বাংলাদেশে রপ্তানি বন্ধপ্রায়, ভারতের ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ বাড়ছে

সুপ্রভাত ডেস্ক  »

বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের চলমান টানাপোড়েনের বড় প্রভাব পড়েছে কলকাতার ব্যবসায়ীদের ওপর। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে রপ্তানির কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত কলকাতার ব্যবসা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে রপ্তানি বাণিজ্য প্রায় স্থবির হয়ে পড়ায় ভারতীয় ব্যবসায়ীদের কাছে অর্ডার আসা কমে যাচ্ছে। কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে রপ্তানির জন্য ভারতের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র কলকাতা। কলকাতা থেকে বাংলাদেশে টেক্সটাইল, অটোমোবাইল যন্ত্রাংশ, খাদ্যপণ্য, রাসায়নিক ও যন্ত্রপাতি রপ্তানি হয়ে থাকে। এছাড়া বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা কলকাতায় গিয়ে পাইকারিতে শাড়ি, পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক, প্রসাধনী ও খাদ্যপণ্য কিনে দেশে এনে বিক্রি করেন। তবে বর্তমান সংকটে এই বাণিজ্য পুরোপুরি স্থবির হয়ে পড়েছে। অনিশ্চয়তা ঘিরে ধরেছে সীমান্তের দুই পারের ব্যবসায়ীদের।

কলকাতায় বাংলাদেশি ক্রেতারা বেশি যান মার্কুইস স্ট্রিট ও তার আশপাশের এলাকায়। এখানকার ব্যবসায়ীরা ধাক্কা খেয়েছেন বেশি।

চলমান এই অস্থিরতায় বাংলাদেশে রপ্তানির ওপর ব্যাপক মাত্রায় নির্ভরশীল কলকাতার ব্যবসাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবচেয়ে বেশি। রপ্তানি আদেশ কমে যাওয়ায় শহরটির ব্যবসায়িক কার্যক্রমের গতিও কমে গেছে। গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানিপণ্য বস্ত্র, অটোমোবাইল যন্ত্রাংশ ও খাদ্যপণ্যের মতো খাতগুলোতে গত কয়েক সপ্তাহে প্রায় ৬০ শতাংশ অর্ডার কমে গেছে। কলকাতার বস্ত্র রপ্তানিকারক এবং টেক্সটাইল ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য মনোজ ঝাওয়ার টাইমস অভ ইন্ডিয়াকে বলেন, ‘বাংলাদেশ আমাদের জন্য খুব বড় একটা বাজার। প্রতি বছর সেখানে আমরা কোটি কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে দুদেশের মধ্যে সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। রপ্তানি এখন প্রায় শূন্যের কোঠায়।’

ভারত থেকে ব্যাপক পরিমাণে অটোমোবাইল যন্ত্রাংশও আমদানি করে বাংলাদেশে। কলকাতার নিউ মার্কেট এলাকার দোকানগুলো ব্যবসার জন্য ব্যাপকভাবে বাংলাদেশি ক্রেতাদের ওপর নির্ভরশীল।

মির্জা গালিব স্ট্রিটের পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকের পাইকারি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আনসার বলেন, ‘আমরা প্রতি মাসে কয়েক লাখ রুপির ব্যবসা করি। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহে তা কয়েক হাজার রুপিতে নেমে এসেছে।’

দুই দেশের মধ্যকার গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য রুট পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্তেও ব্যবসায়িক কার্যক্রম ব্যাপকভাবে কমে গেছে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বেশ কয়েকটি বাণিজ্য সংগঠনের শীর্ষ সংস্থা কনফেডারেশন অভ ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুশীল পোদ্দার বলেন, ‘বাংলাদেশের পরিস্থিতি কলকাতার সব খাতে প্রভাব ফেলেছে; কারণ কলকাতা থেকেই বাংলাদেশে সবকিছু রপ্তানি হয়। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।’ বকেয়া পাওনা আদায় নিয়েও উদ্বেগে রয়েছেন কলকাতার ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের কাছে বড় অঙ্কের টাকা পাওনা রয়েছে তাদের। এ টাকা তারা কবে পাবেন, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

খাদ্যপণ্য রপ্তানিকারক অমিত বসু বলেন, ‘চলমান অস্থিরতার কারণে আমাদের পেমেন্ট আটকে আছে। এটি আমাদের ব্যবসার তারল্য পরিস্থিতিকে বড় ধরনের চাপে ফেলেছে।’

এই সংকটে ভারতের রপ্তানিকারকরাই শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হননি। পাশাপাশি ক্ষতির মুখে পড়েছে কলকাতার লজিস্টিক কোম্পানি, এজেন্ত ও পরিবহন কোম্পানিও। সূত্র: টাইমস অভ ইন্ডিয়া