‘বাংলাদেশের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন করা হয়েছে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি। শিক্ষা, মাইগ্রেশন ও ক্রিকেটের ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত আন্তরিক। বাংলাদেশের প্রচুর শিক্ষার্থী অস্ট্রেলিয়া থেকে ফ্রি স্কলারশিপ পেয়ে থাকে। মিনারেল রিসোর্স, রিনিউবেল রিসোর্স ও জ্বালানি খাতে বাংলাদেশের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার বিনিয়োগ সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়া ১৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে টিপা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।’
শনিবার সকাল ১১টায় প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির দামপাড়াস্থ কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি সিডনি (ইউটিএস) এর উদ্যোগে ও প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত ‘লাউঞ্চিং সিরামনি অব ইউটিএস-পিইউসি প্রোগ্রাম’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে ‘শিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে বিদেশের যোগসূত্র স্থাপন করছেন শিক্ষামন্ত্রী’ উল্লেখ করে অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনার জেরেমি ব্রুর এ কথা বলেন।
জেরেমি ব্রুর আরও বলেন, ইউটিএস-পিইউসি প্রোগ্রাম শিক্ষাক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের আন্তরিক সম্পর্কের দৃষ্টান্ত।
প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. অনুপম সেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী এমপি, ইউটিএস এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর আলেক্স মারফি, বাংলাদেশ অ্যাডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বেরি)-র ফাউন্ডার অ্যান্ড সিইও ড. আরিফ জোবায়ের, ইউটিএস-পিইউসি প্রোগ্রামের কো-অর্ডিনেটর ও প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির প্রকৌশল ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. তৌফিক সাঈদ।
শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী এমপি বলেন, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীদের খাপ খাওয়ানোর পরিকল্পনা থেকে অর্থাৎ বিশ্বের যে-কোনো দেশে উচ্চশিক্ষা, কর্মদক্ষতা ও ভাষা-দক্ষতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা মানবিক বিশ্ব নির্মাণের কাজে যাতে যুক্ত হতে পারে, সেজন্য ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি সিডনি (ইউটিএস) অস্ট্রেলিয়া এবং প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির একটি যৌথ প্রোগ্রাম শুরু হতে যাচ্ছে। এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি ও ইউটিএসকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।
শিক্ষা উপমন্ত্রী আরও বলেন, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি ও বাংলাদেশ অ্যাডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বেরি)-র সঙ্গে পার্টনারশিপের ভিত্তিতে ইউটিএস বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে এদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধা নিয়ে। তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ মিলিয়নসহ মোট ৬ মিলিয়ন শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে উল্লেখ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা বাংলাদেশের শিক্ষার উন্নয়নে বদ্ধপরিকর। তিনি ক্রমশ শিক্ষাক্ষেত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষা উপমন্ত্রী বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার উন্নয়নের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরে বলেন, প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের শিক্ষাকে আন্তর্জাতিকীকরণের যে-উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন ইউটিএস-পিইউসি প্রোগ্রাম তার অংশ। শিক্ষা উপমন্ত্রী বাংলাদেশের অন্যান্য পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে এ ধরনের প্রোগ্রাম চালু করার জন্য ইউটিএসকে অনুরোধ জানান।
ইউটিএস এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর আলেক্স মারফি বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় ৩৫ বছর ধরে ইউটিএস শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও শ্রীলঙ্কায় ইউটিএস-এর শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে। এবার বাংলাদেশে শুরু হলো ইউটিএস-পিইউসি প্রোগ্রাম।
বাংলাদেশ অ্যাডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বেরি)-র ফাউন্ডার অ্যান্ড সিইও ড. আরিফ জোবায়ের বলেন, চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করবে। এই প্রোগ্রাম তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ করবে। ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ইনটেক থেকে ইউটিএস বাংলাদেশে তাদের ডিগ্রির প্রথম বছর চালু করবে এবং বাংলাদেশের স্থানীয় শিক্ষার্থীদের অত্যন্ত কম খরচে সেরা মানের আন্তর্জাতিক শিক্ষার প্রবেশাধিকার প্রদান করবে।
ইউটিএস-পিইউসি প্রোগ্রামের কো-অর্ডিনেটর ও প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির প্রকৌশল ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. তৌফিক সাঈদ এই প্রোগ্রামের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, টিউশন ফি এবং জীবনযাত্রার খরচ প্রথম বছরে অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে ৭৫% সাশ্রয় হবে, প্রোগ্রামে দ্রুত এনরোলকারী শিক্ষার্থীরা ভিসা পাওয়ার আগেই ক্রেডিট অর্জনের সুযোগ পাবে, ছোট শ্রেণিকক্ষ তৈরি করে ও স্থানীয়ভাবে সহায়তা নিয়ে উচ্চশিক্ষা সহজে অর্জন করতে পারবে, অস্ট্রেলিয়ার উচ্চশিক্ষা শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশে বসে অর্জন করতে পারবে। বাকি সেমিস্টারগুলো তারা অস্ট্রেলিয়ায় অধ্যয়ন করার সুযোগ পাবে।
সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য প্রফেসর ড. অনুপম সেন বলেন, বর্তমান বিশ্ব প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্ব। যে-দেশ প্রযুক্তিতে যত অগ্রসর হবে, সে-দেশই এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশ একদিন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ ছিল। একথা বলেছেন শাহজাহানের আমলে আগত পর্যটক বার্নিয়ার। ইংল্যান্ডের এক ছোট কোম্পানিÑইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিÑপ্রযুক্তিতে তাদের দক্ষতার কারণে সিরাজদ্দৌলাকে হারিয়ে এই সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দখল করে নেয়। এই দক্ষতার কারণে ৫০ বছরের মধ্যে এই কোম্পানিটি সারা উপমহাদেশ দখল করে নিতে সক্ষম হয়। আমরা দেখি জাপান একসময় দরিদ্র দেশ ছিল। কিন্তু ১৮৫৪ সালে মেজিদের ক্ষমতা পুনর্দখলের পরে তারা তাদের শিক্ষার্থীদের সারা বিশ্বের উন্নত দেশে, বিশেষত, ইংল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশে পাঠিয়ে দেয় বৈজ্ঞানিক-প্রযুক্তি শিক্ষা অর্জনের জন্য। এর ফলেই তারা ৫০ বছর পরে ১৯০৫ সালে রাশিয়ান সা¤্রাজ্যকে হারিয়ে দেয়। তাদের এই প্রযুক্তি দক্ষতার কারণে মাত্র ১০ বছর আগেও তারা বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী দেশ ছিল। সুতরাং ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি সিডনি (ইউটিএস), অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির এই যৌথ উদ্যোগ আমাদের শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিজ্ঞান অর্জনে বিশেষ সহায়ক হবে। আমরা চাই, অস্ট্রেলিয়া ও অন্যান্য দেশের আরও উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতার পথ খুলে যাক, আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চমানের প্রযুক্তিজ্ঞানের দ্বার উন্মুক্ত হোক। বিজ্ঞপ্তি