে গিয়ে বিশ্বাস রাখতে হবে যে আপনি কাজটা করতে পারবেন যার জন্য এতদিন ধরে প্রস্তুতি নিয়েছেন। (বাংলাদেশের সাথে) রাইভালরি ছিল সবসময়। বাংলাদেশে খেলাটা হয়ত কিছুটা কঠিন আমাদের জন্য। তবে আমরা বিশ্বাস করি আমাদেরও সুযোগ আছে। এখন যে গ্রুপটা আছে আমাদের, আমরা বিশ্বাস করি (বাংলাদেশের মনে) কিছুটা ভয় জাগিয়ে দিতে আমরা সক্ষম।’
এদিকে ব্যাটিং ব্যর্থতার গল্পটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য বেশ পুরনো। বহু আগে থেকেই এই রোগে ভুগছে বাংলাদেশ দল। জিম্বাবুয়ে সিরিজের আগেও আরও একবার এসেছে ব্যাটিং প্রসঙ্গ। ব্যাট হাতে খুব একটা ভালো ছন্দে নেই টাইগার অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত নিজেও। সর্বশেষ বেশ কিছু টেস্ট সিরিজে টপ অর্ডারও কমবেশি ব্যর্থ ছিল। সব মিলিয়ে ব্যাটিংটা ঠিক যুতসই হচ্ছে না বাংলাদেশের। সিলেট টেস্টের আগে বিষয়টি মেনে নিয়ে তা শুধরানোর আশ্বাস দিয়েছেন শান্ত। শনিবার সংবাদ সম্মেলনে শান্ত বলেন, ‘ব্যাটিং ভালো হচ্ছে না এটা সত্য। পেছনের দিকে বেশি না তাকায়ে ভুলগুলো নিয়ে কাজ করেছি। অনেক উন্নতির জায়গা আছে। প্রত্যেকটা প্লেয়ার ভুলগুলো নিয়ে কাজ করেছে। নতুন বছরে প্রথম টেস্ট শুরুটা যেন ভালোভাবে করতে পারি।’
এছাড়া শান্ত আরও বলেছেন, ‘ধারাবাহিক হতে হবে অবশ্যই। গত বছর আমি ১৩-১৪ ইনিংসে সেট হয়ে আউট হয়েছি, ৪০-৪৫ রানে। এই ফরম্যাটে এটা উচিৎ না। কঠিন সময় পার হয়ে আউট হচ্ছি। এই জিনিস নিয়ে কাজ হয়েছে। চেষ্টা করব এ বছর যাতে আরও অবদান রাখতে পারি। টপ অর্ডার ভালো করছে না। তবে সবাই চেষ্টা করছে মেহনৎ করছে কীভাবে ভালো করা যায়। আমাদের রিসোর্স অনুযায়ী তাদের যথেষ্ট সুযোগ দিয়ে এই জায়গায় প্রস্তুত করতে হবে। আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটেও ওরকম চ্যালেঞ্জ ফেইস করি না। আন্তর্জাতিকে ওদের আরও সময় দিলে একসময় দেখবেন ওরাও পারফরম্যান্স দিচ্ছে।’