প্রথম দেশ হিসাবে স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল ভুটান। নয় মাস যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বরের সেই স্বীকৃতি ছিল বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক একটি মুহূর্ত। বিপদের সময়ের সেই বন্ধুকে পরবর্তীতে নানাভাবে প্রতিদান দেওয়ার চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ। গত এক দশকে সেই সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে অনেকগুলো চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পাশাপাশি সহযোগিতামূলক অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনাও চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভুটান চাইলে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, মোংলা, পায়রা বন্দর ও সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারে। এছাড়া আন্তঃদেশীয় পরিবহন ব্যবস্থার সুবিধার্থে তারা চাইলে বাংলাদেশের যেকোনো স্থানে গুদামও তৈরি করতে পারে। গতকাল রোববার স্বীকৃতি দেওয়ার বর্ষপূতিতে এক টেলিকনফারেন্সে দুই দেশের বাণিজ্য সচিব নানা চুক্তিতে সই করেন। এতে যোগ দেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতামূলক চুক্তি হয়েছে। এদিকে মহামারির ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী দিনে কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব প্রশমন এবং পুননির্মাণ পর্বে আরও শক্তিশালী আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জরুরি।
আপাত দৃষ্টিতে বিষয়টি বিপদের দিনের বন্ধুকে মূল্যায়ন মনে হলেও ভুটানকে দিয়েই অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি শুরু করেছে বাংলাদেশ। বিশ্বের অন্য কোনো দেশের সঙ্গে করা এটাই বাংলাদেশের প্রথম অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি বা পিটিএ। পিটিএ চুক্তি বাংলাদেশ ও ভুটানের সম্পর্ক বৃদ্ধির পাশাপাশি দুই দেশের অগ্রগতিতে অবদান রাখবে । ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের এই চুক্তি হওয়ায় বাংলাদেশের ১০০টি পণ্য ভুটানে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে আর ভুটানের ৩৪টি পণ্য বাংলাদেশে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক আরো বাড়বে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-২০১৯ সালে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য হয়েছে ৫৭.৯০ মিলিয়ন ডলারের। ভুটান থেকে বাংলাদেশে সবজি ও ফলমূল, খনিজ দ্রব্য, নির্মাণ সামগ্রী, বোল্ডার পাথর, চুনাপাথর, কয়লা, পাল্প, রাসায়নিক আমদানি করা হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে ভুটানে তৈরি পোশাক, আসবাব, খাদ্য সামগ্রী, ওষুধ, প্লাস্টিক, বৈদ্যুতিক পণ্য রপ্তানি হয়।
বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের মধ্যে (বিবিআইএন) সড়কপথে যাত্রীবাহী, ব্যক্তিগত ও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করার ব্যাপারে একটি আলোচনা হয়েছে। এই চুক্তি সম্পন্ন হলে চারটি দেশের বাসিন্দারা এক দেশ থেকে অন্য দেশে চলাচলে অনেক সুবিধা পাবেন। তবে বাকি তিনটি দেশ এই সমঝোতার ব্যাপারে একমত হলেও পরিবেশের কারণে ভুটানের সংসদ এখনো এই চুক্তিতে সম্মতি দেয়নি।
ভুটানে মোট যত জলবিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় তার বেশিরভাগই তাদের প্রয়োজন হয় না। এই বিদ্যুৎ কেনার আগ্রহ দেখিয়েছে বাংলাদেশ। তবে সেটি ভারতের মধ্য দিয়ে আনতে হবে বলে ত্রিপাক্ষিক আলোচনার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং। এ বিষয়ে এখনো চুক্তি হয়নি। তবে দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মোট কথা বিশ^জুড়ে মহামারিকালে বাংলাদেশ-ভুটানের মধ্যে এমন একটি চুক্তিকে অত্যন্ত ইতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করা যায়। বাংলাদেশ ও ভুটানের এই উদার দৃষ্টিভঙ্গি বিশে^ অন্যান্য দেশের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে নিঃসন্দেহে।
মতামত সম্পাদকীয়